ছ’মাস আগেও ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান কর্তাদের বিরোধিতার সুর ছিল চড়া। কিন্তু ‘এম’ ভিটামিনের আকর্ষণে সব বিদ্রোহেই ইতি পড়ে গিয়েছে শেষ পর্যন্ত।
ইন্ডিয়ান সুপার লিগ বিরোধী ক্লাব জোট ভেঙে গেলেও মাথা নোয়ায়নি বেঙ্গালুরু এফসি, সালগাওকর এবং স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়ার মতো ক্লাব। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান আপস করে নিয়েছে নতুন টুর্নামেন্টের সঙ্গে। মুখে আইএসএল-কে ‘নাচা-গানা আর ব্যবসা করার টুর্নামেন্ট’ বললেও একান্তে অঙ্ক কষেই চলেছেন দুই প্রধানের কর্তারা! নিজেদের স্বার্থেই তাঁরা চাইছেন এই টুর্নামেন্ট বছরের পর বছর চলুক।
ক্লাব কর্তাদের অঙ্ক কষার কারণ অবশ্য সমর্থনের ভিত কতটা আলগা হল তা নিয়ে নয়। ফ্র্যাঞ্চাইজিদের কাছে ডুডু, র্যান্টি, শিল্টন পালদের বিক্রি করে ক্লাবের কত টাকা লাভ হল তা নিয়েই দুই প্রধানের যাবতীয় মাথাব্যথা।
এখনও পর্যন্ত যা হিসাব তাতে ফুটবলারদের ধার দিয়ে ইস্টবেঙ্গলের লাভ হচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা। মোহনবাগান অবশ্য এ ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে লাল-হলুদের থেকে। শিল্টন, জেজে, প্রীতমদের ধার দিয়ে শতবর্ষপ্রাচীন ক্লাবের রোজগার দেড় কোটি টাকার কিছু বেশি।
মোহনবাগানের আয় এত কম কেন? দু’টো কারণ। এক) ইস্টবেঙ্গল তাদের তিন বিদেশি ডুডু, র্যান্টি, এমনকী লিও বার্তোসকেও ধার দিতে সক্ষম হয়েছে তিন মাসের জন্য। বাগান সনি নর্ডি বা কাতসুমি-সহ চার বিদেশির একজনকেও ধার দিতে পারেনি। অনেক চেষ্টা করেও। দুই) আইএসএলে ইস্টবেঙ্গল মোট ২২ ফুটবলার বিক্রি করেছে। মোহনবাগান এ দিন দলের দু’নম্বর গোলকিপার দেবজিত্ মজুমজারকে আটলেটিকো দে কলকাতার কাছে বিক্রি করেছে। দেবজিত্কে ধরে বাগানের মোট ১৩ ফুটবলার খেলছেন নতুন লিগে।
দুই প্রধানের কর্তারাই অবশ্য স্বীকার করছেন, আইএসএল না হলে তাঁরা আর্থিক দিক দিয়ে সমস্যায় পড়তেন। এই টুর্নামেন্ট তাঁদের অক্সিজেন দিয়েছে। ফুটবলারদের পেমেন্ট দেওয়া নিয়েও সমস্যা হত। কালিম্পং থেকে মোহনবাগান সচিব অঞ্জন মিত্র বললেন, “আমাদের যা ফুটবল বাজেট এবং স্পনসরের কাছে থেকে যে টাকা পাচ্ছি তাতে সব মিলিয়ে আড়াই কোটি টাকার মতো ঘাটতি ছিল। আইএসএল হওয়ায় সেটা কমেছে। না হলে সমস্যা হত।” আর ইস্টবেঙ্গলের ফুটবল সচিব সন্তোষ ভট্টাচার্যের মন্তব্য, “এই টুর্নামেন্টের খারাপ তো কিছু দেখছি না। আইএসএল হওয়ায় তো আমাদের আর্থিক সমস্যা অনেকটাই মিটে যাবে। আমাদের সুবিধাই হয়েছে বলব। না হলে শেষ দিকে গিয়ে টাকার জন্য দৌড়োদৌড়ি করতে হত প্রতিবারের মতো। তবে ফুটবলাররাও লাভবান হয়েছে।”
এমনিতেই সারদা কাণ্ডের জেরে দুই প্রধানের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সিল করে দিয়েছে ইডি। কর্তারা চিঠি দিয়ে আবেদন করলেও ইডি তা আটকে রেখেছে তদন্তের স্বার্থে। তার প্রভাব পড়তে পারে ইউ বি-র উপরও। এই অবস্থায় তিন মাসের জন্য ফুটবলারদের ধার দিয়ে হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন দুই ক্লাবের কর্তারাই। কারণ আইএসএল না হলে ওই তিন মাস ফুটবলারদের বেতন দিতে হত ক্লাবগুলোকেই। এখন সেটা দিয়ে দিচ্ছে আইএসএলে খেলা ফ্র্যাঞ্চাইজিরাই।
বেশির ভাগ ফুটবলার নতুন লিগে চলে যাওয়ায় ইস্টবেঙ্গলের অনুশীলন পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর্মান্দো কোলাসো অনুশীলন শুরু করবেন পয়লা নভেম্বর থেকে। আর ১৭ অক্টোবর থেকে অনুশীলন শুরু করার কথা ছিল মোহনবাগানের। তা অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শুধু ফিজিও গার্সিয়া চার বিদেশিকে নিয়ে অনুশীলন করাবেন।
সূত্রের খবর, মোহনবাগানের এ বারের টিম বাজেট তেরো কোটি টাকার মতো। তার মধ্যে ইউ বি দিচ্ছে আট কোটি। কো স্পনসররা দেবে আরও আড়াই কোটি। বাকি আড়াই কোটির বেশির ভাগটাই আসবে আইএসএল থেকে।
আর ইস্টবেঙ্গল? তাদের বাজেট প্রায় পনেরো কোটি। ইউ বি-র আট কোটি এবং কো স্পনসর মিলে সাড়ে এগারো কোটি টাকার মতো উঠছে। এখন আই এস এলের সাড়ে তিন কোটি এসে যাওয়ায় তাদের সমস্যা অনেকটাই মিটে গিয়েছে।
আইএসএলে দু’প্রধান
ইস্টবেঙ্গল
মোট ফুটবলার ২২
উল্লেখযোগ্য র্যান্টি মার্টিন্স, ডুডু ওমাগবেমি, লিও বার্তোস, মেহতাব হোসেন, কেভিন লোবো, লালরিন্দিকা, জোয়াকিম আব্রাঞ্চেস, দীপক মণ্ডল।
ফুটবলারদের ধার দিয়ে আয় প্রায় সাড়ে তিন কোটি।
মোহনবাগান
মোট ফুটবলার ১৩
উল্লেখযোগ্য জেজে, বলবন্ত সিংহ, প্রীতম কোটাল, শৌভিক চক্রবর্তী, শিল্টন পাল, শৌভিক ঘোষ, পঙ্কজ মৌলা, রাম মালিক।
ফুটবলারদের ধার দিয়ে আয় দেড় কোটির কিছু বেশি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy