জীবনযুদ্ধ: করোনায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় ছিলেন রোহিত। টুইটার
করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন ভারতের ডেভিস কাপ টেনিস দলের অধিনায়ক রোহিত রাজপাল। অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, ২ মে রোহিত তাঁর ভাইকে বলেন, পরিবারের সবাইকে এখনই যেন তাঁর ঘরের বাইরে ডাকা হয়। শেষ বার সকলকে দেখতে চান। ভাই তখন তাঁকে হাল না ছাড়ার অনুরোধ করেন। শেষ পর্যন্ত মারণ ভাইরাসকে হারিয়ে রোহিত
সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
তবে একটা সময় তাঁর পরিবারকে দু’দিন উদভ্রান্তের মতো ঘুরতে হয়েছে হাসতাপালে অক্সিজেন-সহ একটা শয্যার ব্যবস্থা করতে। কিন্তু তাঁদের শত অনুরোধেও কাজ হয়নি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাড়ির পরিচারক বিরজু মারা যাওয়ার পরেই রোহিত বুঝতে পারেন, তাঁর পরিবারেরও কোনও সদস্য এই ভাইরাসে
সংক্রমিত হতে পারেন।
২৫ এপ্রিল ৫০ বছর বয়সি রোহিত নিশ্চিত হন, তিনি নিজেই করোনায় আক্রান্ত। একই সঙ্গে সংক্রমিত হন তাঁর বাবা। প্রথমে তাঁর খুব বেশি জ্বর না এলেও ক্রমে শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটতে শুরু করে। বহু ক্ষমতাশালী মানুষকে ফোনে অনুরোধ করেও দিল্লি বা গুরুগ্রামের কোনও হাসপাতালে শয্যার ব্যবস্থা করতে পারেননি। চিকিৎসার জন্য রেমডেসিভির ইঞ্জেকশনও পাওয়া যাচ্ছিল না। পাওয়া গেলেও তার দাম ছিল আকাশছোঁয়া। ৩০০০ টাকার রেমডিসিভিরের জন্য কেউ কেউ চেয়েছিল ৬০ হাজার টাকা!
এক রাজনৈতিক দলের রাজ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক, দিল্লি টেনিস সংস্থার প্রেসিডেন্ট, জাতীয় টেনিস সংস্থার কোষাধ্যক্ষ এবং কয়েকশো কোটি টাকার মালিক রোহিত তখন বুঝতে পারেন, জীবনে অর্থ বা ক্ষমতাই সব নয়। এই সময়ে হঠাৎ তাঁর রাজনৈতিক দলের সহকর্মী ফোন করে একটি হাসপাতালের শয্যার ব্যবস্থা করার কথা জানান। কিন্তু অক্সিজেন ছাড়া হাসপাতালে পৌঁছনোর মতো ক্ষমতা তাঁর ছিল না।
শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। রেমডিসিভিরের ব্যবস্থাও হয়। ১১ দিন হাসপাতালে ছিলেন তিনি। সেই অভিজ্ঞতার কথা জানান রোহিত, ‘‘এত মানুষ মারা গেছেন। সবার জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেন নেই। আমি আর বাবা নিশ্চয়ই ভাল কিছু করেছিলাম। তাই এ যাত্রা বেঁচে ফিরেছি। চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। ওরা সবাই বারবার আশ্বস্ত করেছেন, আমরা সুস্থ হয়ে যাব।’’ রোহিতের আরও উপলব্ধি, ‘‘কতদিন পরে আমি এত শান্তিতে খাবার খেলাম, কেউ তা বিশ্বাসও করতে পারবেন না। ভুলেই গিয়েছিলাম খাবারের স্বাদ কেমন। এখন সাধারণ ডাল-রুটিও অমৃতের মতো মনে হচ্ছে।’’
তাঁর একটাই আক্ষেপ, ‘‘সকলকে সাহায্য করাটাই আমার অভ্যাস। কিন্তু বিরজুর (পরিচারক) জন্য কিছু করতে পারলাম না। ওর জন্য হাসপাতালে একটা শয্যার ব্যবস্থা করতে পারিনি। আমার ক্ষেত্রেই যদি এত সমস্যা হয়, তা হলে সাধারণ মানুষ কি ভাবে সব সামলাচ্ছেন সেটা এখন
অনুভব করতে পারছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy