Advertisement
১৮ মে ২০২৪

মার্কিন জার্সি না পাওয়ার দুঃখ ভুলতে শহরে বাঙালি টিটি কন্যা

শনিবার কাকভোরে একডালিয়ায় মাসির বাড়িতে সকলের মতো রিওর মার্চপাস্ট দেখতে টিভির সুইচ অন করবেন তিনি। অলিম্পিক্স স্টেডিয়ামে প্রিয় দুই বন্ধু আর কোচকে টিভির পর্দায় খুঁজবে তাঁর উৎসাহী চোখ!

দুই অলিম্পিয়ান সতীর্থ লিলি (ডান দিকে) এবং জিয়াকির সঙ্গে ঈশানা।

দুই অলিম্পিয়ান সতীর্থ লিলি (ডান দিকে) এবং জিয়াকির সঙ্গে ঈশানা।

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৬ ০৫:০৬
Share: Save:

শনিবার কাকভোরে একডালিয়ায় মাসির বাড়িতে সকলের মতো রিওর মার্চপাস্ট দেখতে টিভির সুইচ অন করবেন তিনি। অলিম্পিক্স স্টেডিয়ামে প্রিয় দুই বন্ধু আর কোচকে টিভির পর্দায় খুঁজবে তাঁর উৎসাহী চোখ!

নিজে মার্চপাস্টে থাকতে না পারায় কষ্ট লাগবে না? মঙ্গলবার দুপুরে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টির মাঝে ষোড়শী ঈশানা দেব-এর মুখেও তখন যেন শ্রাবণের কালো মেঘ। ‘‘আসল দুঃখটা হয়েছিল সেই মার্চ মাসে। যখন অলিম্পিক্স ট্রায়ালের কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে গেলাম। কলকাতায় বসে বরং চেঁচাব প্রিয় বন্ধুদের টেবল টেনিস পদকের জন্য। আর মন দিয়ে করব একটা বিশেষ কাজ।’’

মার্চের সেই ট্রায়ালে যোগ্যতামান পেরোলে মানস দেব-শউলি চৌধুরীর কন্যা ঈশানাকে দেখা যেতে পারত রিওর টিটি বোর্ডে। তবে সেটা মৌমা দাসদের সঙ্গে নয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জার্সি গায়ে!

ঈশানার স্বপ্ন সফল হয়নি। রিওতে আমেরিকার হয়ে নামবেন তাঁরই প্রিয় দুই বন্ধু লিলি ঝ্যাং এবং জিয়াকি ঝেং। ক্যালিফোর্নিয়ায় আইসিসি টিটি সেন্টারে এই দু’জন ছাড়াও কোচ মাসিমো কস্ট্যানটিনির (ম্যাক্স) অন্যতম প্রিয় ছাত্রী ঈশানা। কিন্তু কোচকে নিয়ে লিলি ও জিয়াকি যখন রিওতে, ঈশানা তখন ১৫,০৫৯ কিমি দূরে কলকাতায়। নিজের ‘বিশেষ কাজ’ সফল করতে।

এ দিন মায়ের পাশে বসে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী তাঁর হরিহরআত্মা লিলি সম্পর্কে বলছিলেন, ‘‘দিনে আট-ন’ঘণ্টা প্র্যাকটিস করে লিলি। ক্লাবে আমার ডাবলস পার্টনার হয়েছে অনেক বার। খুব ভাল করে জানি ও কী করতে পারে। গত বার লন্ডনেও গিয়েছিল। আশা করি নিজের দ্বিতীয় অলিম্পিক্সে ভাল কিছু করবেই।’’

ঈশানাও ভাল কিছু করতে চান নিজের সেই ‘বিশেষ কাজে’। বললেন, ‘‘রিওতে যখন যাওয়া হল না তখন মাসি-মেসো (দু’জনেই ডাক্তার) আর বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে ভাবলাম অলিম্পিক্সের সময়টায় কলকাতা গিয়ে অটিস্টিক বাচ্চাদের টেবল টেনিস শেখাব।’’ ভবিষ্যতে নিউরো সার্জন হতে চাওয়া ঈশানা তাঁর মাসির মেল করা তথ্য আর বই পড়ে জেনেছিলেন, টেবল টেনিস খেলিয়ে অটিস্টিক বাচ্চাদের জীবনের মূলস্রোতে আনা যায় অনেকটা। সেটা জানার পরে ডোভার লেনের টিউলিপিয়ান্স অ্যাকাডেমিতে অটিস্টিক বাচ্চাদের টিটি খেলা শেখাতে যোগাযোগ করেন সুদূর মার্কিনমুলুক থেকে।

সাইকোলজির ছাত্রী লিলির সঙ্গেও সেরে নেন এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা। বলছিলেন, ‘‘লিলিকে পুরো ব্যাপারটা জানিয়েছি। ও রিও যাওয়ার আগেও কথা হয়েছে। গত সপ্তাহে আমি কলকাতা আসার আগে ওকে রিওর জন্য শুভেচ্ছা জানিয়ে এসেছি। লিলি শুধু অনুপ্রাণিতই করেনি, সাইকোলজির কিছু বিশেষ পরামর্শও দিল।’’

টেবল টেনিস আর সমাজসেবা একসঙ্গে মেলাতে ব্যস্ত এখন ঈশানা। নিজের টাকায় টেবল টেনিস ফর অটিস্টিক (টিটিএফএ) সংস্থা তৈরি করে মায়ের সঙ্গে কলকাতায় এসেছেন। বিশেষ ধরনের টিটি বোর্ড কেনা থেকে কোচ নির্বাচন, সব একার হাতে করেছেন। সেই কোচ ইন্দিবর চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘মেয়েটাকে ছোট থেকে চিনি। সেই পুঁচকে ঈশানা যে অলিম্পিক্স টিমে জায়গা না পাওয়ার যন্ত্রণা এ ভাবে কাজে লাগাবে, ভেবেই গর্ব হচ্ছে। অটিস্টিক বাচ্চাদের টিটি শেখানো বেশ কঠিন কাজ। প্রথম তিন-চার মাস তো পাঁচ মিনিটের বেশি বোর্ডেই রাখা যাবে না ওদের। সেটাও ঈশানা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে রেখেছে।’’

টিউলিপিয়ান্স অ্যাকাডেমির প্রিন্সিপাল রূপি বর্মাও বললেন, ‘‘দারুণ উদ্যোগ। নিজের ব্যর্থতার যন্ত্রণা যে কেউ এ ভাবে কাজে লাগাতে পারে তা আমাদের সবার কাছে শিক্ষণীয়।’’ স্বয়ং ঈশানা কী বলছেন? ‘‘অটিস্টিক বাচ্চাদের সঙ্গে ওদের বাবা-মায়ের হাসি মুখগুলো দেখতে পেলে চার বছর পরের টোকিও অলিম্পিক্সে নামার আত্মবিশ্বাস পেয়ে যাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rio 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE