মাত্র দু’সপ্তাহের মধ্যে সাও পাওলো শহরের ছবিটাই বদলে গিয়েছে। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সুইৎজ়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ড্রয়ের পরে অনেকেই নেমার দা সিলভা স্যান্টোস (জুনিয়র)-দের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিল। কিন্তু এখন পুরো শহরটাই হলুদ-সবুজ পতাকায় ছেয়ে গিয়েছে। শুধু তাই নয়। অধিকাংশ বাড়ির দেওয়ালেই নেমার, ফিলিপে কুটিনহো, গ্যাব্রিয়েল জেসুসদের মুখের ছবি। সাও পাওলো থেকে রিয়ো, সর্বত্রই ব্রাজিলের জয়গান, উৎসবের আবহ। যারা আগে ভাবছিল, ব্রাজিলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই, তারাই এখন তিতের দলকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত।
সাও পাওলোর স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেল তিনটেয় বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের মুখোমুখি হচ্ছে ব্রাজিল। চব্বিশ ঘণ্টা আগে থেকেই আমার বন্ধুরা উৎসবের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে! শুক্রবার সবাই একসঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ সেরে ম্যাচ দেখতে বসবে। ওরা এতটাই আত্মবিশ্বাসী যে, জয়োৎসবের পরিকল্পনাও সেরে ফেলেছে।
ব্রাজিলের জয়ের ব্যাপারে আমিও আত্মবিশ্বাসী। বেলজিয়াম যত ভালই দল হোক, এই মুহূর্তে নেমাররা যে রকম ছন্দে আছেন, তাতে ওঁদের থামানো কঠিন। তার অন্যতম কারণ, এই বিশ্বকাপে ব্রাজিল কোনও এক জনের উপরে নির্ভরশীল নয়। একটা দল হিসেবে খেলছে। এটাই আমাদের সাফল্যের অন্যতম কারণ। এ রকম ভাবার কোনও কারণ নেই যে, আমি বেলজিয়ামকে গুরুত্ব দিচ্ছি না। এডেন অ্যাজার, কেভিন দে ব্রুইন, রোমেলু লুকাকু, ভ্যানসঁ কোম্পানির মতো ফুটবলার যে দলে খেলেন, তাদের গুরুত্ব দিতেই হবে। কিন্তু বাড়তি সমীহ করতে রাজি নই।
আরও পড়ুন: হ্যারি কেনের আলোয় কাপ জয়ের স্বপ্ন ইংল্যান্ডের
বেলজিয়াম দলের দুর্বলতা কোথায়, তা শেষ ষোলোর ম্যাচে দু’গোলে এগিয়ে গিয়ে জাপানই দেখিয়ে দিয়েছে। যে দল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখে, তাদের রক্ষণ কেন এ ভাবে গোল খাবে? কোম্পানিকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে, এখনও পুরো ফিট হয়ে ওঠেননি। তাই ব্রাজিলের উচিত আগের ম্যাচগুলোর মতোই খেলা। অর্থাৎ, নিজেদের মধ্যে ছোট-ছোট পাস খেলে আক্রমণে ওঠা। অ্যাজারদের বিরুদ্ধে তিতে রণনীতি বদলাবেন বলে আমার মনে হয় না। বেলজিয়ামের আসল শক্তি মাঝমাঠ ও আক্রমণ ভাগ। দে ব্রুইন ও অ্যাজারই ওদের আক্রমণে নেতৃত্বে দেন। এই ম্যাচে সেটা করতে দেওয়া চলবে না। লক্ষ্য রাখতে হবে বেলজিয়াম অধিনায়ক যেন বল নিয়ে দৌড়তে না পারেন। অ্যাজার পেনাল্টি বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শটে গোল করেন। ওঁকে শট কোনও ভাবেই মারতে দেওয়া চলবে না। অ্যাজার ও দে ব্রুইন আটকে গেলে নিষ্প্রভ হয়ে পড়বেন লুকাকু-ও। ম্যান ইউ স্ট্রাইকারের গতি কম। ওঁর প্রধান অস্ত্র হেড। থিয়াগো সিলভা ও মিরান্দা ফিলহোর লক্ষ্য হওয়া উচিত, বল লুকাকু-র কাছে পৌঁছনোর আগেই বিপন্মুক্ত করা। ব্রাজিল বনাম বেলজিয়াম ম্যাচ নিয়ে আমার এক বন্ধুর সঙ্গে আলোচনা করছিলাম। ও রীতিমতো উদ্বিগ্ন। বলছিল, ‘‘কার্লোস কাজিমিরো কার্ড সমস্যায় ছিটকে গিয়েছেন। কে আটকাবেন অ্যাজার, দে ব্রুইন, লুকাকুকে?’’
কাজিমিরো দুর্দান্ত ফুটবলার। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ থেকেই মাঝমাঠে দুর্ধর্ষ খেলছেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা। কিন্তু আমাদের দলটা এ বার এমন ভাবে গড়ছেন তিতে যে, বিকল্প নিয়ে ভাবতে হবে না। কাজিমিরোর জায়গায় তিতে হয়তো খেলাবেন ফের্নান্দিনহো লুইস রোসাকে। আমার মতে, কাজিমিরোর চেয়ে অনেক বেশি কার্যকরী হয়ে উঠবেন ফের্নান্দিনহো। কারণ, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ম্যাঞ্চেস্টার সিটির হয়ে খেলেন ব্রাজিল মিডফিল্ডার। দে ব্রুইন ও কোম্পানি ম্যান সিটিতে ওঁর সতীর্থ। চেলসিতে খেলেন অ্যাজার। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের স্ট্রাইকার লুকাকু। ওঁদের শক্তি-দুর্বলতা ফের্নান্দিনহো সব চেয়ে ভাল জানেন। আর নেমার তো আছেনই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy