Advertisement
০২ মে ২০২৪

বিরাট আর্থিক বিপ্লবের অপেক্ষা

নয়াদিল্লিতে ভারত বনাম শ্রীলঙ্কার তৃতীয় টেস্টের সময়েই ক্রিকেটারদের পরিবর্তিত আর্থিক চুক্তি নিয়ে শীর্ষ বৈঠক হতে চলেছে।

 অতিথি: জাহির-সাগরিকার বিয়ের অনুষ্ঠানে নজর ছিল বিরাট-অনুষ্কার উপর। নবদম্পতির সঙ্গে নেচে আসর মাতালেন তাঁরা। ছবি: টুইটার

 অতিথি: জাহির-সাগরিকার বিয়ের অনুষ্ঠানে নজর ছিল বিরাট-অনুষ্কার উপর। নবদম্পতির সঙ্গে নেচে আসর মাতালেন তাঁরা। ছবি: টুইটার

সুমিত ঘোষ
শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৭ ০৪:১৭
Share: Save:

সব কিছু ঠিকঠাক চললে, বিরাট কোহালিদের হাত ধরে ভারতীয় ক্রিকেটারদের জীবনে নজিরবিহীন আর্থিক বিপ্লব ঘটতে চলেছে। যার জেরে শুধু কোহালিরাই নন, লাভবান হতে চলেছেন দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের অসংখ্য খেলোয়াড়ও।

নয়াদিল্লিতে ভারত বনাম শ্রীলঙ্কার তৃতীয় টেস্টের সময়েই ক্রিকেটারদের পরিবর্তিত আর্থিক চুক্তি নিয়ে শীর্ষ বৈঠক হতে চলেছে। যেখানে বোর্ডের পক্ষ থেকে থাকবেন সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত পর্যবেক্ষকদের প্রধান বিনোদ রাই। সভায় ক্রিকেটারদের প্রতিনিধি হিসেবে প্রধান মুখ— ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহালি। তাঁর সঙ্গে থাকতে পারেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনিও। আরও অন্তত এক জন সিনিয়র ক্রিকেটারকে রাখা হতে পারে। থাকার কথা হেড কোচ রবি শাস্ত্রীর। সম্ভবত দিল্লি টেস্ট শুরুর আগেই হবে এই বৈঠক। বিভিন্ন দেশের আর্থিক কাঠামো সম্পর্কে খোঁজখবর করে কোহালিরা জানতে পেরেছেন, তাঁরা নিজেদের ক্রিকেট বোর্ডের থেকে অনেক কম টাকা পাচ্ছেন। মূল অসন্তোষের শুরু সেখান থেকেই।

কারও কারও হাতে থাকা হিসেব অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ স্মিথ বা ইংল্যান্ডের জো রুট তাঁদের দেশের বোর্ডের সঙ্গে চুক্তি থেকে বছরে অন্তত দশ কোটি টাকা পারিশ্রমিক পান। কোহালিরা তার অর্ধেকও পান না। অথচ বিশ্ব মঞ্চে কোহালি, ধোনিরাই ক্রিকেটের বাজার। তাঁদের দেখেই বিনিয়োগকারীরা আসছেন। স্মিথকে পিছনে ফেলে রানমেশিন হিসেবে ছুটছেন কোহালি। কিন্তু বোর্ডের পারিশ্রমিকে পিছিয়ে।

এখন ভারতীয় ক্রিকেটে কোহালি বা ধোনির মতো সেরা তারকারা বোর্ডের চুক্তি থেকে বছরে দু’কোটি টাকা ‘রিটেনার ফি’ পান। এর সঙ্গে ম্যাচ ফি-র অংশ থাকে। সব মিলিয়ে বোর্ডের চুক্তি থেকে কোহালির মতো সেরা তারকাও মেরেকেটে পেতে পারেন চার থেকে পাঁচ কোটি টাকা। ভারতীয় ক্রিকেটারদের হাতে থাকা তথ্য অনুযায়ী, স্মিথ বা রুট তাঁদের দেশের বোর্ড থেকে এর দ্বিগুণেরও বেশি টাকা পান। শুধু তা-ই নয়, আরও অন্যান্য দিক থেকেও ক্রিকেটারদের প্রাপ্য অনুযায়ী ভারতীয় বোর্ড টাকা দিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

আরও পড়ুন: শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি২০ নাও খেলতে পারেন বিরাট

অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডে যেমন বোর্ডের উপার্জনের ২৬ শতাংশ ভাগ করে দেওয়া হয় ক্রিকেটারদের মধ্যে। সেটাই সাধারণ নিয়ম। ভারতে অভিযোগ উঠেছে, বোর্ড কর্তারা ভোটের রাজনীতি জিইয়ে রাখার উদ্দেশে ক্রিকেটারদের প্রাপ্য টাকা কমিয়ে রাজ্য সংস্থাগুলোর কোষাগার ভরেছেন। ক্রিকেটারদের হাতে ভোট নেই, রাজ্য সংস্থার হাতে রয়েছে। তাদের মোটা টাকা আর্থিক অনুদান পাইয়ে দেওয়া মানেই বোর্ডের মসনদে দীর্ঘকাল থাকার লাইসেন্স নিশ্চিত।

তাই কোহালিদের ক্ষেত্রে ২৬ শতাংশের হিসেব ভারতীয় বোর্ড কর্তারা নিজেদের মতো করে নিয়েছিলেন। বোর্ডের আয় থেকে তাঁরা প্রথমে রাজ্য সংস্থাগুলিকে অনুদান দিয়ে দিতেন এই যুক্তিতে যে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নাকি ক্রিকেটের প্রসার এবং উন্নতির জন্য এই টাকাটা খরচ করা দরকার। ব-কলমে এটাকে বলা হতো ‘ভোটিং গ্রান্ট’। অর্থাৎ ক্রিকেটের নয় ভোটের ‘অনুদান’।

একাধিক রাজ্য ক্রিকেট সংস্থায় এই আর্থিক অনুদান নিয়ে নয়ছয়ের নানা কেলেঙ্কারিও বেরিয়ে পড়েছে। লভ্যাংশ থেকে রাজ্য সংস্থাগুলিকে অনুদান দেওয়ার পরে যে টাকাটা পড়ে থাকত, সেখান থেকে ২৬ শতাংশ ভাগ হতো ক্রিকেটারদের মধ্যে। সেই কারণেই বিশ্বের ধনীতম বোর্ডের প্রতিনিধিত্ব করেও স্মিথ বা রুটের মতো টাকা কখনও হাতে পাননি কোহালিরা।

ভারতীয় ক্রিকেটারেরা এর পরেও বিশ্বের ধনীতম ক্রিকেটার হয়েছেন ব্যক্তিগত স্পনসরশিপ এবং আইপিএল থেকে টাকা উপার্জন করে। আইপিএলে একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির সর্বোচ্চ দরের ক্রিকেটার বছরে অন্তত ১২ কোটি টাকা পান ফ্র্যাঞ্চাইজি থেকে। সেই তুলনায় বোর্ডের ২ কোটি টাকা নস্যিই।

এ নিয়ে যখন প্রথম কথা ওঠে, বোর্ডের কয়েক জন কর্তা বলার চেষ্টা করেন, ভারতীয় ক্রিকেটারেরা স্পনসরশিপ থেকে প্রচুর টাকা আয় করেন। আইপিএল থেকে মোটা টাকা পাচ্ছেন। আর কত টাকা ক্রিকেটারদের লাগবে? এই প্রশ্নও খুব একটা গুরুত্ব পাচ্ছে না কারণ, ব্যক্তিগত স্পনসরশিপ থেকে কে কী আয় করছেন, সেটা একান্তই তাঁদের ব্যক্তিগত যোগ্যতা থেকে। বোর্ড তার ক্রিকেটারদের প্রাপ্য অর্থ দিচ্ছে কি না, সেটাই খতিয়ে দেখছে সুপ্রিম কোর্ট এবং দেশের সর্বোচ্চ আদালত নিযুক্ত পর্যবেক্ষকের দল।

লোঢা কমিটির সুপারিশের জেরে সুপ্রিম কোর্ট বোর্ড পরিচালনার জন্য পর্যবেক্ষক দল বসিয়ে দিয়েছে। সেই দলের প্রধান প্রাক্তন সিএজি বিনোদ রাই। পর্যবেক্ষকের দল আসার পরেই প্রথম এই অসামঞ্জস্য ধরা পড়ে। তার পরেই বিনোদ রাই নিজে কথা বলেন কোহালি, ধোনি এবং ক্রিকেট দলের সঙ্গে। বেরিয়ে আসে ক্রিকেটারদের চাপা অসন্তোষ। এখন সুপ্রিম কোর্টও আর্থিক নকশা ঠিক করার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছে বিনোদ রাই-দের।

তাই কোহালিদের লক্ষ্মীলাভ কার্যত নিশ্চিত। মুখের হিসেবে যা শোনা গেল, বর্ধিত চুক্তিতে কোহালির মতো সেরা ক্রিকেটারেরা স্মিথ বা রুটের মতোই দশ কোটি টাকার আশেপাশে বেতন পেতে পারেন। তিন বা চার ধরনের ‘গ্রেড’ করা হবে। সবচেয়ে উপরের স্তরে থাকবেন কোহালির মতো ক্রিকেটারেরা। যাঁরা সব ধরনের ফর্ম্যাটেই অপরিহার্য। কে কোন গ্রেডে থাকবেন, সেটা যৌথ ভাবে বসে ঠিক করবে বোর্ড এবং টিম ম্যানেজমেন্ট। তেমনই ঘরোয়া ক্রিকেটেও প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে অর্থ। মেয়েদের ক্রিকেটও লাভবান হতে পারে নতুন নকশায়।

রাজধানীতে তাই শুধুই সিরিজ ফয়সালা নয়, হয়তো ভারতীয় ক্রিকেটারদের জীবনের নতুন রূপরেখাই তৈরি হতে চলেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE