ভক্ত: যুবভারতীতে খুশির রাত ব্রাজিল সমর্থকদের। নিজস্ব চিত্র
মুখোমুখি দেখা হলেই, অনূর্ধ্ব-১৭ ব্রাজিল দলের গোলরক্ষক গ্যাব্রিয়েল ব্রাজাও থেকে কোচ কার্লোস আমাদেউ—সকলেই বলছেন, ‘‘কীসের প্রতিশোধ? ওই ম্যাচটা তো অনেক দিন আগের। অলিম্পিক্সে সোনা জিতলাম তো জার্মানিকে হারিয়েই।’’
কিন্তু মিনেইরোর সেই ১-৭ হারের ক্ষত ছাই চাপা আগুনের মতোই যে ব্রাজিলীয় ফুটবল জনতার হৃদয়ে ধিকিধিকি ভাবে আজও জ্বলে তা জানিয়ে দিয়ে গেল রবিবারের যুবভারতী।
স্টেডিয়ামে এ দিন এমন কয়েকজন ব্রাজিল সমর্থককে আবিষ্কার করা গেল যাঁরা পনেরো হাজার সাতশো সাতাশ কিলোমিটার দূরের ব্রাজিল থেকে উড়ে এসেছিলেন স্রেফ প্রতিশোধ নিতে।
এদেরই একজন ভিক্টর রোমেরো। ইংরেজিতে চোস্ত। রিও দে জেনিরো-র স্কুলে পড়ান। তাঁর সঙ্গী জোশিমার ডি’সিলভা। তিনি আবার থাকেন বাহিয়া প্রদেশে। ব্রাজিল কলকাতায় অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে জার্মানির বিরুদ্ধে খেলবে শুনেই কলকাতার উড়ানের টিকিট কেটেছিলেন। রবিবার সকালেই প্যারিস, দুবাই হয়ে কলকাতা এসেছেন। উঠেছেন বাইপাসের ধারের এক হোটেলে।
আরও পড়ুন: ওজন বেশি, বাদই যাচ্ছিল নায়ক
সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বলতে চাইলে এগিয়ে এলেন ভিক্টর। বলছিলেন, ‘‘কলকাতা তো ব্রাজিলকেই সমর্থন করে গেল। হোটেলে রুম সার্ভিসের ছেলেটিও স্টেডিয়ামে আসার সময় ব্রাজিল জিতবে বলে শুভেচ্ছা জানিয়ে গেল।’’ অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে সামনে জার্মানি বলে বিমানভাড়া খরচা করে কলকাতায়? এ বার যেন একটু আঁতে ঘা লাগে ব্রাজিলীয় শিক্ষকের। বলেন, ‘‘জেনে রাখুন। ফুটবলটা ব্রাজিলে ধর্ম। তিন বছর আগের জুলাই মাসে সেই ধর্মবিশ্বাসে আঘাত লেগেছিল আমাদের। ওই অভিশপ্ত দিনটা আমরা সবাই ভুলে যেতে চাই। কিন্তু যত দিন না ওদের ফুটবলে সাত গোল দিচ্ছি তত দিন সেই যন্ত্রণা দূর হবে না। ফুটবল আমাদের গর্ব।’’ একটু থেমে জোসিমারকে দেখিয়ে ভিক্টর বলতে থাকেন, ‘‘মিনেইরো-তে সেই অভিশপ্ত রাতে আমরা দু’জনে পাশাপাশি বসে খেলা দেখেছিলাম। কাঁদতে কাঁদতে সে দিন হোটেলে ফিরেছিলাম। তার পরে ঠিক করেছি বিশ্বের যেখানেই জার্মানিকে পাব, সেখানেই ম্যাচ দেখতে উড়ে যাব। যতদিন না জার্মানিকে সাত গোল দিয়ে প্রতিশোধ নিতে পারি। তত দিন শান্তি পাব না। আজ কলকাতা আমাদের সেই প্রতিশোধ নেওয়ার মঞ্চ তৈরি করে দিল কিছুটা। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ওদের হারিয়ে ফলটা ১-১ করে ফেললাম। এত দিন মেক্সিকোতে জেতায় ওরা ১-০ এগিয়ে ছিল।’’
এই দুই বন্ধুর পিছনেই মাঠ ছাড়ছিলেন গুস্তাভো ডস স্যান্টোস ও তাঁর স্ত্রী সুজান। সঙ্গে ব্রাজিল অধিনায়ক ভিটাও এর ভাই কার্লোস। এই তিন জনেই উড়ে এসেছেন দক্ষিণ ব্রাজিলের পারানা প্রদেশের রাজধানী কিউরিটিবা থেকে। ভাঙা ভাঙা ইংরেজিও বলতে পারেন। ব্রাজিলের চোদ্দো নম্বর জার্সি গায়ে মাঠে আসা এই দম্পতি বলছিলেন, ‘‘মিনেইরোজো-র সেই ম্যাচে আমাদের সামনেই বসেছিলেন ক্লোভিস আকোস্তা ফার্নান্দেজ। ব্রাজিল বিশ্বের যেখানেই খেলত সেখানেই ও ম্যাচ দেখতে যেত নকল একটা বিশ্বকাপ নিয়ে। সে দিন আমরা হেরে যাওয়ার পরে ও জার্মানির এক মহিলা সমর্থকের হাতে বিশ্বকাপটা তুলে দিয়ে চলে এসেছিল। তার পরে আর বেশি দিন বাঁচেনও নি। হয়তো ওঁর আত্মা রিও অলিম্পিক্সে সোনা জেতার পর শান্তি পেয়েছে। কলকাতা ওঁকে ফের একবার শান্তি দিল জার্মানিকে হারিয়ে। হোক না অনূর্ধ্ব-১৭ দল। দলটার নাম তো জার্মানি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy