স্পনসর সঙ্গে চুক্তি শেষ হওয়ায় এ বছর থেকে বদলে যাচ্ছে ব্যালন ডি’অর নামটা। নাম হচ্ছে ‘বেস্ট ফিফা ফুটবল অ্যাওয়ার্ড।’ পুরস্কার প্রাপকও নতুন কেউ কি না, জল্পনাটা চলছেই। জল্পনা, মেসি-রোনাল্ডোর একচেটিয়া আধিপত্বে এ বার থাবা বসাতে পারেন গ্যারেথ বেল, আঁতোয়া গ্রিজম্যান বা লুইস সুয়ারেজরা। ২০০৮-এর পর অবশেষে মেসি-রোনাল্ডো ডুয়েলের ময়দানের বাইরে ট্রফি উঠতে পারে নতুন দাবিদারের হাতে।
অথচ সেই জল্পনায় জল ঢেলে দিলেন ইউরোপের সেরা ফুটবল মতিষ্কদের অন্যতম। বলে দিলেন, ‘‘ক্রিশ্চিয়ানোর বাইরে আর কারও হাতে এ বারের ব্যালন ডি’অরটা দেখতে পাচ্ছি না।’’ স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসনের সাফ কথা, ‘‘বছরটা অতুলনীয় কেটেছে ক্রিশ্চিয়ানোর। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছে। পর্তুগালকে ইউরো কাপ দিয়েছে। বর্ষসেরার লড়াইয়ে এ বার ওকে টেক্কা দেওয়ার মতো আর কেউ নেই।’’
প্রিয় ছাত্রকে নিয়ে প্রবাদপ্রতিম কোচের গর্বটাও চাপা থাকেনি। স্পেনের কাগজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ফার্গুসন ইউরো ফাইনালের প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, ‘‘চোটের কারণে ক্রিশ্চিয়ানোকে ফাইনালে মাঠের বাইরে চলে যেতে হলেও লাইনের ধার থেকে যে ভাবে ও গোটা ম্যাচ টিমকে তাতিয়ে গিয়েছিল, সেটা অসাধারণ! এটাই বলে দেয় দেশের জন্য ট্রফি জিততে কতটা মরিয়া ছিল।’’ এর পর যোগ করেছেন, ‘‘সবচেয়ে গর্ব হয় এটা ভেবে যে, ক্রিশ্চিয়ানোর কেরিয়ার তৈরি করায় ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের একটা ভূমিকা ছিল।’’
এক যুগেরও বেশি আগে স্পোর্টিং লিসবনে এক বাচ্চা ছেলের খেলা মনে ধরেছিল ফার্গুসনের। ২০০৩-এ আঠারো বছরের সেই সদ্য যুবককে নিয়ে এসেছিলেন ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডে। নিজের ছত্রছায়ায়, নিজের হাতে গড়েপিঠে তাঁকে বদলে দিয়েছিলেন আজকের সিআর সেভেন-এ।
ফার্গুসন অবশ্য বলেছেন, বিশ্ব সেরা হয়ে ওঠার খিদেটা রোনাল্ডোর মধ্যে সেই ছোট বয়সেই দেখেছিলেন। বলেছেন, ‘‘ক্রিশ্চিয়ানোকে সতেরো বছর বয়স থেকে দেখছি। ওর উন্নতির গ্রাফটা আমাক চেয়ে ভাল আর কেউ বোঝে না। একই সঙ্গে ঠিক কী গুণে ও এতবড় মহাতারকা হয়ে উঠেছে, সেটাও আমি সবচেয়ে ভাল জানি।’’
ফার্গুসনের মতে সেই গুণটা হল বাকিদের পিছনে ফেলে শ্রেষ্ঠ হয়ে ওঠার জেদ। জেদটা রোনাল্ডোর মধ্যে আবেশের মতো সর্বক্ষণ কাজ করে। ফার্গুসন বলেছেন, ‘‘রোনাল্ডোর সহজাত ফুটবল প্রতিভা তো আছেই। সঙ্গে এক জন কমপ্লিট ফুটবলার হয়ে উঠতে যে ধারাবাহিক পরিশ্রম আর নিয়মানুবর্তিতা লাগে, সেটা ওর মধ্যে অফুরন্ত। ওর ওয়ার্ক এথিক্স আমাকে মুগ্ধ করে।’’ যোগ করেছেন, ‘‘ক্রিশ্চিয়ানোর মধ্যে একটা অবিশ্বাস্য প্রতিজ্ঞা দেখি আজও। নিজেকে আরও উন্নত করার, বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ফুটবলার হয়ে ওঠার। এটা ওর মধ্যে নেশার মতো, আবেশের মতো। সেটাই ওকে প্রতিদিন ট্রেনিংয়ে এতটা একাগ্র রাখে। ইউনাইটেডে আসার পর ট্রেনিংয়ে ওর নিয়মানুবর্তিতা বাকিদের কাছে উদাহরণ ছিল। আজও তাতে এতটুতু ফাঁকি দেখি না।’’
ছাত্রের প্রতি স্নেহ অপরিসীম। তবে ফার্গুসন বলেছেন, রোনাল্ডোকে বর্ষসেরা বাছার মধ্যে স্নেহ নয়, তাঁর ফুটবল বোধই কাজ করছে। লড়াইয়ে মেসি তো আছেনই। আছেন লা লিগা এবং ইউরোর সেরা ফুটবলার, ইউরোয় সোনার বুট জয়ী গ্রিজম্যান। ওয়েলসকে প্রায় একার দাপটে ইউরোর সেমিফাইনালে তোলা বেল বা মেসির ছায়া সরিয়ে বার্সেলোনার হয়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠা সুয়ারেজরাও। তবু ফার্গুসন বলছেন, ‘‘এ বছর ক্রিশ্চিয়ানোর যা সাফল্য, তাতে ওর ধারেকাছে আর কাউকে দেখছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy