Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪

অভাব পেরিয়ে ম্যাকগ্রার ক্লাসে খড়্গপুরের অমিত

এক তরুণ ক্রিকেটারকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে জঙ্গলমহলের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর। অমিত কুইল্যা নামে বছর কুড়ির এই যুবক সুযোগ পেয়েছেন বিশ্বখ্যাত অস্ট্রেলিয়ান পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রার কাছে ক্লাস করার। চেন্নাইয়ে ম্যাকগ্রার কাছে হাতেকলমে বোলিং শিখে অভিভূত অমিত। বলছিলেন, “স্বপ্নেও ভাবিনি এমন একজন ক্রিকেটারের কাছে ক্লাস করার সুযোগ পাবো।

মেদিনীপুর কলেজিয়েট মাঠে অনুশীলনে ব্যস্ত। —নিজস্ব চিত্র।

মেদিনীপুর কলেজিয়েট মাঠে অনুশীলনে ব্যস্ত। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৫ ০১:৩১
Share: Save:

এক তরুণ ক্রিকেটারকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে জঙ্গলমহলের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর। অমিত কুইল্যা নামে বছর কুড়ির এই যুবক সুযোগ পেয়েছেন বিশ্বখ্যাত অস্ট্রেলিয়ান পেসার গ্লেন ম্যাকগ্রার কাছে ক্লাস করার। চেন্নাইয়ে ম্যাকগ্রার কাছে হাতেকলমে বোলিং শিখে অভিভূত অমিত। বলছিলেন, “স্বপ্নেও ভাবিনি এমন একজন ক্রিকেটারের কাছে ক্লাস করার সুযোগ পাবো। ওঁর কাছ থেকে কিছু টিপস্ পেয়েছি। টেকনিক্যাল ব্যাপারে কিছু পরামর্শও দিয়েছেন। আগামী দিনে এগুলো খুব কাজে লাগবে।”

ছিপছিপে চেহারা। উচ্চতা ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি। বাংলার প্রতিভাবান পেসারদের অন্যতম অমিত। ‘এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশন’-এর সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে দেশের প্রতিভাবান পেসারদের নিয়ে প্রশিক্ষণ শিবির করতে উদ্যোগী হয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। মাস তিনেক আগে দেশের ১০ জন প্রতিভাবান পেসারকে নিয়ে চেন্নাইয়ে সেই শিবির শুরু হয়। বাংলা থেকে সেখানে অমিত-সহ দু’জন সুযোগ পেয়েছেন। চেন্নাইয়ের শিবির থেকে ছুটি নিয়ে গত সপ্তাহেই খড়্গপুরের বাড়িতে ফিরেছেন অমিত। এখন তাঁর স্বপ্ন জাতীয় দলের জার্সি গায়ে মাঠে নামা। তাঁর কথায়, “সুযোগ পেলে নিজের সেরাটা উজাড় করে দেবো।” অমিতের কোচ সুশীল শিকারিয়া অবশ্য আশাবাদী। সুশীল বলছিলেন, “ওর মধ্যে ভাল ক্রিকেট আছে। ডেলিভারি বেশ ভালই করে। আমি নিশ্চিত, ও অনেক দূর এগোবে।”

খড়্গপুর শহরের মালঞ্চ এলাকার বাসিন্দা অমিতের জীবনে উত্থানের এই পথটা কিন্তু মোটেই সহজ ছিল না। রীতিমতো অভাবের সংসার। বাবা সহদেববাবু কারখানার শ্রমিক ছিলেন। কিন্তু কিছু দিন হল কাজ হারিয়েছেন। মা শঙ্করীদেবী গৃহবধূ। দুই ভাইয়ের মধ্যে অমিতই বড়। এখন তিনি খেলে যেটুকু রোজগার করেন, তাতেই সংসার চলে। দারিদ্রের সঙ্গে লড়ে এ ভাবেই নিজের স্বপ্ন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন অমিত। ক্রিকেট খেলা শুরু সেই দশ-এগারো বছর বয়স থেকে। বন্ধুদের সঙ্গে পাড়ার মাঠে খেলা দিয়েই হাতেখড়ি। পরে প্রশিক্ষণ নিতে মেদিনীপুরে আসেন। কয়েকটি টুর্নামেন্টে খেলার পরই ক্রীড়ামহলের নজর কাড়েন। একে একে কলকাতার কয়েকটি ক্লাবে খেলার সুযোগ আসে। কলকাতা ওয়াইএমসি চৌরঙ্গি, ইস্টার্ন রেল, ইউনাইটেড স্পোর্টসের হয়ে মাঠে নামেন। পরে অনূর্ধ্ব ১৯ বাংলা দলে খেলার সুযোগ আসে। পরে অনূর্ধ্ব ২৩ দলেও সুযোগ পান অমিত।

অনূর্ধ্ব ২৩ বাংলা দলে ঢুকে পড়ার পরই সম্ভাবনার ক্ষেত্রটা বিস্তৃত হয়। সিএবি-র নির্বাচকদের নজরে পড়েন তিনি। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও অমিতের খেলা দেখেন। অমিতের কোচ সুশীল বলছিলেন, “ও নিজের চেষ্টাতেই এতদূর এগিয়েছে। জেলা থেকেও এখন প্রতিভাবান ক্রিকেটাররা উঠে আসছে। বোর্ড প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের নিয়ে শিবির করাচ্ছে। গ্লেন ম্যাকগ্রার মতো ক্রিকেটার তরুণদের ক্লাস নিয়েছেন। এমন শিবিরের ফলে তরুণ ক্রিকেটাররা আরও উত্‌সাহিত হবে।”

আগামী সপ্তাহে বেঙ্গালুরু চলে যাবেন। সেখানে বাংলা দলের সঙ্গে তাঁর যোগ দেওয়ার কথা। এখন দেশের তরুণ পেসারদের মধ্যে অন্যতম উমেশ যাদব, মহম্মদ সামি, অশোক দিন্দা, মোহিত শর্মা, বরুণ অ্যারনরা। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই বৃত্তে ঢুকে পড়ার স্বপ্ন দেখেন অমিত। বোর্ডের শিবিরে সুযোগ পাওয়ার পর সেই স্বপ্নে রং লেগেছে। ম্যাকগ্রার ক্লাসের দিনগুলো সেই স্বপ্নকে আরও রঙিন করেছে যে। অমিতের কথায়, ‘‘ যে মানুষটা টেস্টে ৫৬৩টি, একদিনের ম্যাচে ৩৮১টি উইকেট পেয়েছেন, তাঁর কাছে পরামর্শ পাওয়া বিশাল ব্যাপার। আগামী দিনে আরও ভাল করে ক্রিকেটটা শিখতে চাই।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE