মহেন্দ্র সিংহ ধোনির রান আউটের সেই মুহূর্ত। —ফাইল চিত্র
মাঝের চারটে বছরে অনেক কিছু বদলে গিয়েছে। অবসর নিয়েছেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। ভারতের নেতৃত্ব বিরাট কোহলির হাত থেকে গিয়েছে রোহিত শর্মার হাতে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের কাছে ১০ উইকেটে হারতে হয়েছে ভারতকে। আবার এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে রেকর্ড ব্যবধানে হারিয়েছে ভারত। শুধু পুরনো হয়নি একটি স্মৃতি। বলা যেতে পারে একটি দুঃস্বপ্ন। সেই দুঃস্বপ্ন এখনও তাড়া করে বেড়াচ্ছে ভারতীয় দলকে। চলতি এক দিনের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউ জ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে নামার আগে আরও এক বার ফিরে আসছে সেই দুঃস্বপ্নের স্মৃতি।
সেটিও ছিল একটি বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল। ২০১৯ সালের। সেবারও বিপক্ষে ছিল নিউ জ়িল্যান্ড। ইংল্যান্ডের ম্যঞ্চেস্টারে প্রথমে ব্যাট করতে নেমেছিল নিউ জ়িল্যান্ড। ৫০ ওভারে ২৩৯ রান করেছিলেন কেন উইলিয়ামসনেরা। ভারতীয় বোলারেরা ম্যাচ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছিলেন। ফলে বেশি রান করতে পারেনি নিউ জ়িল্যান্ড। কিন্তু উইলিয়ামসনদের খেলা দেখে বোঝা গিয়েছিল, ভারতও সহজে এই রান তাড়া করতে পারবে না। হয়েছিলও তাই। সেই বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে ৫টি শতরান করা রোহিত শর্মা রান পাননি। ধসে পড়েছিল ভারতের টপ অর্ডার। মাত্র ৭০ রানে ৫ উইকেট পড়ে গিয়েছিল ভারতের। তার পরে বৃষ্টির কারণে আর সে দিনের খেলা হয়নি। পরের দিন রিজার্ভ ডে-তে খেলতে নামে ভারত।
দ্বিতীয় দিন ভারতের ইনিংসকে টানেন রবীন্দ্র জাডেজা ও মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। দেখে মনে হচ্ছিল, কেরিয়ারের শেষ দিকে আরও এক বার দেখা যাবে ফিনিশার ধোনিকে। ৭৭ রান করে জাডেজা আউট হওয়ার পরে ধোনির কাঁধেই ছিল সব দায়িত্ব। শুরুতে ধীরে খেললেও শেষ দিকে হাত খোলা শুরু করেন তিনি। নিজের অর্ধশতরানও পূর্ণ করেন মাহি।
ম্যাচের ৪৯তম ওভারের শুরুটা ধোনি করেন লকি ফার্গুসনকে ছক্কা মেরে। সেই এক ছক্কায় আশা বেড়ে যায় ভারতীয় শিবিরের। গা ঝাড়া দিয়ে ওঠেন ভারতীয় সমর্থকেরাও। কারণ, ধোনির ব্যাটে আগেও এই রকম অনেক ইনিংস দেখা গিয়েছে। আবার কি দেখা যাবে? সেই আশা দেখা গিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ স্বপ্নভঙ্গ!
৪৯তম ওভারের তৃতীয় বল স্কোয়্যার লেগে খেলে দু’রান নেওয়ার চেষ্টা করেন ধোনি। সঙ্গে ছিলেন ভুবনেশ্বর কুমার। এক রান নিয়ে যত ক্ষণে ধোনি দ্বিতীয় রানের জন্য দৌড় শুরু করেছেন তত ক্ষণে বল ধরে উইকেটের দিকে ছুড়ে দিয়েছেন মার্টিন গাপটিল। ধোনি ক্রিজে ঢোকার আগেই বাউন্ডারি থেকে সেই থ্রো সরাসরি উইকেটে গিয়ে লাগে। ধোনি রান আউট হয়ে যান। ৫০ রানে আউট হয়ে ধোনি যখন সাজঘরের দিকে ফিরছেন তখন নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারেননি তিনি। যে ধোনিকে চিরকাল আবেগ-হীন দেখা গিয়েছে, সেই তিনি কেঁদে ফেলেন। সাজঘরে বসে কাঁদতে দেখা যায় রোহিতকে। তাঁরা বুঝে গিয়েছিলেন, ভারতের আশা শেষ হয়ে গিয়েছে।
তখনও ৯ বলে ২৪ রান দরকার ছিল ভারতের। ধোনি থাকলে হয়তো হয়ে যেত। কিন্তু ধোনি আউট হওয়ার পরে ২২১ রানে অল আউট হয়ে যায় ভারত। ১৮ রানে ম্যাচ হারে ভারত। গাপটিলের একটি থ্রো শেষ করে দেয় ভারতের সব স্বপ্ন।
এ বারের বিশ্বকাপে সেই ধোনিও নেই আর গাপটিলও নেই। দু’টি দলের পরিস্থিতি আলাদা। এক দিকে যখন ভারত টানা ৯ ম্যাচ জিতে সেমিফাইনালে উঠেছে, অন্য দিকে তখন নিউ জ়িল্যান্ডকে শেষ ম্যাচ জিতে শেষ চারে উঠতে হয়েছে। ২০০৩ সালের পর এ বারই প্রথম আইসিসি প্রতিযোগিতায় নিউ জ়িল্যান্ডকে হারিয়েছে ভারত। সময় আলাদা। মাঠ আলাদা। পরিস্থিতি আলাদা। কিন্তু চার বছর পরেও সেই রান আউটের ভূত বার বার ফিরে আসছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy