Advertisement
১৯ মে ২০২৪

নমনীয় ট্যাকটিক্সের জোরে কন্তে এখন লম্বা রেসের ঘোড়া

তেইশ ম্যাচে আঠারো জয়। লিগ টেবলের শীর্ষে। লিগের সবচেয়ে আঁটসাঁট রক্ষণ।

সোহম দে
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৪
Share: Save:

তেইশ ম্যাচে আঠারো জয়। লিগ টেবলের শীর্ষে। লিগের সবচেয়ে আঁটসাঁট রক্ষণ।

চেলসি আর আন্তোনিও কন্তের জুটি মানেই অবিসংবাদিত দাপট। যাদের বিরুদ্ধে মাথা নিচু করে মাঠ ছাড়তে হচ্ছে বিপক্ষকে। যাদের রক্ষণ ভাঙতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দিয়েগো কোস্তা হাসির ছলেই গোলের পর গোল করছেন।

মহাতারকা কোচেদের লড়াইয়ে সবচেয়ে পিছনে রাখা হয়েছিল কন্তেকে। তাঁর না আছে মোরিনহোর ক্যারিশমা। না আছে গুয়ার্দিওলার ট্রফি ক্যাবিনেট। যুদ্ধে শুরুর আগেই অঘোষিত ভাবে আন্ডারডগ তকমাটা বসে গিয়েছিল কন্তের নামের পাশে।

কিন্তু কী ভুলটাই না ভাবা হয়েছিল!

মোরিনহো-গুয়ার্দিওলা যখন পাঁচ এবং ছয়ের লড়াইয়ে ব্যস্ত, ক্লপ যখন তাঁর দলের ডিফেন্স মেরামতে মগ্ন, ওয়েঙ্গার যখন আবার সেই পরিচিত শীতঘুমে, কন্তে তখন এগিয়ে চলেছেন প্রিমিয়ার লিগ ট্রফির দিকে।

পরিসংখ্যান কিন্তু একটা কথা বলছে। বলছে, কন্তে এক রকমের লিগ স্পেশ্যালিস্ট। যাকে বলে— লম্বা রেসের ঘোড়া। ইতালীয় সেরি এ-তে কোচিং করানোর দিন থেকেই কন্তে যেন জানেন, আটত্রিশ ম্যাচের লিগে কী ভাবে ফিনিশিং লাইনে পৌঁছনো যায়।

একটা লম্বা লিগ জেতার রহস্য কী? পাঁচ বারের আই লিগ জয়ী কোচ আর্মান্দো কোলাসোর মতে, ম্যান ম্যানেজমেন্ট। লম্বা মরসুমে অনেক সময় লক্ষ্য হারাতে পারে দল। সেই পরিস্থিতি সামলাতে কোচকে মেন্টর হয়ে উঠতে হয়। ‘‘কিছু দিন আগে খবরের কাগজে দেখেছিলাম কোস্তা নাকি চিনের ক্লাবে যেতে চায়। কিন্তু কন্তে খুব ভাল পরিস্থিতি সামলেছে। এতেই বোঝা যাচ্ছে কন্তের ম্যান ম্যানেজমেন্ট কতটা ভাল। লম্বা লিগে দলকে সব সময় ফোকাস ধরে রাখতে হয়। চেলসিকে দেখেই মনে হয় প্লেয়াররা কোচের জন্য সব কিছু উজাড় করে দিতে তৈরি,’’ বললেন কোলাসো।

ম্যান ম্যানেজমেন্ট তো গেল একদিকে। স্ট্র্যাটেজির ক্ষেত্রেও তো কন্তে এক ধাপ এগিয়ে। পেপ গুয়ার্দিওলা যখন কোনও ইংলিশ ক্লাবকে তাঁর ব্র্যান্ডের ফুটবল খেলাতে বদ্ধপরিকর, মোরিনহো যখন দিনদুপুরে দল পাল্টাতে ওস্তাদ, কন্তে কিন্তু দলের শক্তির উপর নির্ভর করে ছক সাজান। অর্থাৎ ট্যাকটিক্সের ক্ষেত্রে খুব নমনীয়। যে রকম পরিস্থিতি সে রকম ভাবে তিনি নিজের ট্যাকটিক্স বদলে নেন।

ইস্টবেঙ্গল কোচ ও ওয়েস্ট হ্যাম ভক্ত ট্রেভর জেমস মর্গ্যান বললেন, ‘‘কন্তে আসার আগে থেকেই চেলসির স্টাইল ছিল ৪-৩-৩। কন্তে প্রথমে চেষ্টা করেছিল সেই স্টাইলে দলকে খেলাতে। কিন্তু দেখল কাজ করছে না। তখন তিন ব্যাকে দল সাজাল। গোল না আসলে আবার দুই ফরোয়ার্ড নামায়। কন্তের মাথায় অনেক প্ল্যান থাকে। লম্বা লিগে প্ল্যান এ-র সঙ্গে প্ল্যান বি, প্ল্যান সি তৈরি রাখে কন্তে।’’

কন্তের মগজাস্ত্র

২০১১-১২ মরসুম থেকে লিগ রেকর্ড
(জুভেন্তাস ও চেলসি)

• ম্যাচ ১৩৭

• জয় ১০১
• ড্র ২৬ • হার ১০

• গোল ২৬৭

• গোল খেয়েছে ৮৩

(৩১ জানুয়ারি ২০১৭ পর্যন্ত)

জুভেন্তাসের দিন থেকেই কন্তে তিন ব্যাকে খেলেন। কিন্তু তাঁর সঙ্গে আবার মাঝমাঠকেও অদৃশ্য ব্যারিকেড করে দেন। বর্তমান ফুটবলে গোল প্রতিটা দলই করতে পারে। কিন্তু জেতার আসল রহস্য, গোল না খাওয়া। কন্তেও সেই মানসিকতায় বিশ্বাসী। মর্গ্যান বলছেন, ‘‘ইতালিয়ান কোচ মানেই তো ডিফেন্স আগে, তার পর সব। কন্তের চেলসি দলের ইউএসপি সেটাই। এক গোল করলেও ম্যাচ ঠিক বের করছে। কারণ ডিফেন্স শক্তিশালী। এন’গোলো কাঁতে, মোজেসরা এসে লোক বাড়াচ্ছে। লিভারপুল, ম্যান ইউনাইটেড এখানে পিছিয়ে। ওরা গোল যেমন করছে, আবার খাচ্ছেও।’’

আটচল্লিশ ঘণ্টা আগে লিভারপুলের বিরুদ্ধে ১-১ ড্র। তাতেও ন’পয়েন্টের লিড নিয়ে আছে চেলসি। কোলাসো তো বলছেন, ‘‘কথা মিলিয়ে রাখুন। চেলসিই চ্যাম্পিয়ন হবে। যে রকম বুদ্ধি রেখে খেলছে, ওদের সাফল্য আটকায় কে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Antonio Conte Premier League Chelsea
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE