Advertisement
২০ মে ২০২৪
Australian Open 2023

ম্যাকডোনাল্ডে এসে সব বিস্বাদ নাদালের, ‘দুগ্ধপোষ্য’ ৬৫ নম্বরের কাছে হার

রাফায়েল নাদালকে হারিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন বিশ্বের ৬৫ নম্বর টেনিস খেলোয়াড় ম্যাকেঞ্জি ম্যাকডোনাল্ড। মাত্র তিন বছরে টেনিসে হাতেখড়ি। কী ভাবে পেশাদার টেনিস খেলোয়াড় হলেন তিনি?

অস্ট্রেলিয়ান ওপেন থেকে ছিটকে গেলেন নাদাল (বাঁ দিকে)। আমেরিকার টেনিস খেলোয়াড় ম্যাকেঞ্জি ম্যাকডোনাল্ডের (ডান দিকে) কাছে হারলেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়ান ওপেন থেকে ছিটকে গেলেন নাদাল (বাঁ দিকে)। আমেরিকার টেনিস খেলোয়াড় ম্যাকেঞ্জি ম্যাকডোনাল্ডের (ডান দিকে) কাছে হারলেন তিনি। —ফাইল চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২৩ ১৭:৫৬
Share: Save:

তিন বছর আগে প্রথম বার রাফায়েল নাদালের বিরুদ্ধে খেলতে নেমেছিলেন ম্যাকেঞ্জি ম্যাকডোনাল্ড। সে বার স্ট্রেট সেটে হারতে হয়েছিল তাঁকে। তিন বছর পরে সেই হারের বদলা নিলেন ম্যাকডোনাল্ড। স্ট্রেট সেটেই (৬-৪, ৬-৪, ৭-৫) নাদালকে হারিয়ে ছিটকে দিলেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেন থেকে।

বিশ্বের ৬৫ নম্বর টেনিস খেলোয়াড় ম্যাকডোনাল্ডের টেনিসে হাতেখড়ি মাত্র তিন বছর বয়সে। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার বাসিন্দা ম্যাকডোনাল্ডের প্রথম গুরু রোসি বারেইস। বাবা তাঁকে নিয়ে গিয়েছিলেন টেনিস শেখাতে। তখন তিনি এতটাই ছোট ছিলেন যে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু র‌্যাকেট ঘোরাতেন। অন্য দিকে দুধের বোতল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন রোসি। খিদে পেলেই ছুটে আসতেন তিনি।

১১ বছর বয়সে দক্ষিণ আফ্রিকার ওয়েন ফেরেইরার কাছে প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন তিনি। সেই সময় তাঁর কেরিয়ারে মায়ের গুরুত্ব কতটা ছিল সেটা পরে জানিয়েছেন ম্যাকডোনাল্ড। বলেছেন, ‘‘আমার ধ্যান-জ্ঞান ছিল টেনিস। কখনও কখনও টেনিস খেলার জন্য ক্লাস কামাই করতাম। কিন্তু সেই সময় আমার মাকে সব সময় পাশে পেয়েছি। আমি যে পেশাদার টেনিসে যাব সেটা সবার আগে মাকে বলেছিলাম। মা আমাকে সমর্থন করেছিল। প্রতি পদে আমাকে সাহায্য করেছে।’’

ম্যাকডোনাল্ডকে টেনিস ভালবাসতে শিখিয়েছিলেন রোসি। আর মানসিক দৃঢ়তা দিয়েছিলেন ওয়েন। পেশাদার টেনিসে ব্যর্থতা এলেও কী ভাবে নিজের লক্ষ্য ঠিক রাখতে হয় সেটা শিখিয়েছিলেন ওয়েন। সেই কারণেই শুরুতে সে রকম সাফল্য না পেলেও হতাশ হননি ম্যাকডোনাল্ড। নিজের উপর বিশ্বাস রেখেছেন। তার ফল পেয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে বেশ কিছু প্রতিযোগিতা জেতার পরে ২০১৩ সালে এটিপিতে অভিষেক হয় তাঁর। ম্যাকডোনাল্ডের গ্র্যান্ড স্ল্যামে অভিষেক ২০১৬ সালের ইউএস ওপেনে। ওয়াইল্ড কার্ড হিসাবে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু প্রথম রাউন্ডেই ছিটকে গিয়েছিলেন। প্রতি বছর খেলায় আরও উন্নতি করেছেন ম্যাকডোনাল্ড। ২০১৯ সালে বিশ্বের ১০ নম্বর টেনিস খেলোয়াড় জুয়ান মার্টিন দেল পোত্রোকে হারানো তাঁর কেরিয়ারের প্রথম বড় জয়।

অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে এর আগেও ভাল খেলেছেন ম্যাকডোনাল্ড। ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের চতুর্থ রাউন্ড পর্যন্ত পৌঁছেছিলেন ম্যাকডোনাল্ড। সেখানে দানিল মেদভেদেভের কাছে হারতে হয়েছিল তাঁকে। এ বারও আশা জাগাচ্ছেন ম্যাকডোনাল্ড। প্রথম রাউন্ডে ব্র্যান্ডন নাকাশিমাকে হারানোর পরে দ্বিতীয় রাউন্ডে সবাইকে চমকে দিয়েছেন তিনি। নাদালের বিদায়ের মঞ্চে উঠে আসছেন এক তারকা।

নাদালকে হারিয়ে ম্যাকডোনাল্ড বলেছেন, ‘‘নাদাল দুর্দান্ত চ্যাম্পিয়ন। যে কোনও পরিস্থিতিই হোক না কেন, ও লড়াই ছাড়ে না। এই ধরনের খেলোয়াড়কে হারানো খুব কঠিন। কিন্তু আমি শুধু নিজের খেলায় মন দিয়েছি। নিজের উপর বিশ্বাস রেখেছি। শেষ পর্যন্ত জিতেছি।’’ উল্লেখ্য, খেলার মাঝে চিকিৎসার পর কোর্টে ফিরে এসে নাদাল সে ভাবে খেলতে পারছিলেন না। তাঁর সার্ভে জোর ছিল না। লম্বা র‍্যালিতেও হেরে যাচ্ছিলেন ম্যাকডোনাল্ডের বিরুদ্ধে। চোট যে নাদালের খেলায় প্রভাব ফেলছিল তা স্পষ্ট। কিন্তু লড়াই ছাড়েননি তিনি। শেষ পর্যন্ত খেলেন। সেই কারণেই নাদালের প্রশংসা শোনা গিয়েছে ম্যাকডোনাল্ডের মুখে।

তিন বছর আগের সেই হারের কথা মনে আছে ম্যাকডোনাল্ডের। ফরাসি ওপেনের দ্বিতীয় রাউন্ডে তাঁকে হারাতে মাত্র দেড় ঘণ্টা সময় নিয়েছিলেন নাদাল। ম্যাকডোনাল্ড বলেছেন, ‘‘শেষ বার নাদাল আমাকে ধুয়ে দিয়েছিল। আমি দাঁড়াতে পারিনি। লাল সুরকির কোর্টে ওকে হারানো অসম্ভব। কিন্তু হার্ড কোর্ট আমার পছন্দের। তাই ওকে হারিয়ে বদলা নিতে চেয়েছিলাম। সেটা যে পেরেছি, তার জন্য আমি খুব খুশি।’’

বুধবার রড লেভার এরিনাতে ২ ঘণ্টা ৩২ মিনিটের লড়াই শেষে নাদালকে হারিয়েছেন ম্যাকডোনাল্ড। ২২টি গ্র্যান্ড স্ল্যামজয়ী নাদাল চোট নিয়ে ভুগছেন। বুধবার তিনি যখন প্রথম সেটে হেরে দ্বিতীয় সেটে ৩-৫ ফলে পিছিয়ে সেই সময় চিকিৎসক ডাকতে হয়। কোমরের বাঁ দিকে চোট রয়েছে তাঁর। ৩৬ বছরের নাদাল আবার কোর্টে ফিরে আসেন, কিন্তু চোটের কারণে তাঁর খেলতে অসুবিধা হচ্ছিল। সেই নিয়েও তিনি খেলা চালিয়ে যান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিশ্বের ৬৫ নম্বর খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে হেরে যান নাদাল। চোটে সমস্যা হলেও তাতে ম্যাকডোনাল্ডের কৃতিত্বকে ছোট করা যাবে না। কারণ, এর আগেও অনেক ম্যাচে চোট নিয়ে নাদাল খেলেছেন এবং জিতেছেন। কিন্তু ম্যাকডোনাল্ডের কাছে পারলেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE