উদাহরণ: মোহিন্দর অমরনাথ।
ক্রিকেট বিশ্বে তাঁকে বলা হয় ‘কামব্যাক ম্যান’। তিন গোলে হারার পর ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য যখন লড়াই শুরু করেছে লুইস নর্টন দে মাতোসের ভারত, তখন বিশ্বকাপ জেতা সেই ক্রিকেটারের আশীর্বাদ ও শুভেচ্ছা পেয়ে গেলেন যুব বিশ্বকাপাররা। এবং সেটা টিম হোটেলেই।
১৯৮৩-র বিশ্বকাপের ফাইনাল ও সেমিফাইনালের ম্যান অব দ্য ম্যাচ মোহিন্দর অমরনাথ একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে উঠেছেন ভারতীয় ফুটবল দলের হোটেলেই। দুপুরে লাঞ্চের সময় সেখানেই ধীরজ সিংহ, কোমল থাটালদের সঙ্গে দেখা হয় ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারের। ফুটবলারদের থেকে জানা গেল মোহিন্দর না কি তাদের কয়েকজনকে বলেছেন, ‘‘ভেঙে পড়ার কিছু নেই। আমার জীবনেও এরকম অনেক ঘটনা ঘটেছে। ভাল একটা মঞ্চ পেয়েছো, পরের ম্যাচে ঘুরে দাঁড়াও।’’
পরে টিম হোটেলে দাঁড়িয়ে লালা অমরনাথের ছেলে বলেন, ‘‘আমার শুভেচ্ছা থাকল যুব টিমের জন্য। ভারতে ফুটবল বিশ্বকাপ হচ্ছে। এটা সবে শুরু। ধাপে ধাপে এগোতে হবে।’’
আরও পড়ুন: বিশ্বকাপে ৮ ফুটবলার, তবুও মণিপুরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন জেমসের
কামব্যাক ম্যানের শুভেচ্ছা কি না বোঝা গেল না, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাগবি মাঠে রবিবার রাতের অনুশীলনে মাতোসের টিমকে দেখে কিন্তু মনে হল, ভেঙে পড়া নয় ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য মরিয়া লড়াইতে নামছে ভারত। কোচ মাতোসের গলাতেও আত্মবিশ্বাসের সুর। ‘‘প্রথম দিন শুরুতে যে জড়সড় ভাবটা ছিল সেটা কিন্তু কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে থাকবে না। শেষ পনেরো মিনিট যে খেলাটা খেলেছিলাম যুক্তরাস্ট্রের বিরুদ্ধে, সেটা শুরুতে খেলতে হবে। জিততে চাই ম্যাচটা। না হলে অন্তত ড্র,’’ বলার সময় পতুর্গীজ কোচের চোখ-মুখ সামান্য হলেও উজ্জ্বল।
কলম্বিয়া টিমটা যথেষ্ট শক্তিশালী। দু’বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ঘানাকে প্রথম ম্যাচেই কাঁদিয়ে দিয়েছিল অর্ল্যান্ডো রেস্ত্রেপোর টিম। দুই উইং, বিশেয করে বাঁ দিকে খেলা জ্যামিন্টন ক্যাম্পাজ ভয়ঙ্কর গতির। সেট পিসে গোল করার ফুটবলার জনা তিনেক। এক বছর আগে মেক্সিকোয় চতুর্দেশীয় টুনার্মেন্টে এই কলম্বিয়ার কাছেই তিন গোলে হেরেছিল ভারত। সেই প্রসঙ্গ তোলায় মাতোস বলে দিলেন, ‘‘সেবার দুটো গোল হয়েছিল সেট পিস থেকে। ওদের ফুটবলারদের উচ্চতা বেশি। সে জন্যই টিমে কিছু পরিবর্তন আনব।’’ বোঝা যায় জোসে মোরিনহোর দর্শনে বিশ্বাসী মাতোস হোমওয়ার্ক করে নামছেন। জানালেন, ঘানা-কলম্বিয়া ম্যাচের ভিডিও দেখাচ্ছেন ফুটবলারদের। ‘‘ওদের শক্তি এবং দূর্বলতা সবই দেখাচ্ছি। ম্যাচটা হারতে চাই না।’’
ফিজিক্যাল ফিটনেস ট্রেনিংয়ের পর মাতোস যাদের প্রথম দলে রাখার জন্য ‘বিপ’ দিলেন তাদের তিন জন খেলেনি গত শুক্রবারের বিশ্বকাপের উদ্বোধন ম্যাচে। বোঝা গেল কার্ড সমস্যায় মাঠের বাইরে থাকা বরিস সিংহ ফিরছেন মাঠে। ভারতের গতিময় ফুটবলারটিকে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে কলম্বিয়ার সেরা উইং ক্যাম্পাজ-কে আটকানোর। সেট পিস আটকাতে ভারতের সবচেয়ে লম্বা নমিত দেশপান্ডে-কে হয়তো ফেরানো হবে স্টপারে। সেক্ষেত্রে জিতেন্দ্র সিংহ থাকবেন রিজার্ভ বে়ঞ্চে। বিপক্ষের রক্ষণের উপর চাপ তৈরির জন্য নেমারের পুরনো হেয়ারস্টাইল নকল করা সোনালি চুলের কোমল থাটালের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হতে পারে রহিম আলিকে। ৪-৫-১ ছকে মাঝমাঠ জমাট করে কলম্বিয়াকে বিপদে ফেলতে চাইছেন মাতোস। তবু আটকানো যাবে?
সিনিয়র টিমের সবথেকে অভিজ্ঞ সুব্রত পাল কিন্তু মনে করেন যে কোনও শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ম্যাচে ভারতের জার্সিতে খেলার সময় সেটা কার্যত ‘গোলকিপার ম্যাচ’ হয়ে যায়। গোলকিপারের পারফরম্যান্স গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে ৯০ মিনিট ধরে। মুম্বইয়ে জাতীয় শিবিরে রয়েছেন ভারতের স্পাইডারম্যান। সেখান থেকে ফোনে বলছিলেন, ‘‘আমাদের গোলকিপার ধীরজ সিংহকে কিন্তু একশো দশ ভাগ দিতে হবে। আমি হলে এই ম্যাচটায় খেলতে নামার আগে মাথায় রাখতাম, এটা বিশ্বকাপ। এরকম মঞ্চে এক মিনিটও লড়াই থেকে সরব না। আশা করব, ধীরজও নিশ্চই সেটা মনে রাখবে।’’ আজ, সোমবার সকালে বেঙ্গালুরু যাচ্ছেন সুনীল ছেত্রী-সুব্রত পালরা। সেখানেই টিম হোটেলে বসে খেলা দেখবেন।
প্রথম ম্যাচে দারুণ খেলা ধীরজ কতক্ষণ ‘অক্ষত’ রাখতে পারবেন ভারতের গোলপোস্ট, তা সময় বলবে। মাতোস কিন্তু বললেন, ‘‘আগের ম্যাচের কথা ভুলে যেতে বলেছি ছেলেদের। ম্যাচ শুরু করব ০-০ থেকে। এটা নতুন ম্যাচ। নতুন অধ্যায়।’’
ভারতীয় ফুটবল ইতিহাসের প্রথম বিশ্বকাপ অভিযানে কোন অধ্যায় আজ শুরু হবে নেহরু স্টেডিয়ামে কে জানে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy