মাত্র উনিশে রঞ্জি ট্রফির ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরি (৪৮ বল) করেও যেন কোনও হেলদোল নেই দিল্লির টিনএজার ব্যাটসম্যান ঋষভ পন্থের।
সোমবারই তাঁকে এখানকার ভেঙ্কটেশ্বর কলেজে তারক সিংহের নেটে বাধ্য ছাত্রের মতো অনুশীলনে দেখা গেল। প্র্যাকটিসের পরে তাঁকে ধরতে যেন কিছুই হয়নি এমন ভাব দেখিয়ে বললেন, ‘‘আমি কিন্তু ওই ঝাড়খণ্ড ম্যাচে আমাদের দ্বিতীয় ইনিংসে কোনও রেকর্ডের কথা মাথায় রেখে খেলতে নামিনি। রেকর্ডটা খেলতে খেলতে হয়ে গিয়েছে।’’
আনন্দবাজারকে একান্ত সাক্ষাৎকারে ঋষভ আরও যোগ করলেন, ‘‘আসলে আমি ওই রেকর্ডের কথা জানতামই না। পিটিয়ে খেলতে গিয়ে করে ফেলেছি। আমার আসল টার্গেট ছিল সবচেয়ে বেশি ছক্কা হাঁকানোর। সেটা অল্পের জন্য মিস করেছি। এই ইনিংসে তেরোটা ওভার বাউন্ডারি মেরেছিলাম। আর রেকর্ডটা ছিল এক চোদ্দো ছক্কার।’’
দিল্লির সোনেট ক্লাবের এই তরুণ উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান নিজের ক্রিকেটের উন্নতির সমস্ত কৃতিত্ব দিতে চান কোচ তারক সিংহ এবং আইপিএলে তাঁর টিম দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের মেন্টর রাহুল দ্রাবিড়কে। ‘‘ওঁদের দু’জনের থেকে সবচেয়ে বড় যে শিক্ষা পেয়েছি তা হল, মাথা ঠান্ডা রেখে খোলা মনে নিজের মতো করে ব্যাট করে যাওয়া। তবে তার চেয়েও আমার কাছে যেটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা সেটা হল, ধৈর্য আর নিজের উপর আগাগোড়া বিশ্বাস রেখে খেলা,’’ বলে দেন ঋষভ।
এ মরসুমের রঞ্জিতে ইতিমধ্যে ঋষভ সাতটি ইনিংসেই করেছেন ৭৯৯ রান। যার মধ্যে রয়েছে মহারাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ট্রিপল সেঞ্চুরি। ঝাড়খণ্ডের বিরুদ্ধে দু’ইনিংসেই সেঞ্চুরি। যে প্রসঙ্গে তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘অনূর্ধ্ব উনিশ বিশ্বকাপের পরে রঞ্জি ট্রফিই ছিল আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেটা ভেবেই নিজেকে প্রস্তুত করেছিলাম। তার রেজাল্টই পাচ্ছি। তবে এই ধারাবাহিকতা আমাকে ধরে রাখতে হবে। বলতে পারেন, এটাই আমার এই মুহূর্তের লক্ষ্য।’’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘‘রঞ্জিতে ট্রিপল সেঞ্চুরির পরে সবচেয়ে বেশি আনন্দ হয়েছিল যখন সহবাগ স্যার টুইটারে আমার প্রশংসা করেছিলেন।’’
সম্ভবত অনেকের অজানা একটা তথ্যও উঠে এল ঋষভের কথায়। এ মরসুমে ঘরোয়া ম্যাচে তাঁর এই খুনে মেজাজে ব্যাট করার অন্যতম কারণ নাকি রঞ্জির কিছু দিন আগে ভারত ‘এ’ দলের অস্ট্রেলিয়া সফরে সুযোগ না পাওয়া! বললেন ‘‘আমি নিজের মুখে কিছু বলছি না। তবে ঘটনা পরম্পরাটা আপনারাই দেখে নিন। তবে এটা বলব, আমার মারকুটে ব্যাটিং করতে পারার পিছনে আইপিএলে খেলাটা একটা ফ্যাক্টর। আমার প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলার আগেই আইপিএল খেলার সুযোগ ঘটেছে। যা ব্যাপক সাহায্য করেছে।’’
দিল্লি ক্রিকেটমহলে কেউ কেউ ইতিমধ্যেই ঋষভ পন্থকে অ্যাডাম গিলক্রিস্টের সঙ্গে তুলনা শুরু করে দিয়েছেন। যা শুনে হেসে ফেলেন দিল্লির তরুণ। বললেন, ‘‘আমিও শুনেছি সেটা। তবে ওই সব গ্রেটের সঙ্গে আমার তুলনা করাটা মোটেই ঠিক নয়। আমি পছন্দ করছি না।’’
বরং নিজের বেড়ে ওঠার দিন থেকে তিনি বীরেন্দ্র সহবাগের অন্ধভক্ত। বললেন ‘‘কে কী বলছেন জানি না। তবে আমি এটুকু বলতে পারি, যবে থেকে ক্রিকেট খেলছি, সহবাগ স্যারের প্রচণ্ড ভক্ত আমি। চেষ্টাও করি ওঁর মতো ব্যাট করার।’’ তার পরে একটু করুণ ভাবে যোগ করলেন, ‘‘জানেন, ওঁর পাশে দিল্লির হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখতাম। দুঃখের ব্যাপার হল, অল্পের জন্য আমার সেই স্বপ্ন সফল হয়নি। যে মরসুমে আমি দিল্লি রঞ্জি টিমে ঢুকলাম, সে বছরই সহবাগ স্যার দিল্লি ছেড়ে হরিয়ানায় খেলতে চলে গেলেন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy