Advertisement
১৭ মে ২০২৪
olympics

Sir Mo Farah: চার বারের অলিম্পিক্স চ্যাম্পিয়নকে বিক্রি করা হয়েছিল, যেতে পারে ব্রিটেনের নাগরিকত্ব

সোমালিয়াতে ১৯৮৩ সালে জন্ম হয় ফারাহর। তাঁর যখন চার বছর বয়স, সেই সময় সোমালিয়ার গৃহযুদ্ধে মারা যান তাঁর বাবা। জানা গেল আসল তথ্য।

—ফাইল চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২২ ২০:০০
Share: Save:

তিনি ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা অ্যাথলিট। ঝুলিতে রয়েছে চারটি অলিম্পিক্স পদক। চারটিই সোনা। লন্ডন এবং রিয়ো অলিম্পিক্সে সোনাজয়ী মো ফারাহ নিজের জীবনের অনেকগুলো সত্যি সামনে আনলেন। তার মধ্যে সব চেয়ে অবাক করা তথ্য হল তাঁর নাম মো ফারাহ নয়।

তিনি জানিয়েছেন জন্মের সময় তাঁর নাম ছিল হুসেইন আব্দি কাহিন। সোমালিয়াতে জন্ম হয় তাঁর। সেখান থেকে বেআইনি ভাবে মাত্র ন’বছর বয়সে তাঁকে পাচার করে দেওয়া হয়েছিল ব্রিটেনে। ভুয়ো পরিচয়ে সে দেশে কাজ করতেন ফারাহ। ৩৯ বছরের এই দৌড়বিদ বলেন, “সবাই আমাকে যে মানুষ বলে জানে, আমি সেই মানুষ নই। এটাই সত্যি। যাই মাসুল দিতে হোক, আমাকে সত্যিটা বলতেই হবে।”

সোমালিয়াতে ১৯৮৩ সালে জন্ম হয় ফারাহর। তাঁর যখন চার বছর বয়স, সেই সময় সোমালিয়ার গৃহযুদ্ধে মারা যান তাঁর বাবা। ফারাহ এবং তাঁর যমজ ভাই হাসানকে বাঁচাতে তাঁদের মা পাঠিয়ে দেন প্রতিবেশী দেশ জিবৌতিতে। সেখান থেকে ফারাহকে ব্রিটেনে বিক্রি করে দেওয়া হয়। যাঁর পরিচয়ে তাঁকে বিক্রি করা হয় সেই আসল ফারাহ এখনও সোমালিয়াতেই থাকেন। তিনি কখনও ব্রিটেনে যাননি।

ইংল্যান্ডের এক সংবাদমাধ্যম একটি তথ্যচিত্র তৈরি করে। সেখানেই ফারাহ সম্পর্কে এই তথ্য উঠে আসে। সোনাজয়ী অ্যাথলিটের আশঙ্কা, এই তথ্য সামনে আসার পর তাঁর ব্রিটিশ নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হবে কি না। ফারাহ বলেন, “আমি অতীতে যাই বলে থাকি, এটা সত্যি যে আমার বাবা-মা কেউ কখনও ব্রিটেনে থাকেনি। আমার যখন চার বছর বয়স, সেই সময় গৃহযুদ্ধে বাবা মারা যায়। আমাদের গোটা পরিবার এদিক ওদিক ছড়িয়ে যায়। আমার মনের মধ্যে সব সময় চলত যে, আমি কিছু লুকিয়ে রাখছি। মনে হত কখনও বলতে পারব না কী ঘটেছিল।”

প্রায় ৩০ বছর ধরে নিজের মধ্যে একটা সত্যি লুকিয়ে রেখেছিলেন ফারাহ। সেই কথা বলতে পেরে অনেকটা হাল্কা লাগছে বলে জানান অলিম্পিক্স সোনাজয়ী। নকল পরিচয়পত্র নিয়ে ব্রিটেনের একটি পরিবারে কাজ করতেন তিনি। যে মহিলা তাঁকে কিনেছিলেন, তিনিই ফারাহর মা হিসাবে পরিচয় দিতেন সব জায়গায়। ফারাহ বলেন, “ওই মহিলার স্বামী ছিল। তাঁর পরিবারের নাম ফারাহ। সেই পরিবার অপেক্ষা করছিল তাদের বড় ছেলে মহাম্মদের জন্য। কিন্তু আমাকে বাড়ি আনে ওই মহিলা। ইংল্যান্ডে আমার এক মাত্র আত্মীয়ের সঙ্গে সব যোগাযোগ নষ্ট করে দেয়। সেই সময় আমি বুঝতে পারি যে বিপদে পড়েছি।”

ফারাহকে দিয়ে বাড়ির কাজ করানো হত। তাঁকে ভয় দেখানো হত, যদি প্রতিবাদ করে তা হলে সবাইকে সত্যি কথা জানিয়ে দেওয়া হবে। ফারাহ বলেন, “খাবার চাইলে আমাকে সেই সব কাজ করতেই হত। পরিবারকে ফের দেখতে হলে আমাকে সেই সব কাজ করতে হত। কষ্ট হলে শৌচাগারে নিজেকে বন্ধ করে কাঁদতাম।”

তাঁর দু’বছর পড়াশোনা নষ্ট হয়। এগারো বছর বয়সে ফেল্টহাম কমিউনিটি কলেজে ভর্তি করানো হয় তাঁকে। ঠিক মতো ইংরাজি বলতে পারতেন না ফারাহ। সেই সময়ে তাঁকে পড়াতেন সারাহ রেনি। তিনি বলেন, “আমরা বার বার ফারাহর পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে চাইতাম, কিন্তু কখনও ওর পরিবার আমাদের সঙ্গে দেখা করেনি। আমরা বুঝতে পারতাম যে, ওর যত্ন নেওয়া হত না। আমাদের চিন্তা ছিল ফারাহকে নিয়ে।” ফারাহ জানিয়েছেন, তিনি খুব ভয়ে ভয়ে থাকতেন। তিনি এক মাত্র ভরসা করতেন শারীরশিক্ষার শিক্ষক অ্যালান ওয়াটকিনসনের উপর। অ্যালান বলেন, “ফারাহ আমাকে বলেছিল যে, ও যার বাড়িতে থাকে সেটা ওর পরিবার নয়। ওর নাম মো ফারাহ নয় সেটা আমাকে বলেছিল। আমাকে সবই বলেছিল ফারাহ। চমকে গিয়েছিলাম ওর কথা শুনে।”

স্কুলেই ফারাহর দৌড় শিক্ষা চলতে থাকে। ১৪ বছর বয়সে লাতভিয়াতে একটি প্রতিযোগিতায় সুযোগ পান তিনি। সেই সময় জানা যায় বিদেশে যাওয়ার জন্য যে কাগজপত্র প্রয়োজন তা তাঁর নেই। অ্যালান তাঁর জন্য ব্রিটিশ নাগরিকত্বের ব্যবস্থা করেন। সেই কাগজপত্র নিয়েই বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় নামেন ফারাহ। তিনি চান না তাঁর প্রাক্তন শিক্ষক কোনও বিপদ হোক। ফারাহ বলেন, “আমি জানতাম আমি মহাম্মদ ফারাহ। আমার মাথায় এটাই থাকত। দেশ আমাকে সেই নামেই চিনত। আমার মনে হয় না আমি বা আমার স্কুল কোনও অন্যায় করেছি।” আইনি পরামর্শ নেওয়ার পর চমকে যান ফারাহ। তিনি জানতে পারেন, ব্রিটিশ নাগরিকত্ব নেওয়ার জন্য আইনের চোখে ধুলো দেওয়া হয়েছে। এর অর্থ তাঁর ব্রিটিশ নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হতে পারে।

ফারাহ আত্মজীবনীও লিখেছেন। ২০১৩ সালে সেই আত্মজীবনীতে ফারাহ বলেন যে তাঁর জন্ম সোমালিয়াতে হয়েছিল। অনেক ছোট বেলায় তাঁর মা-বাবা এবং দুই ভাইয়ের সঙ্গে ব্রিটেনে চলে আসেন তাঁরা। ফারাহর স্ত্রী তানিয়ার সঙ্গে তাঁর পরিচয় স্কুলে। ২০১০ সালে বিয়ে করার আগে ফারাহ তাঁকে সব সত্যি বলেছিলেন। ফারাহ তাঁর এক সন্তানের নাম রেখেছেন হুসেইন, যেটা তাঁর আসল নাম। সোমালিয়া গিয়ে তিনি তাঁর মায়ের সঙ্গেও দেখা করেন। তাঁর মা আইশা জানতেনই না যে ফারাহকে ইংল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আইশা বলেন, “আমরা সবাই মরে যেতাম। শুধু বোমার আওয়াজ শুনতাম। আমাকে কেউ বলেনি ফারাহকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে ফোন ছিল না। সব কিছু ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে আমার পরিবারের কেউ ছেলেকে বিক্রি করে দিতে পারে।”

আসল ফারাহর দৌড়ে কোনও উৎসাহ নেই। ২০১২ এবং ২০১৬ সালের অলিম্পিক্সে সোনা জেতা ফারাহ আসল ফারাহকে বলেন, “আমি তোমাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি তোমার নাম ব্যবহার করেছি।” আসল ফারাহ বলেন, “ঠিক আছে। তুমি আমার ভাই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE