একঝাঁক টেবিল টেনিস খেলোয়াড় বয়স ভাঁড়িয়ে অপেক্ষাকৃত ছোটদের সঙ্গে খেলে রাজ্য ও জাতীয় স্তরে নানা খেতাব জিতেছেন, এই অভিযোগে তদন্তে নেমে এখনও পর্যাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি সিবিআই। সংস্থা সূত্রের খবর, সিবিআইয়ের ‘স্পোর্টস ইন্টিগ্রিটি ইউনিট’ (এসআইইউ)-এর অফিসারের নেতৃত্বে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে শিলিগুড়িতে ওই তদন্ত হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে তদন্ত চালিয়ে শিলিগুড়ির এক টেবিল টেনিস খেলোয়াড়ের অভিভাবকদের জেরা করেও জন্ম সংক্রান্ত যাবতীয় সার্টিফিকেটের মূল নথি হাতে পায়নি সিবিআই। ওই টিটি খেলোয়াড়ের মা একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরতা হলেও তিনি কবে থেকে ‘মাতৃত্বকালীন ছুটি’ নিয়েছিলেন সেই নথি দিতেও গড়িমসি করছেন বলে সূত্রের দাবি। সোমবার, প্রথম দফার তদন্ত শেষে কলকাতায় রওনা হওয়ার মুখে ওই টেনিস তারকার অভিভাবকদের যত দ্রুত সম্ভব ওই যাবতীয় তথ্য জমা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সিবিআই-এর এক অফিসার।
সিবিআই তদন্ত নিয়ে অবশ্য শিলিগুড়ির টেবিল টেনিস মহলে আলোড়ন পড়েছে। নর্থ বেঙ্গল টেবিল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হলেন মান্তু ঘোষ। তিনি অবশ্য গোড়া থেকেই বলে আসছেন, তাঁদের সংগঠন স্বচ্ছতায় বিশ্বাসী। তাই তাঁরা তদন্তকে স্বাগত জানাচ্ছেন। তাঁর স্বামী, অ্যাসোসিয়েশনের সচিব সুব্রত রায় তো কয়েকদিন উদয়াস্ত ছোটাছুটি করেছেন। সোমবার তিনি দাবি করেন, সিবিআইয়ের অনুরোধে সাড়া দিয়ে তিনি বিস্তর ছোটাছুটি করে তাঁদের সবরকম সাহায্য করেছেন। সুব্রতবাবুর দাবি, “তদন্ত সঠিক পথেই এগোচ্ছে।”
পক্ষান্তরে, শিলিগুড়ি টেবিল টেনিস অ্যাকাডেমির কর্তারা তদন্তে আরও গতি আনার পক্ষপাতি। অ্যাকাডেমির সচিব বেদব্রত দত্তের অভিযোগ, “নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত হোক। সকলের সাহায্য নেওয়া হোক। তা বলে কেউ যেন তদন্তের অন্যতম সহায়ক হিসেবে নিজেকে দাবি না-করে সে দিকে সিবিআইকে খেয়াল রাখতে হবে। বয়স ভাঁড়ানোর অভিযোগের সত্যাসত্য প্রকাশ্যে এনে শিলিগুড়ির টিটিকে কলঙ্ক মুক্ত করতে হবে।”
বস্তুত, বয়স ভাঁড়ানো নিয়ে শিলিগুড়ির টিটি মহলে অভিযোগ নতুন কিছু নয়। বছর দুয়েক ধরেই শিলিগুড়ির একজন অভিভাবক জিতেন জানা নানা মহলে চিঠি লিখে ওই অভিযোগ করছেন। একটা সময়ে জিতেনবাবুর ছেলেও টেবিল টেনিস খেলতেন। সেই সুবাদেই তিনি বয়স ভাঁড়ানোর কৌশল সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন বলে দাবি করেছেন। জিতেনবাবু সিবিআই-এর কাছেও একাধিকবার অভিযোগ পাঠিয়েছেন। তার প্রাপ্তি স্বীকার করলেও কোনও তদন্ত এতদিন হয়নি। চলতি বছরের ১৪ এপ্রিল সিবিআই খেলার দুনিয়ার নানা অভিযোগ (বেটিং, ফিক্সিং, বয়সে কারচুপি) নিয়ে তদন্ত করাতে এসআইইউ নামে পৃথক একটি শাখা খোলে। ইতিমধ্যে দিল্লির একজন অভিভাবক সিবিআইকে অভিযোগ করে জানান, অন্তত ২ জন টিটি খেলোয়াড় বয়স ভাঁড়িয়ে খেলে নানা স্তরে খেতাব জিতেছেন। সিবিআই তা নিয়ে তদন্তে নামে। ওই দুজনের মধ্যে একজন শিলিগুড়ির বাসিন্দা। ঘটনাচক্রে, জিতেনবাবুও ১৭ জনের নামে বয়স ভাঁড়িয়ে খেলে খেতাব জেতা শুধু নয়, কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থায় চাকরি করা নিয়েও প্রশ্ন তুলে সিবিআইয়ের দ্বারস্থ হয়েছেন।
এই প্রেক্ষাপটে সিবিআই তদন্তে নামে। প্রথম দফায় শিলিগুড়িতে পৌঁছে সিবিআই ওই টিটি তারকার বাবা ও মায়ের কাছে সন্তানের জন্ম সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র চায়। ওই খেলোয়াড়ের বাবা-মা দুজনেই দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। সিবিআইয়ের তরফে চিঠি পাঠিয়ে খেলোয়াড়ের মায়ের কাছে ‘মাতৃত্বজনিত ছুটি’র নথি চাওয়া হয়। কিন্তু, সেই নথি মেলেনি বলে সিবিআই সূত্রের খবর। এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে ওই খেলোয়াড়ের বাবার দাবি, সন্তানের জন্ম হয়েছিল এক আত্মীয়ের বাড়িতে। সিবিআই অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, যত শীঘ্রই সম্ভব জন্মের সময়ে কোন ধাত্রী ছিলেন, কে নাড়ি কেটেছিলেন সেই ব্যাপারে স্পষ্ট তথ্য দিতে হবে। ওই খেলোয়াড়ের বাবা বলেন, “নথিপত্র সব ঠিকই আছে। তবে আপাতত বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়।”
ঘটনাচক্রে, শিলিগুড়ি থানায় সম্প্রতি টিটি তারকাদের কয়েকজনের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করে বয়স ভাঁড়ানোর একটি অভিযোগ জমা দিয়েছেন জিতেনবাবুও। তাঁর অভিযোগ, বেশ কয়েকজন টিটি তারকা গড়ে ২ থেকে ৩ বছর বয়স কমিয়ে পর্যায়ক্রমে খেতাব জিতেছেন। পরে কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থায় চাকরিও পেয়েছেন অনেকে।
জিতেনবাবু বলেন, “শিলিগুড়ির কয়েকজন শিক্ষিত, উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের অভিভাবক দাবি করেছেন, তাঁদের সন্তান বাড়িতে হয়েছে। শহরের মধ্যে ২৫টি নার্সিংহোম, দু’টি হাসপাতাল রয়েছে। তা হলে এটা বিশ্বাসযোগ্য? শিলিগুড়ি হাসপাতাল লাগোয়া এলাকার একজন অভিভাবকের দাবি, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর সন্তানের জন্ম হয়েছে। এঁরা সকলেই পরে নানা স্তরে টিটিতে জিতে তারকা হয়েছেন। সিবিআই তদন্ত করুক। পুলিশ স্থানীয় স্তরে তদন্ত করে প্রকৃত সত্য বার করুক।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy