Advertisement
১৬ মে ২০২৪

স্বপ্নের সোনা পেয়েও আফশোস মিটছে না অরবিন্দের

রুপো তাঁর জীবনে নতুন কিছু নয়। সেই ২০১৩-তে অ্যাথেলেটিক মিটেই দ্বিতীয় হয়ে রুপো পেয়েছিলেন। পরের বছর ব্রোঞ্জ। তার পরেই সোনার স্বপ্নটা তাঁকে পেয়ে বসে। কিন্তু সে বারও সেই স্বপ্ন সত্যি হয়নি। এ বারে হল।

জয়ী: অরবিন্দ সিংহ। নিজস্ব চিত্র

জয়ী: অরবিন্দ সিংহ। নিজস্ব চিত্র

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৭ ১২:৩০
Share: Save:

সোনার স্বপ্ন সত্যি হল অরবিন্দের।

সালটা ছিল ২০১৫। রাজ্য অ্যাথেলেটিক মিটে ডিসকাস থ্রো-তে রুপো পেয়ে ভেঙে পড়েছিল রেলশহর আদ্রার কমলাস্থান এলাকার বাসিন্দা অরবিন্দ সিংহ।

রুপো তাঁর জীবনে নতুন কিছু নয়। সেই ২০১৩-তে অ্যাথেলেটিক মিটেই দ্বিতীয় হয়ে রুপো পেয়েছিলেন। পরের বছর ব্রোঞ্জ। তার পরেই সোনার স্বপ্নটা তাঁকে পেয়ে বসে। কিন্তু সে বারও সেই স্বপ্ন সত্যি হয়নি। এ বারে হল।

শনিবার কলকাতার সাই কমপ্লেক্স-এ ৬৭তম রাজ্য অ্যাথেলেটিক্স মিট-এ ৪৩.৫৪ মিটার ডিসকাস থ্রো করে স্বর্ণপদক পেয়েছেন অরবিন্দ।

কিন্তু মাঝে রয়ে গিয়েছে একটা আস্ত বছর। ২০১৫-য় রুপোর পদক নিয়ে এসে অনুশীলনে সমস্ত মনপ্রাণ ঢেলে দিয়েছিলেন অরবিন্দ। সেই পরিশ্রমের ফল ফলেছিল সে বারের স্টেট গেমস-এ।

বেঙ্গল অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন প্রতি চার বছরে স্টেট গেমস আয়োজন করে। ২০১৬-তে ছিল সেই প্রতিযোগিতা। সেখানে ৪৪.২০ মিটার ডিসকাস ছুঁড়ে অরবিন্দ সোনা নিয়ে এসেছিলেন জেলায়।

তার কিছুদিন পরেই ছিল রাজ্য অ্যাথেলেটিক মিট। তখন মানভূম ক্রীড়া সংস্থায় ডামাডোল চলছে। প্রায় অচলাবস্থা তৈরি হয়ে রয়েছে। সময় মতো অ্যাথেলেটিক মিট-এ প্রতিযোগীদের নামই পাঠাতে পারেনি ক্রীড়া সংস্থা।

প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়া হয়নি অরবিন্দের। পায়ের তলা থেকে হঠাৎ যেন মাটি সরে গিয়েছিল। সারা বছরের দাঁতে দাঁত চাপা পরিশ্রম মনে হচ্ছিল মিথ্যে হয়ে গেল। অরবিন্দের কোচ গৌতম চট্টোপাধ্যায় জানান, সেই সময়ে তাঁরা সবাই অরবিন্দকে বুঝিয়েছিলেন। লড়াইটা ছাড়েনি সে। তিনি বলেন, ‘‘ওর স্বপ্নটা অবশেষে সত্যি হল। খুব পরিশ্রম করেছে এই সময়টায়।’’

লড়াই তো সেই প্রথম নয় আর! বাবা প্রদীপকুমার সিংহ অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী। সংসারে কিছুটা টানাটানি তো রয়েইছে। কিন্তু ২০১১-এ স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করে খেলাধুলাকেই ধ্যানজ্ঞান করে নিয়েছেন অরবিন্দ। তার জন্যই বরাদ্দ করেছে সমস্ত সময়, মনোযোগ। কারও কথায় পিছু ফিরে দেখেননি।

ফলে লড়়াইটা জারি রেখেছিলেন সমস্ত কিছুর পরেও। আর তাতেই এসেছে সাফল্য। ছেলের এই লড়াইয়ে নিঃশব্দে পাশে থেকেছেন প্রদীপবাবু। অরবিন্দদের খেলা থাকলে বরাবর তিনি মাঠে যান। শুক্রবারও কলকাতা গিয়েছিলেন। শনিবার ছেলের সাফল্য দেখে ফের আদ্রার ট্রেন ধরেছেন।

তবু এমন খুশির দিনটায় একটা ক্ষীণ দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসছে বছর সাতাশের যুবকটির কথার মধ্যে থেকে। অরবিন্দ বলেন, ‘‘অনেক দিনের স্বপ্ন ছিল। ভাল লাগছে। কিন্তু গত বছর প্রস্তুতিটা সত্যি ভাল ছিল। স্টেট গেমস-এ এ বারের থেকেও ভাল ফল করেছিলাম। সোনা পেলেও তার তুলনায় দূরত্বটা তো কমই থেকে গেল এ বার।’’

অরবিন্দের সাফল্যে খুশি মানভূম ক্রীড়া সংস্থার সম্পাদক অর্ধেন্দু ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘গত বছর ডামাডোলে টিম পাঠানো যায়নি। এ বারে নির্বাচন হওয়ার পরেই আমরা উঠে পড়ে লেগেছিলাম। অরবিন্দ আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE