কলকাতার পথে বিমানে আন্দ্রে রাসেলরা। ছবি: উৎপল সরকার।
মহমেডান মাঠের টিকিট কাউন্টারের সামনে। গোটা বারো লোক।
ই়ডেনের যে গেটগুলির সামনে টিকিট নেই জেনেও ভিড় থাকে অন্য সব বড় ম্যাচে, সেগুলিও ফাঁকা।
‘দাদা একটা টিকিট হবে’? বটতলায় এই আকুতিও নেই।
শুক্রবার দুপুরে ইডেনে ঢোকার আগে পারিপার্শ্বিক দৃশ্যের কোলাজটা এরকম।
আর ইডেনের ক্লাব হাউসে তখন অন্যরকম ছবি। সেখানে টিকিটের হাহাকার নেই ঠিকই, কিন্তু চাহিদা নেই এ কথা বোধহয় বলা যায় না।
সিএবি-র দোতলায় মন্ত্রী, নেতা, আমলা, শিল্পপতি, ভিআইপি-দের প্রতিনিধি ও কর্তাঘনিষ্ঠদের জমায়েত মনে করিয়ে দিল ভারত-পাক ম্যাচের আগের দু’দিনের কথা।
এক শীর্ষকর্তার মতে, ‘‘কমপ্লিমেন্টারি, ক্লাব হাউসের চাহিদা কি কখনও কমে? ভারত ফাইনালে উঠলেও ওরা আসতেন, না ওঠা সত্ত্বেও এসেছেন।’’
সাম্মানিক টিকিট পেয়ে সিএবি-র অতিথি হয়ে বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখার চাহিদায় না হয় কমতি নেই। কিন্তু গাঁটের কড়ি খরচ করে রবিবারের ফাইনাল দেখার ইচ্ছা এই শহরে আর বেঁচে আছে কি না, এ দিন দুপুরে ইডেনের বাইরের ছবিটা থেকে এই প্রশ্নই উঠে এল।
বৃহস্পতিবার ওয়াংখেড়েতে ভারতের হার ও পরের দিন শহরে উড়ালপুল ধসে পড়ার শোক সামলে রবিবারের বিশ্বকাপ ফাইনাল উৎসবে মাতবেন সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীরা?
সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও অন্যতম যুগ্মসচিব অভিষেক ডালমিয়ার দাবি, রবিবার ইডেনের গ্যালারি ভরে যাবে। উড়ালপুল কাণ্ডের জেরে যে ফাইনালের মাঝখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও বন্ধ হচ্ছে না, তাও জানিয়ে দেন সৌরভ। অবশ্য দু’দলের ক্রিকেটারদের কালো ব্যাজ পরে মাঠে নামার অনুরোধ জানাবেন তিনি। নীরবতা পালনও হতে পারে ম্যাচের আগে। প্রয়াত জগমোহন ডালমিয়াকে নিয়ে একটি ছোট তথ্যচিত্র দেখানো হবে মাঠের জায়ান্ট স্ক্রিনে। আইসিসি সূত্রের খবর চেয়ারম্যান শশাঙ্ক মনোহর ও প্রেসিডেন্ট জাহির আব্বাস ফাইনালে থাকবেন। থাকবেন বিসিসিআই শীর্ষকর্তারাও।
বিক্রয়যোগ্য টিকিটের চাহিদা কমায় শুক্রবার অনুমোদিত ক্লাব ও সংস্থাগুলিকে আরও টিকিট দেওয়া হল। বেশ কিছু ক্লাব ও সংস্থা আবার তা নাও নিতে পারে বলে জানা গেল। বোর্ড ও আইসিসি থেকে টিকিটের কিছু অংশ ফেরত আসার সম্ভাবনাও নাকি রয়েছে। তা হলে শনিবার আরও বিক্রয়যোগ্য টিকিট এসে ঢুকে পড়বে ক্লাব হাউসে। তা সত্ত্বেও অবশ্য কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রির সম্ভাবনা উড়িয়েই দিচ্ছেন সিএবি যুগ্মসচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়। সব মিলিয়ে ৬৭ হাজার না হোক, রবিবার অন্তত ৫৫-৬০ হাজারের ঢল নামবে ইডেনে, তেমনই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
আর ভরা ইডেনের সামনে তাঁর পূর্বসূরিদের ব্যর্থতা মুছে ট্রফি তুলতে চান ইংল্যান্ডের প্রধান ভরসা জো রুট। ১৯৮৭-তে ব্যর্থ হলেও এ বার আর ইডেন থেকে খালি হাতে ফেরার ইচ্ছা নেই। রুট এ দিন ইডেনে এসে বলেন, ‘‘দুর্দান্ত একটা অভিজ্ঞতার অপেক্ষায় রয়েছি। ছোটবেলা থেকেই এটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো। কয়েক বছর আগে এখানে এসেছিলাম। কিন্তু দ্বাদশ ব্যক্তি ছিলাম। এ বার মনে হয় ইচ্ছাপূরণ হতে চলেছে।’’
ইডেনের শব্দব্রহ্মের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে রুট বলছেন, ‘‘এটা ঠিকই যে এই পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা সহজ নয়। কিন্তু আমরা তো এত দিন ধরে এই কাজটাই করে আসছি।’’
ইংল্যান্ড যখন ইডেনে প্র্যাকটিসে রওনা হওয়ার পথে, তখনই টিমহোটেলে ঢুকে পড়লেন ক্যারিবিয়ানরা। একেবারে রিল্যাক্সড এবং খোশ মেজাজে। মুম্বই থেকে কলকাতায় আসার বিমানে ক্রিকেটপ্রেমীদের সই ও সেলফি দেওয়ার ব্যাপারে তাঁরা বেশ উদার ছিলেন বলে জানা গেল। ভক্তদের সঙ্গে কয়েকজনকে গল্প জুড়ে দিতেও দেখা গিয়েছে। আগের ম্যাচের নায়ক আন্দ্রে রাসেলও বিন্দাস মেজাজে। কিন্তু ক্রিসে গেইল নাকি বেশ চুপচাপই ছিলেন এ দিন। ফাইনালে ঝড় তোলার আগে কি এ ভাবেই নিজেকে তাতাচ্ছেন?
কলকাতা ক্রীড়াসাংবাদিক ক্লাবে আবার আইসিসি-র এক ক্রিকেট আড্ডায় তাঁদের আগের প্রজন্মের তারকা ইয়ান বিশপ বলে দিলেন, ‘‘আমাদের ছেলেদের খিদেটা কতটা থাকবে, সেটাই এই ফাইনালে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। খিদেটা থাকলে ওদের দিকেই পাল্লা ভারী।’’ অন্য দিকে আইসিসি সিইও তথা দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাক্তন উইকেটকিপার ডেভ রিচার্ডসন বলছেন, ‘‘এই ইংল্যান্ডকে হারানো কিন্তু ক্যারিবিয়ানদের পক্ষে সহজ হবে না।’’
মঞ্চ তৈরি। তৈরি দু’দলও। কিন্তু ভারত ফাইনালের মুখ থেকে ছিটকে যাওয়ায় আবহে যেন সেই টানটান ভাবটাই নেই। তবু কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। দশ..নয়..আট..।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy