Advertisement
০২ মে ২০২৪

আর ঘাসের ফাঁদে পা দিচ্ছেন না কোহালিরা

এমনিতে শ্রীলঙ্কার খুব বিখ্যাত শৈলশহর ক্যান্ডি। ক্রিকেট রোম্যান্টিকদের কাছে তো বটেই, আরও বেশি করে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য। কলম্বো থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরত্বের ক্যান্ডি পৌঁছতে সড়ক পথে লাগে মোটামুটি চার ঘণ্টা

সুমিত ঘোষ
পাল্লেকেলে শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৭ ০৪:১৭
Share: Save:

গল, কলম্বোর পরে এ বার বিরাট কোহালির ভারত তাঁবু ফেলল ক্যান্ডির কাছে গড়ে ওঠা শ্রীলঙ্কার নতুন ক্রিকেট কেন্দ্র পাল্লেকেলে-তে। মানে সমুদ্র জয় করে পাহাড়ে এসে পড়লেন তাঁরা। এখানেই সিরিজের শেষ টেস্ট এবং ঠিক হবে বিদেশে প্রথম টেস্ট সিরিজ হোয়াইটওয়াশ করার বিরল কৃতিত্ব কোহালিরা অর্জন করতে পারবেন কি না।

এমনিতে শ্রীলঙ্কার খুব বিখ্যাত শৈলশহর ক্যান্ডি। ক্রিকেট রোম্যান্টিকদের কাছে তো বটেই, আরও বেশি করে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য। কলম্বো থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরত্বের ক্যান্ডি পৌঁছতে সড়ক পথে লাগে মোটামুটি চার ঘণ্টা। যদি না ট্র্যাফিক জ্যামে ফেঁসে যান। তবে এনজিপি থেকে দার্জিলিং বা গ্যাংটকে যাওয়ার মতো যাত্রার অভিজ্ঞতা এই সফরে হবে না। ক্যান্ডির উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে খুব বেশি নয় বলে দার্জিলিং বা গ্যাংটকের মতো পাহাড়ি পাকদণ্ডী পেরনোর ব্যাপার নেই।

রাস্তায় যেতেই যেতেই পাহাড়ে ঘেরা প্রকৃতি যদিও ধরা দিতে থাকবে। আবার প্রধান সড়ক ধরে গাড়িতে আসতে গিয়ে হাতির দেখাও মিলতে পারে। মাহুত সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন রাস্তা দিয়ে। রাস্তা ধরে এগোতে এগোতে মনে হবে ক্যান্ডি এবং হাতি অবিচ্ছেদ্য পার্টনারশিপ চলছে। ক্যান্ডিতে ঢোকার আগে পিনেওয়ালায় হাতিদের সেই বিখ্যাত অনাথ আশ্রম— ‘পিনাওয়ালা এলিফ্যান্ট অরফ্যানেজ’। শ্রীলঙ্কার সেরা আকর্ষণগুলোর একটা। প্রত্যেক বছর সবচেয়ে বেশি বিদেশি ট্যুরিস্ট এখানে আসে বাচ্চা হাতির এই বিশেষ আশ্রয় দেখতে। বিভিন্ন বয়সের অন্তত একশো হাতি আছে। প্রাথমিক ভাবে যা গড়ে তোলা হয়েছিল অনাথ এবং ত্যাজ্য হাতিদের আশ্রয় ও পরিচর্যার জন্য।

আরও পড়ুন: হোয়াইটওয়াশের প্রস্তুতির মধ্যে বিরাট ‘ডে আউট’

দাঁড়ান, হাতি পর্ব এখানেই শেষ হচ্ছে না। বেশির ভাগ হোটেলের নামকরণও হাতি দিয়ে। কোনওটার নাম ‘এলিফ্যান্ট পার্ক হোটেল’। কোনওটার ‘এলিফ্যান্ট স্টেব্‌লস’। এখানে হাতি নিয়ে বিশেষ উৎসবও হয়। আর সেখানে হাতিরা নাকি নাচও করে। উৎসবের নাম ‘ক্যান্ডি পেরাহেরা’। কোহালিদের ভাগ্য ভাল থাকলে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই উৎসব দেখেও ফেলতে পারেন। কারণ জুলাই-অগস্ট, এই সময়েই তা হয়। সেখানে হাতিদের নিয়ে আসা হয় জমকালো সাজে।

মনে করা হয় এই সময়েই মোক্ষলাভ করে বুদ্ধদেব তাঁর প্রথম বাণী দিয়েছিলেন। ‘পেরাহেরা’ একটি সিংহলিজ শব্দ। যার অর্থ গান, বাজনা ও পারফর্মারদের সম্মেলন। সঙ্গীতজ্ঞ, নৃত্যকারদের সঙ্গে প্যারেডে যোগ দেয় হাতিও। বুদ্ধদেবের সবচেয়ে বেশি উপস্থিতি এবং বড় বড় মূর্তিও দেখা যাবে ক্যান্ডিতেই। ‘টেম্পল অব টুথ’ এখানকার আর একটি প্রধান আকর্ষণ। জনপ্রিয় বিশ্বাস হচ্ছে, এই মন্দিরে বুদ্ধদেবের দাঁত রাখা আছে। তাই এই মন্দির এত পবিত্র।

ক্যান্ডিতে ক্রিকেটের ইতিহাস বেশ লম্বা এবং ঘটনাবহুল। এখনকার হেড কোচ রবি শাস্ত্রী যেমন জুনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে ক্যান্ডিতে খেলে গিয়েছেন। সেই সফরে অনূর্ধ্ব উনিশ দলে তাঁর সতীর্থ হিসেবে এসেছিলেন ভরত অরুণ। এখন যিনি দলের বোলিং কোচ। শাস্ত্রী এর পর কপিলের ভারতের সঙ্গে প্রথম শ্রীলঙ্কা সফরেও ছিলেন। সেই সিরিজ ভারত হেরে গেলেও ক্যান্ডিতে ওপেন করে ৮১ রানের লড়াকু ইনিংস খেলেছিলেন শাস্ত্রী। কিন্তু তিনি এবং অরুণ এ বারের সফরে ক্যান্ডিতে এসে বুঝতে পারছেন, তাঁদের সেই তরুণ বয়স থেকে অনেক কিছুই আমূল পাল্টে গিয়েছে।

সবচেয়ে বড় পরিবর্তন হচ্ছে, ক্রিকেটই সরে গিয়েছে ক্যান্ডি থেকে পাল্লেকেলে। যে মাঠে শাস্ত্রী খেলে গিয়েছিলেন প্রথম সফরে, তা ছিল ক্যান্ডি ট্রিনিটি কলেজের। বিখ্যাত এই কলেজের ছাত্র ছিলেন কুমার সঙ্গকারা। এখনকার শ্রীলঙ্কা টিমের প্রতিশ্রুতিমান ডিকওয়েলাও ট্রিনিটির ছাত্র। ক্রিকেট এং রাগবি— দু’টো খেলাতেই প্রচুর প্রতিভা উপহার দিয়েছে এই কলেজ। এখন যদিও ক্রিকেটের নতুন কেন্দ্র পাল্লেকেলে আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। বুধবার সেখানে গিয়ে পাহাড়ে ঘেরা অসাধারণ নৈসর্গিক পরিবেশ আবিষ্কার করা গেল। সবুজ মখমলের মতো আউটফিল্ড। চারদিকে গ্রাস ব্যাঙ্ক রয়েছে। দর্শকেরা পাহাড়ের শোভা উপভোগ করতে করতে ঘাসের ওপর বসে ক্রিকেট দেখতে পারবে। বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর স্টেডিয়ামগুলোর মধ্যেও জায়গা করে নিয়েছে পাল্লেকেলের এই মাঠ।

বুধবার কোহালিরা সেখানে পৌঁছে যদিও শুধুই সবুজ আউটফিল্ড আবিষ্কার করেননি। দেখলেন, পিচও বেশ সবুজ। যদিও সেটা দেখে তাঁদের প্রতিক্রিয়া হচ্ছে— কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবের মাঠেও টেস্ট শুরুর তিন দিন আগে এ রকমই ছিল। তা দেখে অনেকের মনে হয়েছিল, জোরে বোলারদের জন্য বেশি সাহায্য থাকবে পিচে। ম্যাচের আগের দিন সব ঘাস কেটে উড়িয়ে দেওয়া হয়। এখানেও যদি একই রকম ঘটনা ঘটে অবাক হওয়ার থাকবে না। কারও কারও মতে, শ্রীলঙ্কা হোয়াইটওয়াশ ঠেকানোর জন্য ব্যাটিং পিচ বানাতে পারে। তারা চাইবে, কোনও রকমে তৃতীয় টেস্ট যদি ড্র করা যায়। ঘাস তাই আগামী দু’দিনের মধ্যে সাফ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা।

আবার ভারতীয়দের কঠোর অনুশীলনের ভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে, তাঁরাও ৩-০ করার জন্য মরিয়া। রবীন্দ্র জাডেজার পরিবর্ত হিসেবে যে অক্ষর পটেলকে উড়িয়ে আনা হচ্ছে, আনন্দবাজারে প্রথম তা প্রকাশিত হয়েছিল। এ দিন বোর্ড থেকে সরকারি ভাবে জানিয়ে দেওয়া হল। অক্ষরই আসছেন। যদিও তিনি খেলবেন কি না ঠিক নেই। জাডেজার জায়গায় দ্বিতীয় স্পিনার হিসেবে চায়নাম্যান কুলদীপ যাদবই ঢুকছেন। কলকাতা নাইট রাইডার্সের স্পিনার এ দিন বলে গেলেন, ‘‘আমি পিচ নিয়ে খুব একটা ভাবি না। যা দেবে সেখানেই বল করব।’’ তৃতীয় স্পিনার খেলানো হলে তবেই অক্ষরের টেস্ট অভিষেকের সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। কিন্তু রঙ্গনা হেরাথকে হারানোর পরে অশ্বিনদের বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কাও কি ঘূর্ণি পিচ বানাতে যাবে? সেই সম্ভাবনা যথেষ্ট বিস্ময়কর শোনাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE