Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
ফোর্থ আম্পায়ার

ছেলেদের নিশ্চয়ই সেই সিডনি সেমিফাইনালের কথা বলবে রবি

৩২ বছর আগে কপিল’স ডেভিলসের বিশ্বজয়ী টিমে তিনিও ছিলেন। এ বার ধোনিদের মিশন নিয়ে আনন্দবাজারে এক্সক্লুসিভ কাপ আড্ডায় দিলীপ বেঙ্গসরকরসিডনি আর সেমিফাইনাল— এই দুটো শব্দ একসঙ্গে শুনলে আমার একটা দিনের কথা মনে পড়ে যায়। বছর তিরিশ আগেকার কথা। পঁচাশির বেনসন-হেজেস বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ সেমিফাইনাল খেলতে নেমেছিলাম এই সিডনিতেই। প্রতিপক্ষের নাম? নিউজিল্যান্ড। জন রাইট, মার্টিন ক্রো, জিওফ হাওয়ার্থ, রিচার্ড হ্যাডলি— কী টিমটাই না ছিল তখন ওদের!এতগুলো বছর কেটে গিয়েছে, তবু বিশ্বাস করুন, আজও ম্যাচটার কথা ভাবলে টেনশন হয়!

শেষ আপডেট: ২৫ মার্চ ২০১৫ ০৪:২৮
Share: Save:

সিডনি আর সেমিফাইনাল— এই দুটো শব্দ একসঙ্গে শুনলে আমার একটা দিনের কথা মনে পড়ে যায়। বছর তিরিশ আগেকার কথা। পঁচাশির বেনসন-হেজেস বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ সেমিফাইনাল খেলতে নেমেছিলাম এই সিডনিতেই। প্রতিপক্ষের নাম? নিউজিল্যান্ড। জন রাইট, মার্টিন ক্রো, জিওফ হাওয়ার্থ, রিচার্ড হ্যাডলি— কী টিমটাই না ছিল তখন ওদের!এতগুলো বছর কেটে গিয়েছে, তবু বিশ্বাস করুন, আজও ম্যাচটার কথা ভাবলে টেনশন হয়! বিরাট ম্যাচ ছিল ওটা। ওদের দুশোর কাছাকাছি রানে অলআউট করে দিয়েছিলাম। কিন্তু রানটা তাড়া করতে নেমে টিম সমস্যায় পড়ে গিয়েছিল। আমাদের রান একশোও পেরোয়নি, ও দিকে শ্রীকান্ত আর আজহারউদ্দিন আউট। আমি চার নম্বরে খেলছি, আর কপিল দেবকে পাঁচে নামাল সুনীল গাওস্কর। ওকে আগে নামানোর কারণ, রানটা তাড়াতাড়ি তুলে দিয়ে চাপ কমানো। আমিও তখন ভাল ফর্মে। দু’জন মিলে ঠিক করলাম, অনেক হয়েছে। এ বার ওদের বোলারদের একটু শায়েস্তা করা দরকার। দু’দিক থেকে দু’জনেই বড় শট খেলা শুরু করলাম। আমাদের লক্ষ্য ছিল পার্টনারশিপটা ধরে রাখাও। শেষ পর্যন্ত বেশ সহজে জিতে গিয়েছিলাম আমরা। পাঁচ-ছ’ওভার বাকি থাকতেই। সত্যি, অসাধারণ ছিল ম্যাচটা। জানি না, সে দিনের ম্যান অব দ্য ম্যাচের এই কথাগুলো মনে আছে কি না। মনে পড়া তো উচিত। বিশেষ করে যখন সে সিডনিতেই আছে। আর তার টিম সেখানে কাল সেমিফাইনাল খেলতে নামছে।

রবি শাস্ত্রীর কথা বলছি। ওর টিম ইন্ডিয়ার প্রতিপক্ষ অবশ্য নিউজিল্যান্ড নয়, অস্ট্রেলিয়া। নিশ্চয়ই ছেলেদের বলবে, কী ভাবে সে দিন টাইট সিচুয়েশন থেকে ম্যাচ বার করেছিলাম আমরা। ও নিজেও কতটা ভাল পারফর্ম করেছিল। তবে ধোনির টিম এমনিতেই মানসিক ভাবে খুব মজবুত। যেমন মাঠে, তেমন মাঠের বাইরেও। এই টিমটা এখন পর্যন্ত হারেনি। টানা সাতটা ম্যাচ জিতেছে। উল্টো দিকে অস্ট্রেলিয়া কিন্তু অপরাজেয় থাকতে পারেনি। গ্রুপে নিউজিল্যান্ডই তো ওদের হারিয়েছে। আপনারা অনেকে নিশ্চয়ই এখন বলবেন, কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে যে গোটা গ্রীষ্মে একটাও ম্যাচ জিততে পারেনি ভারত? না টেস্ট সিরিজে, না ত্রিদেশীয় ওয়ান ডে সিরিজে? তাঁদের বলব, হ্যাঁ অস্ট্রেলীয়রা হয়তো সেটা মাথায় নিয়েই নামবে। কিন্তু ঘটনা হল, ক্রিকেটে সাম্প্রতিক ফর্মই সব। কয়েক মাস আগে কে কাকে হারিয়েছিল, সে সব গুরুত্বহীন। আর সাম্প্রতিক ফর্মের বিচারে টিম ক্লার্কের চেয়ে টিম ধোনি বেশ খানিকটা এগিয়ে।

আর সেমিফাইনালটা অস্ট্রেলিয়ার হোম ম্যাচ, সেই যুক্তিটাও মানতে পারছি না। বিশ্বকাপে ভারতের ম্যাচে গ্যালারি ভর্তি ভারত সমর্থক দেখছি। সিডনিতেও ছবিটা পাল্টাবে বলে মনে হয় না। বরং আমার তো মনে হয়, অস্ট্রেলিয়ার ঘরের মাঠে অস্ট্রেলীয়দের চেয়ে ভারতীয়রা সংখ্যায় বহুগুণ বেশি থাকবেন। গ্যালারির ম্যাচটা যে ভারত আগেভাগেই জিতে রেখেছে, সেটা বললে তাই খুব বাড়িয়ে বলা হবে না!

সিডনি পিচ নিয়ে কয়েক দিন ধরে বেশ জমজমাট তর্কবিতর্ক চলছে। পিচ কেমন হবে, এখনও সেটা নিশ্চিত নয়। দেখুন, সিডনিতে এখন বিক্ষিপ্ত ভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। আজ, মঙ্গলবারও তো শুনলাম ওখানে ছিটেফোঁটা বৃষ্টি হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে পিচ রোল করার খুব বেশি সুযোগ পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। সেটা হলে কিন্তু স্পিনাররা সাহায্য পেতে পারে। তা ছাড়া সিডনি পিচ পরের দিকে স্লো টার্নার হয়ে যায়। ও রকম পিচে ২৭০ মতো তুললে ভালই লড়াই হবে।

ইন্টারনেটে দেখছি, ম্যাচের দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। আকাশ পরিষ্কার থাকারই কথা। তবু একটা আশঙ্কা তো মনে মনে থেকেই যায়। ধোনিকে তাই বলব, বৃষ্টির সামান্য ভয় থাকলেও টস জিতলে আগে ফিল্ডিং করে নিও। তা হলে রান তাড়া করতে নামার সময় একটা পরিষ্কার অঙ্ক নিয়ে খেলা যাবে। ডাকওয়ার্থ-লুইসের ব্যাপারটাও তখন মাথায় রাখতে হবে। পরে ব্যাট করলে এ সব পরিস্থিতিতে সুবিধেই হয়। আজ যেমন নিউজিল্যান্ডের হল।

বৃষ্টির কথা শুনে আপনারা ভয় পেয়ে গেলেন না তো? আরে, এই টিম যা দুর্দান্ত ফর্মে আছে, তাতে ও সব একেবারেই বড় ফ্যাক্টর হবে না। আমাদের পেসারদের কথাই ভাবুন না। তিন পেসার মিলিয়ে ৪২টা উইকেট তুলে নিয়েছে ওরা। সব রকম সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে তৈরি হওয়া ভাল, তাই এ সব বললাম আর কী! সেমিফাইনালে কিন্তু আমার বাজি ভারতই।

আর ফাইনাল? নাহ, আজ আর নয়। পরের কলমগুলোর জন্য বাকিটা তুলে রাখি, কী বলেন?

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE