জাদুকর: প্রিমিয়ার ফুটসল উপলক্ষে মুম্বইয়ে রোনাল্ডিনহো । ছবি: এএফপি
এই শরীরটাই তো সাপের মতো এঁকেবেঁকে বেরিয়ে যায় একের পর এক ডিফেন্স ভেঙে।
এই শরীরটাই তো পায়ের একটা টানে ফেলে দেয় বাঘা বাঘা সব ডিফেন্ডারকে।
ওই পায়ের সেই জাদু ফ্রি কিক তো বোকা বানিয়ে দিয়েছিল ডেভি়ড সিম্যানকে। ২০০২ বিশ্বকাপের সেই গোল তো এখন ফুটবল উপকথায় জায়গা করে নিয়েছে।
কয়েক হাত দূরে দাঁড়ানো শরীরটা দেখে তো মনে হচ্ছে এখনও সে রকম আছেন। বাঁ কানে হিরের দুলটা জ্বলজ্বল করছে। কালো টি শার্ট, অফ হোয়াইট ট্রাউজার্স আর সেই ট্রেডমার্ক টুপি। মুখে হাসি, আর ডান হাতটা তুলে ‘কল সাইন’ দেখানো। এই ছবিটা তো অতি পরিচিত। সেই পরিচিত ছবিটাই আরও একবার দেখা গেল।
যখন রোনাল্ডিনহো ভারতে পা দিলেন। আর বলে একবারও পা না ছুঁইয়ে ম্যাচটা জিতে বেরিয়ে গেলেন।
‘‘ভারতে আসতে আমার সব সময় ভাল লাগে। এখানকার মানুষের ভালবাসা, এখানকার মানুষের আবেগটা আমাকে সব সময় টানে।’’ ডায়াসে বসে তাঁর মুখ থেকে কথাগুলো বেরোনোমাত্র কোনও প্রতিক্রিয়া হয়নি। তার পরেই দোভাষী মারফত যখন ইংরেজিতে তর্জমা হয়ে গেল রোনাল্ডিনহোর মনের ভাব, ফেটে পড়ল হল।
আরও পড়ুন:
ব্রেন হ্যামারেজে হারিয়ে গেলেন ২০ বছরের আয়াখস ফুটবলার
প্রিমিয়ার ফুটসলের আরও একটা মরসুম। আরও একবার দেখা গেল রোনাল্ডিনহোকে। তবে ফুটসলে মাতানোর আগে যে ভাবে মাতিয়ে দিয়ে গেলেন মুম্বইকে, তাতে বোঝা গেল, আর যা-ই হোক, রোনাল্ডিনহো নামটার ম্যাজিক এখনও কমে যায়নি।
‘কিছু বলুন, কিছু বলুন’— ব্রাজিলীয় মহাতারকাকে দেখেই আব্দার উঠেছিল হাজার গলায়। তখন দক্ষিণ মুম্বইয়ের একটি অভিজাত মলের লবিতে নেমে এসে ভক্তদের দর্শন দিচ্ছেন তিনি। মুখে সেই ট্রেডমার্ক হাসি ছাড়া অবশ্য সেখানে আর কিছু বলেননি তিনি। কিন্তু এর আধ ঘণ্টা আগে একই আব্দার তখন উঠেছিল সংগঠকদের নিজস্ব অনুষ্ঠানে। যে আব্দার শুনেই হাল্কা হাসি দিয়ে রোনাল্ডিনহো বলে উঠলেন— ‘‘স্প্যানিশ, ফরাসি, ইতালিয়ান, পর্তুগিজ?’’ বোঝা গেল, তিনি জানতে চাইছেন কোন ভাষায় উত্তর দেবেন। দোভাষী চটপট স্টেজে উঠে বলে উঠলেন, ‘‘পর্তুগিজ।’’
ভারতে এ বার অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপ হচ্ছে। আপনার কি মনে হয় ভারতীয় ফুটবলের উন্নতি হচ্ছে? প্রশ্নের তর্জমা শোনার পরে রোনাল্ডিনহোর জবাব, ‘‘ফুটবল ভারতে ভীষণ জনপ্রিয় আমি জানি। এখানে বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্ট হওয়া মানে খেলাটা নিয়ে আগ্রহ বাড়বে। আরও ফুটবলার আসবে। তখন নিশ্চয়ই খেলাটার উন্নতি হবে।’’
তিনি নিজে ফুটসল খেলে উঠে এসেছেন। ফুটসলের প্রতি তাঁর প্রেম থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু ভারতে কি এই ফুটবল জনপ্রিয় হবে? রোনাল্ডিনহো আত্মবিশ্বাসী, হবে। ‘‘ফুটসল খেলাটার আকর্ষণ দারুণ। সবাই উপভোগ করে। তরুণ প্রতিভা উঠে আসার মঞ্চ এট। এর টানে আমি মাঠে ফিরে আসি।’’
ফুটসলের টানের মর্ম বোঝা গেল। আর রোনাল্ডিনহোর টানের কী মর্ম সেটা দেখা যাচ্ছিল। নামের পাশে প্রাক্তন তকমা বসে গেলেও তাঁকে দেখা মাত্র গর্জন উঠছে— রোনাল্ডিনহো, রোনাল্ডিনহো। আর তিনি, মোবাইল হাতে ভক্তদের দিকে পিছন ঘুরে মজে গেলেন সেলফি তুলতে। ক্যামেরা বন্দি করে রাখতে চাইলেন এই আবেগ, এই ভালবাসা।
এই ভালবাসা ব্রাজিলিয়ান বিশ্বজয়ীর কাছে কতটা, বোঝা যায় তাঁর শেষ কথায়। ‘‘আগের বারও আমি ভারতে এসেছিলাম। খেলেছিলাম। যে ভালবাসা পেয়েছি, তাতে আমি সম্মানিত। এই ভালবাসাই আবার আমাকে ফিরিয়ে এনেছে আপনাদের দেশে।’’
রোনাল্ডিনহো ‘ম্যাচ’টাই জিতলেন না, ‘হ্যাটট্রিক’ও করে গেলেন!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy