ফাইল চিত্র।
জেলায় ডার্বি। ভেবেই আবেগে ভেসে যাচ্ছিলাম। কবে শেষ জেলায় বড় ম্যাচ হয়েছে কেউ বলতে পারল না। শহরের বন্ধুদের কাছে গর্ব করেও বলেছিলাম, ‘‘তোদের এ বার জেলায় আসতে হবে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচ দেখতে।’’ ডার্বি মানে তো আর শুধু ফুটবল ম্যাচ নয়। আমাদের মতো ফুটবলপ্রেমীদের কাছে এটা উৎসব। ৭ সেপ্টেম্বর বড় ম্যাচ হবে কল্যাণীতে, এটা জানার পর থেকেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছিলাম। যাবতীয় কাজ শিকেয় তুলে, অফিস ছুটি নেওয়ার সব বন্দোবস্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সব আনন্দ ভেস্তে দিলেন এই কর্তারা।
সত্যিই কি এঁরা ফুটবলের জন্য ভাবেন, আজকে প্রশ্নটা করতে ইচ্ছে করছে। যদি ভাবতেন তা হলে হাজার হাজার সমর্থকের আবেগের সঙ্গে এ ভাবে ছিনিমিনি খেলতে পারতেন কর্তারা? সত্যি, আজকে জানতে ইচ্ছে করছে অঞ্জনদা, টুটুদাদের কাছে, কেন ম্যাচটা খেললেন না? সত্যিই কি যা যা বলেছেন, এই সবগুলোকে পিছনে ফেলে ফুটবলের স্বার্থে এগিয়ে আসা যেত না? জানি, কোনও উত্তর পাওয়া যাবে না। তবুও আমি এক জন ফুটবলপ্রেমী হয়ে বলছি, ফুটবলের স্বার্থবিরোধী কাজ করলেন আপনারা!
শুধু আমরা সমর্থকরা নই, ফুটবলারদের কথাটাও যে আপনারা ভাবলেন না! যাঁদের জন্য এই ক্লাব। যাঁদের নিয়ে এই ডার্বি। যাঁরা খেলেন বলেই ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান রয়েছে। ওঁদের দেখতেই যুবভারতীর এক লাখের গ্যালারি ভরে যেত। ওঁদের কথা এক বার ভাবলেন না কর্তারা? উল্টে অজুহাত দিলেন, অচেনা স্টেডিয়ামে অনুশীলন না করে কী করে খেলবে তাঁদের ছেলেরা। যদি তা-ই হয়, তা হলে হাতে এত সময় থাকা সত্ত্বেও কেন কল্যাণীতে আগে গেল না মোহনবাগান? যে ভাবে ওঁদের খেলা দেখার জন্য বসে থাকি আমরা ওঁরাও তো বসে থাকেন ডার্বি খেলার জন্য। মরসুমের শুরুতেই এই ধাক্কাটা ওদের সারা বছর মনের মধ্যে খচখচ করবে না? খারাপ লাগছে বলতে, তবুও বলতে বাধ্য হচ্ছি, প্রথম থেকেই ডার্বি নিয়ে জলঘোলাটা শুরু করেছিলেন আপনারাই। কখনও টিভি স্বত্ত্বের টাকা তো কখনও শিলিগুড়িতে না খেলার অজুহাত। আপনাদের কথা মেনেই তো ম্যাচটা কল্যাণীতে নিয়ে আসা হয়েছিল। তা-ও কেন?
ইস্টবেঙ্গলও পিছিয়ে নেই। ফুটবলের স্বার্থ নিয়ে সারাক্ষণ জ্ঞান দেওয়া কর্তাদের কাছে প্রশ্ন, একটা দিন ডার্বি পিছিয়ে দিলে কী হত? নিতুদার কাছে জানতে চাইছি, এটা কি সম্ভব ছিল না? কিন্তু না, বিরোধিতা করতে হবে, নিজেদের শক্তি দেখাতে হবে। তার জন্য যে ফুটবলের বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল সেটা বুঝলেন না আপনারা! দুই ক্লাব এবং আইএফএ-র ইগোর লড়াইয়ে পিষে গেল বাংলার ফুটবল। কাল মোহনবাগান কর্তারা খেলবে না জানিয়ে দিলেও কোথাও একটা আশা ছিল, যদি ফুটবলের স্বার্থে খেলাটা হয়। তাই অপেক্ষায় ছিলাম সকাল থেকে। কিন্তু দেখলাম ফুটবলের কথা কেউ ভাবল না।
নিজেদের মধ্যে মারামারি করে বাংলার ফুটবলকে একটা কালো দিন উপহার দিলেন আপনারা সকলে। আর আইএফএ কর্তারা ঠান্ডা ঘরে বসে মেটাতে পারলেন না দুই ক্লাবের তরজা। শক্ত হাতে সামলাতে পারলেন না এই সমস্যা। যার জন্য খেলাটাই হল না। না খেলে আই লিগ থেকে নির্বাসিত হয়ে যেতে হয়েছিল মোহনবাগানকে। তার পর বড় টাকা জরিমানা দিয়ে ফিরতে হয়েছিল। এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ারও তো ক্ষমতা নেই পেরেন্ট বডির। তা হলে কীসের ফুটবল সংস্থা? মোহনবাগানকে খেলার জন্য বাধ্য করতে পারে না। না পারে ইস্টবেঙ্গলকে রাজি করিয়ে ম্যাচটা এক দিন পিছিয়ে দিতে। এ ভাবে চলতে থাকলে যে বাংলা থেকে ফুটবলটাই উঠে যাবে। একে তো কলকাতা লিগের সব জৌলুস হারিয়ে গিয়েছে অনেক আগেই। চাপা পড়ে গিয়েছে আইএসএল-এর হাজার ওয়াটের আলোর নীচে। এ বার ডার্বি না খেলে বাংলার ফুটবলকে মেরে ফেলার রাস্তাটাও যে তৈরি করে ফেললেন আপনারা। আপনাদেরকে ফুটবলপ্রেমী হিসেবে ভাবতে যে আজ খুব কষ্ট হচ্ছে।
আবার কবে দেখব ডার্বি? কবে আসবে আই লিগ? জানি না। কিন্তু ফুটবলের প্রতি ভালবাসাটা তো ছেড়ে দিতে পারব না। তাই অপেক্ষা আর দীর্ঘ নিঃশ্বাসকে সঙ্গে করেই বাংলায় ফুটবল গৌরবের দিন ফেরার অপেক্ষায় থাকলাম। আর একটা অনুরোধ, এ ভাবে ফুটবলকে শেষ যাত্রায় পাঠিয়ে দেবেন না দয়া করে।
আরও খবর
না খেলে ৩ পয়েন্টে খুশি নয় ইস্টবেঙ্গল, চরম হতাশ মোহনবাগান টিম
‘এনাফ ইস এনাফ’, বাগানকে হুঁশিয়ারি আইএফএ সচিবের
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy