পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া কোয়ার্টার ফাইনালে শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া জেতায় পরের বৃহস্পতিবার মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের কাজটা যে কঠিন হল, সন্দেহ নেই। কিন্তু বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ দেখে পাঁচটা ব্যাপার চোখে পড়েছে যেগুলো ভারত ঠিকটাক করলে ক্লার্কের টিমকে হারানো অসম্ভবও হবে না।
• শুরুতেই ভাঙো ওয়ার্নার-ফিঞ্চ জুটি: বিশেষ করে ওয়ার্নার। ভারতের বিরুদ্ধে ওর রেকর্ড এমনিতেই মারাত্মক। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে আউট না করা গেলে কিন্তু দুঃখ থাকবে। ওয়ার্নারের জন্য করতে হবে ব্যাক অব দ্য লেংথ ডেলিভারি। শর্ট করলে মেরে পাট করে দেবে। ফিঞ্চকেও শর্ট করা যাবে না। ওকে ড্রাইভের লেংথের একটু পিছনে বল রাখতে হবে। মানে স্টাম্প থেকে ছ’ থেকে আট মিটারের একটা এরিয়ায়।
সিঙ্গলস নিতে দিও না স্মিথকে: ভাল করে বললে দু’জন অস্ট্রেলিয়ার খেলাটা তৈরি করে। স্টিভ স্মিথ আর মাইকেল ক্লার্ক। পুণে ওয়ারিয়র্সে থাকার সময় দু’জনের সঙ্গেই আমি সময় কাটিয়েছি, জানিও যে ওরা নেমে বড় শটের দিকে যেতে চায় না। স্মিথ-ক্লার্ককে যদি সহজে সিঙ্গলস নিতে দেওয়া হয়, তা হলে কিন্তু সমস্যা বাড়বে। আমার মতে, পয়েন্ট, মিড উইকেট, কভার আর স্কোয়ার লেগ এই চারটে জায়গায় জাডেজা-রাহানে-রোহিতদের মতো সেরা ফিল্ডারদের রেখে দিক ধোনি। যারা স্মিথদের সিঙ্গলস নেওয়া আটকাবে। ওরা বড় শট নিক। ছয় মারুক। কিন্তু ফিল্ড সরানো যাবে না।
• ম্যাক্সওয়েলকে শর্ট করো: শুরুর দিকে যেমন ওয়ার্নার থাকবে, তেমন মিডল ওভার্সে থাকবে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। যে দশটা ওভার থাকলে ম্যাচ শেষ। আমার মতে ম্যাক্সওয়েল ক্রিজে এলে ওকে শর্ট বল করে যেতে হবে। কানের পাশ দিয়ে বল বার করতে হবে উমেশ-শামিকে। আমি দেখেছি, নেমেই ও বাউন্সার খেলতে পছন্দ করে না। ওটা ওর একটা দুর্বলতা। আর দ্বিতীয়ত, স্পিনারদের দিয়ে যদি আক্রমণ করা হয়, ড্রাইভের লেংথে ফেলে যাও। দেখতে হবে, হাঁটু মুড়ে বসে যাতে সুইপ বা রিভার্স সুইপ মারতে না পারে।
তিরিশ ওভারে স্কোরটা হোক ১২০-২: ধোনিদের ইনিংসের স্কোরের কথা বলছি আর এতে অবাক হবেন না। ওয়ান ডে ক্রিকেটটাও এখন এতটাই টি-টোয়েন্টি প্রভাবিত যে, সবাই জানে শেষ কুড়ি ওভারে ঠিক ১৬-১৭০ উঠে যাবে। অবশ্যই উইকেট হাতে থাকলে। শুরুতে স্টার্ক-জনসনদের উইকেট দেওয়া তো যাবেই না, দেখতে হবে তিরিশ ওভার পর্যন্ত যত কম উইকেট হারানো যায়। তাই ওই স্কোরটা বললাম। ওটা হলে পরের কুড়ি ওভারে আরও ১৬০ মতো উঠে শেষ পর্যন্ত ২৮০ থেকে তিনশো উঠে যাবে। আর নকআউট ম্যাচে স্কোরবোর্ডের চাপ থাকে। অন্য ম্যাচে তিনশো তুলে যে কাজ হয়, নকআউটে ২৬০-ই যথেষ্ট। আজ দেখলেন না পাকিস্তানের ২১৩ তুলতে গিয়ে একটা সময় কী রকম চাপে পড়েছিল অস্ট্রেলিয়া?
• টস এবং ক্যাপ্টেন্সি: প্রথমটা জিততে ভাগ্যের সাহায্য দরকার। এ সব বড় ম্যাচে টস জেতাটা অসম্ভব জরুরি। কারণ আগে ব্যাট করে নেওয়া এ সব ম্যাচে সব সময় ভাল। জিতে গেলে তো কথাই নেই। তবে হারলেও দ্বিতীয়টা ওকে আগুনে মেজাজে করে যেতে হবে। অধিনায়কত্ব নিয়ে ধোনির কাছে অনুরোধ, প্লিজ এই আক্রমণাত্মক মেজাজটা থেকে সরে এসো না। যেটা ও এখন অসাধারণ করছে। গালাগাল করলেই আক্রমণাত্মক মেজাজ দেখানো হয় না। স্রেফ দু’একটা মুভেই হয়। যেমন ধরুন, অশ্বিন মার খেলেও যদি ধোনি ওর জন্য একটা স্লিপ রেখে দেয়, তা হলে বোলাররা বুঝে যাবে ক্যাপ্টেন কী চাইছে। আর প্রতিপক্ষ বুঝবে, তাদের মারমার-কাটকাটে ভারত মোটেও কাঁপছে না।
পরিষ্কার বলছি, বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জিততে গেলে এগুলোর সব ক’টা ঠিকঠাক হওয়া দরকার। কিন্তু এটাও বলব, ভারতই শুধু চাপে থাকবে বললে ভুল হবে। অস্ট্রেলিয়ার উপরও চাপ থাকবে। লোকে বলছে, ওরাই সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন। ওরা নিজেরাও জানে কাগজ-কলমে ওরাই সেরা। আর ঘরের মাঠে খেলার যেমন সুবিধে থাকে, তেমন অসুবিধেও থাকে। আর ওরা যে চাপে আছে তার প্রমাণ পাকিস্তান ম্যাচ জিতে উঠে সমর্থকদের কাছে সেমিফাইনালের সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড ভরিয়ে ফেলার আবেদন করা। ওরা আসলে ভয় পাচ্ছে এটা ভেবে যে সে দিন যদি এসসিজিতে ভারত সমর্থকরা থাকেন আশি শতাংশ আর ওদের কুড়ি, তা হলে তো গেল।
তখন তো ঘরের মাঠই ব্যুমেরাং হয়ে যেতে পারে!
ম্যাক্সওয়েলের আবিষ্কার পুল-কাট
কাট, না পুল? না কি পুল-কাট? গ্লেন ম্যাক্সওয়েল শুক্রবার পাকিস্তানের ওয়াহাব রিয়াজের বলে যে শটে বাউন্ডারি হাঁকালেন সেটা আসলে কী? জোর আলোচনা সোশ্যাল মিডিয়ায়। ৩১তম ওভারে ওয়াহাবের বাউন্সারে হঠাত্ পুল করার চেষ্টা করতে গিয়ে বল ব্যাটের কানায় লেগে পয়েন্ট বাউন্ডারিতে চার হয়ে যায়। এর পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র ব্যঙ্গ, এটা কি ম্যাক্সওয়েলের নতুন কোনও শট? যার নাম পুল-কাট? আদতে অবশ্য রিয়াজের দ্রুতগতির শর্ট বলের সামনে চোখ বন্ধ করে পুল করার ঢঙে ব্যাট চালিয়ে দিয়েছিলেন ম্যাক্সওয়েল। অদ্ভুত ভাবে বল পয়েন্ট দিয়ে চার হয়ে যায়।
দর্শক তাতাতে ক্লার্কের টুইট
সপ্তাহখানেক আগেই দামামা বেজে গেল বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়া সেমিফাইনালের যুদ্ধের। এ দিন খোদ অজি ক্যাপ্টেন মাইকেল ক্লার্কই যা শুরু করলেন একটি টুইট দিয়ে। ‘অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটপ্রেমীদের বলছি। বৃহস্পতিবার এসসিজি সোনার রঙে (অস্ট্রেলিয়ার জার্সির রঙ) রাঙিয়ে দিন। আপনাদের সমর্থন চাই। জামা, টুপি, পতাকা মাঠে নিয়ে আসুন।” শুক্রবার কোয়ার্টার ফাইনালে অ্যাডিলেডে মাত্র সাড়ে পঁয়ত্রিশ হাজারের মতো দর্শক এসেছিলেন। বিশ্বকাপে টানা এগারো ম্যাচ জেতা ভারতীয় দল তুলনায় প্রায় সমর্থনের বন্যায় ভাসছে। ঘরের মাঠে সমর্থকদের উজ্জীবিত করতেই তাই হয়তো অজি অধিনায়কের এই টুইট। অবশ্য শুধু ক্লার্কই নন, ডেভিড ওয়ার্নারের মতো আরও কয়েক জনকে দেখা গিয়েছে এ ভাবেই টুইট করে দর্শকদের তাতাতে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy