Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ধ্যানচাঁদ-জয়ী ঝাড়খণ্ডের সুমরাই যেন দঙ্গলের গীতা

মেয়ে গীতাকে ‘দঙ্গল’ শেখাতে ভিওয়ানিতে ছেলেদের আখড়ায় ঢুকিয়েছিলেন মহাবীর সিংহ ফোগত। বাবা বরনবাসের কথায় হকির ময়দানে ছেলেদের সঙ্গে লড়েন সিমডেগার সুমরাই টেটে।

কৃতী: সুমরাই। —ফাইল চিত্র।

কৃতী: সুমরাই। —ফাইল চিত্র।

আর্যভট্ট খান
রাঁচী শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৪:০৪
Share: Save:

হরিয়ানার ভিওয়ানির গল্পে মিশলো ঝাড়খণ্ডের সিমডেগা।

মেয়ে গীতাকে ‘দঙ্গল’ শেখাতে ভিওয়ানিতে ছেলেদের আখড়ায় ঢুকিয়েছিলেন মহাবীর সিংহ ফোগত। বাবা বরনবাসের কথায় হকির ময়দানে ছেলেদের সঙ্গে লড়েন সিমডেগার সুমরাই টেটে।

কমনওয়েলথ গেমসে সোনা পেয়ে দেশের মন জিতেছিলেন গীতা। মহিলা হকি খেলোয়ার হিসেবে ধ্যানচাঁদ পুরস্কার জিতে নজর কাড়লেন সুমরাই। আমির খানের ব্লকবাস্টার ‘দঙ্গল’-এর কাহিনির সঙ্গে তা-ই অনেকটা মিল সুমরাইয়ের জীবনযুদ্ধেরও। দু’ক্ষেত্রেই জড়িয়ে মেয়ের জন্য বাবার প্রাণপণ লড়াইয়ের গল্পও। ফারাক শুধু কুস্তি আর হকিতে।

সিমডেগার প্রত্যন্ত কাসিরা গ্রামের মেয়ে সুমরাই। রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের হাত থেকে ধ্যানচাঁদ পুরস্কার পাওয়ার পর নয়াদিল্লি থেকে ফোনে ভারতীয় মহিলা হকি দলের প্রাক্তন সদস্য বলেন, ‘‘কেন্দুপাতার ডাল দিয়ে হকি-স্টিক তৈরি করেছিলাম। পরে বাঁশ দিয়ে। গ্রামের মাঠে ওটাই ছিল আমার হকি খেলার সরঞ্জাম।’’ তিনি জানান, কৃষক হলেও তাঁর বাবা বরনবাস নিয়মিত হকি খেলতেন। অনুশীলনের জন্য তাঁকেও খেলতে নামাতেন ছেলেদের বিরুদ্ধে। শুরুর দিকে সবাই হাসাহাসি করত সুমরাই, বরনবাসকে নিয়ে। মহাবীর, গীতাকে নিয়ে যেমন উপহাস হতো— ঠিক তেমন ভাবেই। সিমডেগা হকি অ্যাসোসিয়েশনের সচিব মনোজ কুমার কনবেগি বলেন, ‘‘ছেলেদের সঙ্গে খালি পায়ে হকি খেলতে নামতেন সুমরাই। অনেক বার ওঁর পা কেটে গিয়েছে। কিন্তু না দমে পরের ম্যাচেই ব্যান্ডেজ বেঁধে মাঠে নেমে পড়তেন।’’

আরও পড়ুন: একদিনের দলে ফিরলেন শামি, উমেশ

রাঁচী অনেক দূর। কাসিরা গ্রাম থেকে সিমডেগা সদর শহরে পৌঁছনোই কষ্টসাধ্য ছিল তখন। সেটা নব্বইয়ের দশকের কথা। বাবার হাত ধরে কয়েক কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা হেঁটে সিমডেগা পৌঁছতেন তিনি। সেই লড়াইয়েই এখন সুমরাইয়ের ঝুলিতে অনেক পদক। ভারতীয় মহিলা দল তাঁর অধিনায়কত্বে ম্যানচেস্টার কমনওয়েলথ গেমসে স্বর্ণপদক পায়। ২০০৬ সালে কমনওয়েলেথে জেতে রূপো। ২০০৩ সালে বিশ্ব হকি চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা। বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাতিয়ায় কর্মরত সুমরাই। হকির প্রশিক্ষণ দেন কচিকাঁচাদের।

ঝাড়খণ্ড হকি অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা ভোলানাথ সিংহ বলেন, ‘‘রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন সুমরাই— কাগজে বেরনো সেই ছবির প্রতিলিপি সিমডেগার প্রত্যন্ত গ্রামে পাঠানো হয়েছে। তাতে খুদে খেলোয়াররা অনুপ্রেরণা পাবে।’’

সুমরাই বলেন, ‘‘পি ভি সিন্ধুর ব্যাডমিন্টনের মতোই এক দিন টেলিভিশনে মেয়েদের হকি খেলাও রুদ্ধশ্বাসে দেখবে ভারত।’’

ঠিক যেমন ভাবে দেশ দেখেছে শাহরুখের ‘চক দে’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hockey Sumrai Tete সুমরাই টেটে
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE