Advertisement
১৬ মে ২০২৪
ICC ODI World Cup 2023

ট্রেনের টিকিট হাতে, ম্যাচের টিকিট ভাগ্যের হাতে, বিশ্বকাপ দেখা নিয়ে বিস্তর সমস্যা

বিশ্বকাপের টিকিট কাটতে গিয়ে অসহায় ক্রিকেটপ্রেমীরা। টিকিট কাটতেই পারছেন না অনেকে। অনলাইন সংস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ সমর্থকদের।

Match

টিকিট কাটতে গিয়ে বার বার সমস্যা। —ফাইল চিত্র।

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০২৩ ১৭:৩৩
Share: Save:

অনলাইনে ভারতের ম্যাচের টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার কথা ছিল মঙ্গলবার সন্ধে ৬টা থেকে। তাই সব কাজ মিটিয়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে ল্যাপটপ এবং মোবাইল নিয়ে বসে পড়েছিলেন বাটানগরের সৌরিন সেনগুপ্ত। ফেসবুক, হোয়্যাটসঅ্যাপ তখন দুয়োরানি। চোখ শুধু ‘বুক মাই শো’ অ্যাপে। এরাই আসন্ন ক্রিকেট বিশ্বকাপের টিকিট বিক্রির দায়িত্বে।

টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার পর বুক মাই শোয়ের অ্যাপে দেখাল ‘লাইনে’ (কিউ) দাঁড়াতে হবে, অর্থাৎ অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু এক ঘণ্টার ‘লাইন’ হঠাৎ বেড়ে গেল। বলা হল, অপেক্ষা করতে হবে দু’ঘণ্টা, কিছু ক্ষণ পর বলা হল তিন ঘণ্টা। চেষ্টা ছাড়েননি সৌরিন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ‘লাইনে’ দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে গিয়েছেন। কখনও বলা হল সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। কখনও আবার অ্যাপটিতে সমস্যার কথা জানিয়ে দুঃখপ্রকাশ করা হয়েছে।

সৌরিন শুধু ইডেনের ম্যাচের টিকিট কাটার চেষ্টা করেছিলেন। বাগুইআটির সৌনভ বাগুই ইতিমধ্যেই চেন্নাই এবং আমদাবাদে যথাক্রমে ভারত-অস্ট্রেলিয়া এবং ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দেখার জন্য ট্রেনের টিকিট কেটে বসে আছেন। কিন্তু ম্যাচের টিকিট? অন্তত মঙ্গলবার পর্যন্ত তিনি পারেননি। যত বার টিকিট কাটতে গিয়েছেন, তত বার দেখিয়েছে যে, সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। কখনও আবার সৌরিনের মতোই অভিজ্ঞতা হয়েছে। দেখিয়েছে এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। যে সময় কখনও কমেনি, শুধুই বেড়ে গিয়েছে।

Match

টিকিট কাটতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন দর্শকেরা। —ফাইল চিত্র।

একই ধরনের সমস্যার কথা জানিয়েছেন টালিগঞ্জের সূর্যেন্দ্র বাগচিও। তিনি বললেন, “বুক মাই শোতে অনূর্ধ্ব-১৭ ফুটবল বিশ্বকাপেও এরকম অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল। তবে সে বার অন্তত টিকিটটা কাটতে পেরেছিলাম।’’ তিনি আরও একটি সমস্যার কথা বললেন। তাঁর কথায়, ‘‘এ বার তো টিকিট কাটার জন্য এক বার সিট বুক করার পর আবার সিট বুক করতে পাঠিয়ে দিচ্ছে। বার বার একই জিনিস হচ্ছে।”

বুধবারেও সমস্যার সমাধান হয়নি। সৌনভ বললেন, “কাল হয়নি, আজকেও চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু দেখাচ্ছে, ভারত-আফগানিস্তান ম্যাচ ছাড়া বাকি সব ম্যাচের টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। আর ওই ম্যাচের টিকিট থাকলেও সেটা কাটা যাচ্ছে না। সিট বুক করার পর আবার ফিরিয়ে দিচ্ছে সিট বেছে নেওয়ার পেজে।” একই অবস্থার কথা জানালেন কালিকাপুরের অভ্রদীপ্ত সিন্‌হা।

সাধারণত ক্রিকেট বিশ্বকাপের টিকিট বিক্রি শুরু হয়ে যায় প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার এক বছর আগে থেকে। কিন্তু এ বারে সেটা হয়নি। বিশ্বকাপের সূচি ঘোষণা করা হয়েছে তিন মাস আগে। এক মাস পরে আবার সেই সূচি বদলায়। ন’টি ম্যাচের দিন বদল হয়। সেই তালিকায় রয়েছে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচও। ফলে টিকিট বিক্রি শুরুই হয় অনেক পরে।

আইসিসির তরফে বলা হয়েছিল তাদের সাইটে ১৫ অগস্ট রেজিস্ট্রেশন করতে। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন করার পর কোনও আইডি নম্বর দেওয়া হয়নি। রেজিস্ট্রেশনের পর আইসিসি যে মেল পাঠিয়েছে, সেটাও অনেকের কাছেই যায়নি। ফলে বোঝাই যায়নি যে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে কি না।

রেজিস্ট্রেশন নিয়ে সবথেকে হাস্যকর ব্যাপার হল, অনেক পরে জানা যায় যে, এটা না করেও দিব্যি টিকিট কাটার ‘লাইনে’ দাঁড়িয়ে পড়া যাবে। ফলে রেজিস্ট্রেশন কেন করতে বলা হয়েছিল, সেটা বোঝা কঠিন।

জানানো হয়েছিল যে, মঙ্গলবার থেকে ভারতের ম্যাচের টিকিট কাটার ক্ষেত্রে যাঁদের মাস্টার কার্ড (বিশেষ সংস্থার এটিএম কার্ড) আছে, তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

সৌরিনের আশঙ্কা, এর ফলে আগামী দিনে চাপ আরও বাড়বে। তিনি বললেন, “মঙ্গলবার তো শুধু যাঁদের মাস্টার কার্ড রয়েছে, তাঁরা টিকিট কাটছিলেন। এরপর তো সবাই চেষ্টা করবে। তখন চাপ আরও বাড়বে। আদৌ টিকিট পাব কি না জানি না।” বাগুইআটির সমিত বাগুই অবশ্য মনে করছেন, সুবিধা হতে পারে আগামী দিনে। তিনি বললেন, “এখন তো সবাই এক সঙ্গে অ্যাপটিতে ঢুকে টিকিট কাটার চেষ্টা করছেন। পরে মাঠ অনুযায়ী ভাগ হয়ে যাবে। তাতে চাপ কিছুটা কমবে বলেই মনে হয়। তখন হয়তো টিকিট কাটতে পারব। ভারতের ম্যাচের টিকিট পাব কি না জানি না, তাই ইডেনে বাংলাদেশ বনাম নেদারল্যান্ডস ম্যাচের টিকিট কেটে রেখেছি। বিশ্বকাপের অন্তত একটা ম্যাচ তো দেখতে পাব।”

মঙ্গলবার ভারতের ম্যাচের প্রথম দফার টিকিট বিক্রি শুরু হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছিল সব টিকিট। বুক মাই শো-এর ওয়েব সাইটে প্রি-সেল উইন্ডো খোলার সঙ্গে সঙ্গে ক্রিকেটপ্রেমীরা টিকিট কেনার চেষ্টা শুরু করে দেন। সংশ্লিষ্ট সংস্থার এক কর্তা জানিয়েছেন, ‘‘আইসিসি-র অন্যতম স্পনসর একটি সংস্থার ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ইন্ডিয়া কার্ড বা ইন্টারন্যাশনাল কার্ড যাঁদের রয়েছে, শুধু তাঁরাই প্রথম দিন টিকিট কেনার সুযোগ পেয়েছেন। প্রত্যেক ক্রেতার জন্য দুটো করে টিকিট বরাদ্দ ছিল। এক ঘণ্টার মধ্যেই এ দিনের সব টিকিট শেষ হয়ে গিয়েছে।’’

কিন্তু টিকিট যাঁরা পাননি, তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন যে, কারা টিকিট কাটল, কী ভাবেই বা কাটল? সমিত বললেন, “আমার তো মনে হয় সাধারণ মানুষ টিকিট পায়নি। কেউ অন্য কোনও ভাবে সব টিকিট কেটে নিয়েছে। সেই কারণেই সাধারণ মানুষ টিকিট পায়নি। আমার পরিচিত কেউ টিকিট পায়নি।” তাঁর ইঙ্গিত দালালচক্রের দিকে। সৌরিন মঙ্গলবার বাংলার ক্রিকেট সংস্থার অফিসে ফোন করে জানতে চেয়েছিলেন যে, অফলাইন টিকিট বিক্রি হবে কি না। কিন্তু কেউ ফোন ধরেননি। বাংলার ক্রিকেট সংস্থা অফলাইনে টিকিট বিক্রি করবে কি না সেটা এখনও জানা জানায়নি। আগামী দিনে সেই ব্যবস্থা করা হবে কি না তা-ও স্পষ্ট নয়। সব মিলিয়ে ট্রেনের টিকিট কেটে বসে থাকা ক্রিকেটপ্রেমীরা ম্যাচের টিকিটের আশা ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ICC ODI World Cup 2023 BCCI ICC tickets
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE