Advertisement
০৫ মে ২০২৪
চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল // রিয়েল মাদ্রিদ ৪ : য়ুভেন্তাস ১

রোনাল্ডো-দাপটে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ রিয়ালের

শনিবার রাতের কার্ডিফে রিয়ালকে শুধু ১২ নম্বর চ্যাম্পিয়ন্স লিগটাই জিদান দিলেন না। একইসঙ্গে চুপ করিয়ে দিলেন তাঁর সমালোচকদের। এমন নজির গড়লেন যা পেপ গুয়ার্দিওলা, জোসে মোরিনহোর মতো তারকা কোচেরাও পারেননি।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে নিজের দ্বিতীয় গোল করার পরে রিয়াল মাদ্রিদের মহাতারকা রোনাল্ডোর উচ্ছ্বাস। শনিবার কার্ডিফে। ছবি: এএফপি

চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে নিজের দ্বিতীয় গোল করার পরে রিয়াল মাদ্রিদের মহাতারকা রোনাল্ডোর উচ্ছ্বাস। শনিবার কার্ডিফে। ছবি: এএফপি

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৭ ০৪:১৯
Share: Save:

রোনাল্ডো জেতাবেন না বুফন বাঁচাবেন, ম্যাচের আগে এটাই ছিল কোটি টাকার প্রশ্ন। কিন্তু নব্বই মিনিট শেষে দেখা গেল ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো শুধু বুফনের বিরুদ্ধে গোল করার রেকর্ডই বজায় রাখলেন না। একইসঙ্গে মাদ্রিদের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদকে এনে দিলেন ১২ নম্বর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে প্রথম দল িহসেবে টানা দু’বার এই ট্রফি জিতল কোনও ক্লাব।

শুধু রোনাল্ডোই নন। রিয়ালের এই ‘ডুয়ো ডেসিমা’-র জন্য কৃতিত্ব দেওয়া হচ্ছে ডাগআউটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সেই সোনার মগজকেও। হ্যাঁ, রিয়াল ম্যানেজার জিনেদিন জিদান। যিনি এক বছর আগে ক্লাবের দায়িত্ব নেওয়ার সময় অন্ধকার অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল রিয়াল। সমালোচকরা দাবি করেছিলেন খুব বেশিদিন ম্যানেজারের চাকরি বাঁচিয়ে রাখতে পারবেন না জিদান। গত বছর ক্লাবকে এগারো নম্বর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতানোর পরেও সমালোচনা থামেনি।

শনিবার রাতের কার্ডিফে রিয়ালকে শুধু ১২ নম্বর চ্যাম্পিয়ন্স লিগটাই জিদান দিলেন না। একইসঙ্গে চুপ করিয়ে দিলেন তাঁর সমালোচকদের। এমন নজির গড়লেন যা পেপ গুয়ার্দিওলা, জোসে মোরিনহোর মতো তারকা কোচেরাও পারেননি। টানা দু’বার ক্লাবকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতিয়ে প্রমাণ করলেন ফুটবলার জিদানের মতো কোচ জিদানও কোনও অংশে কম যান না।

ফাইনালের জন্য য়ুভেন্তাসের ভরসার ছিল বিবিসি। অর্থাৎ বোনুচ্চি-বারজাগলি-কিয়েল্লিনি-র আঁটসাঁট ত্রয়ী। জবাবে প্রশ্ন ছিল ইস্কো না বেল? রোনাল্ডো-বেঞ্জিমার সঙ্গে রিয়াল ফরোয়ার্ড লাইনে থাকবেন কে? জিদান যদিও কাফ মাসলে চোট সারিয়ে সদ্য ফিরে আসা আনফিট বেলের বদলে ইস্কোকেই বেছেছিলেন।

ম্যাচের শুরুর থেকেই আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলতে থাকে দু’দল। সুযোগের পর সুযোগ তৈরি করতে থাকেন রোনাল্ডোরা। প্রথম গোলটাও করে রিয়াল। সি আর সেভেনের বুদ্ধিদীপ্ত ফিনিশিংয়ের সৌজন্যে রিয়াল ১-০ এগোয়। যার কিছুক্ষণ পরেই স্বপ্নের গোল করে সমতা ফেরান মান্দজুকিচ। আর্জেন্তাইন স্ট্রাইকার হিগুয়াইনের পাসে দুর্দান্ত ভলিতে গোল করেন মান্দজুকিচ। তখন মনে হয়েছিল ম্যাচটা হয়তো য়ুভেন্তাসের দিকে ঘুরবে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হতেই একের পর এক আক্রমণের সুনামি আছড়ে পড়ে য়ুভেন্তাস বক্সে। ছোট ছোট পাসে মুভ তৈরি করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দখলে আনে রিয়াল।

এরই মাঝে কার্ডিফ সাক্ষী থাকে আর এক দুর্দান্ত গোলের। কারিগরের নাম কাসেমিরো। যিনি জিদানের দলের মাঝমাঠের অন্যতম ভরসা। পেনাল্টি বক্সের বাইরে থেকেই শট নেন কাসেমিরো। যা য়ুভেন্তাস ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে ঢুকে যায় তুরিনের দলটির গোলে। এখানেই থামেনি রিয়ালের গোল-উৎসব। মিনিটখানেক পরেই ফের রোনাল্ডো য়ুভেন্তাসের দুই দাপুটে ডিফেন্ডারের মাঝখানে হানা দিয়ে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় গোলটি করে যান। রিয়াল রিজার্ভ বেঞ্চ তখন উৎসবের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছে। যেন এক প্রকার জয় নিশ্চিত করে ফেলেছে। য়ুভেন্তাসের ম্যানেজার মাসিমিলিয়ানো আলেগ্রির মুখে তখন যেন হতাশা। ২০১৫-র ফাইনালের মতোই আবার যেন তীরে এসে তরী ়ডুবল য়ুভেন্তাসের।

ম্যাচের ক্লাইম্যাক্সে আসেনসিওর গোলে স্মরণীয় ৪-১ জয় পেল জিদানের রিয়াল। যে গোলের কিছু আগেই নিজভূমিতে নেমেছিলেন বেল। কিন্তু ততক্ষণে ম্যাচ জিতেই নিয়েছে রিয়াল। রেফারির ফুলটাইমের বাশি বাজতেই জিদান এগিয়ে যান বিপক্ষ কোচের দিকে। রোনাল্ডো তখন মাঠের মধ্যে শুয়ে পড়েছেন। গ্রহণ করছেন সতীর্থদের অভিবাদন। উল্টো দিকে ইস্কো, কাসেমিরোরাও আনন্দে নাচছেন। আলেগ্রি তখন বুফনদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন।

জিদান কয়েক দিন আগেই বলেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের ডিএনএ-তেই রয়েছে জয় শব্দটা। কার্ডিফের ফাইনাল সেই কথাটাই ফের প্রমাণ করে ছাড়ল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE