গোলের পরে স্যাঞ্চোর সঙ্গে গোমেজ। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
দু’জনেই দু’ ম্যাচে তিন গোল করেছিল এই ম্যাচের আগে।
একজন ইংল্যান্ডের। অপর জন ইরাকের। প্রথম জন জ্যাডন স্যাঞ্চো। বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের এই ফুটবলার ইতিমধ্যেই ব্রিটিশ মিডিয়ার কাছে জনপ্রিয়।
আর দ্বিতীয় জন মহম্মদ দাউদ। ইরাকের সাত নম্বর এই দাউদ কলকাতায় আসার পর থেকেই মাঠে পারফরম্যান্সের আগুন ঝরাচ্ছে।
স্যাঞ্চো, দাউদের দ্বৈরথ দেখতে এ দিন রাতের যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে ভিড় জমিয়েছিলেন প্রায় হাজার পঞ্চাশেক দর্শক। যাদের অনেকেই স্টেডিয়ামে এসেছিলেন এশিয়ার দেশ ইরাককে সমর্থন করতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁরা নিরাশ হয়েই বাড়ি ফিরলেন।
এশিয়ার দেশকে দুরমুশ করে ইংল্যান্ডের ৪-০ জয়ের দিনে তাঁরা না দেখতে পেলেন স্যাঞ্চোর সেই দাপুটে ফুটবল। না দেখলেন মহম্মদ দাউদের ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স। ইরাকি কোচ কাহতান আল-রুবাই কার্ডের ভয়ে প্রথমার্ধ বেঞ্চে বসিয়েই রেখে দিয়েছিলেন দাউদকে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমে সেই হলুদ কার্ড দেখেই প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে মালির বিরুদ্ধে মাঠের বাইরে চলে গেল দাউদ। ম্যাচ শেষে যা নিয়ে আফসোস করছিলেন ইরাকি কোচ। বলছিলেন, ‘‘একটা কার্ড আগেই দেখেছিল। তাই শুরুতে নামাইনি। বলেছিলাম মাথা গরম করে কার্ড না দেখতে। শেষ পর্যন্ত সেটাই হল।’’
আর স্যাঞ্চো? পেনাল্টি মিস করে বিমর্ষ মুখে যুবভারতীতে বিচরণ করল নব্বই মিনিট। বড়দের বিশ্বকাপে জিকো, সক্রেটিস, মারাদোনাদের পেনাল্টি নষ্ট করতে দেখেছেন কলকাতার ফুটবলপ্রেমীরা। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে শনিবার যুবভারতী দেখল জ্যাডন স্যাঞ্চোর পেনাল্টি মিস। মার্কিন রেফারি জেয়ার মারুফো পেনাল্টি দিলেন, তখন জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখা গেল ইংল্যান্ড সমর্থকদের মাঝে বসে গ্যালারিতে লাফাচ্ছেন নিয়া কার্বির দাদা নিক কার্বি। কিন্তু স্যাঞ্চোর পেনাল্টি ইরাকের গোলকিপার আলি ইবাদি বাঁচানোর পর দেখা গেল স্যাঞ্চো হতাশায় বিড়বিড় করছে। রাগের অভিব্যক্তি চোখেমুখে।
এই ম্যাচের পরেই বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের হয়ে খেলতে উড়ে যাওয়ার কথা ছিল স্যাঞ্চোর। তাই এ দিন গোল করার জন্য মরিয়া ছিল এই ইংরেজ ফুটবলার। কিন্তু তা হয়নি। সাংবাদিক সম্মেলনে অবশ্য ইংল্যান্ড কোচ স্টিভ কুপার বলে গেলেন, ‘‘স্যাঞ্চোর দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে এখনও কোনও আপডেট নেই।’’ যদিও সূত্রের খবর, স্যাঞ্চোকে বিশ্বকাপের বাকি ম্যাচগুলোতে রাখতে এ দিন রাত থেকেই ঝাঁপাল ইংল্যান্ড। রাতেই বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা শুরু হয়েছে। চূড়ান্ত খবর মিলতে আরও ৪৮ ঘণ্টা।
এ দিন ম্যাচের শুরুতেই ইংল্যান্ডকে ১-০ এগিয়ে দিয়েছিল অ্যাঞ্জেল গোমেজ। স্টিভন সেসেগননের সঙ্গে চমৎকার ওয়ান-টু খেলে ডান দিক থেকে আক্রমণ শানিয়েছিল নিয়া কার্বি। তার ক্রসে গোমেজের পা ছোঁয়ানোয় ইংল্যান্ডের এগিয়ে যাওয়া।
ইংরেজদের আক্রমণে ইরাক তখন পাঁচজনকে রক্ষণে নামিয়ে কোণঠাসা। এই অবস্থায় ইরাককে লড়াইয়ে ফিরিয়েছিল তাদের গোলকিপার আলি ইবাদি। স্যাঞ্চোর পেনাল্টি বাঁচানোর পর নিজে এমন উজ্জীবিত গোলকিপিং করতে শুরু করল, যা দেখে তেতে গেল গোটা ইরাক দলটাই। আলি করিমের শট ইংল্যান্ড গোলকিপার উইলিয়াম ক্রেলিনের হাঁটুতে লেগে দিকভ্রষ্ট হল। এর কিছু পরেই মহম্মদ আলি একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে বল গোলের উপর দিয়ে উড়িয়ে দিল। না হলে এগিয়ে যেতে পারত ইরাক। ইরাক কোচ দ্বিতীয়ার্ধে নামিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর সেরা অস্ত্র মহম্মদ দাউদকে। কিন্তু দাউদ নামার পরেই ইরাককে মিডল করিডরে চেপে ধরল ইংল্যান্ড।
স্যাঞ্চো, গোমেজদের এই ইংল্যান্ড ভারতে এসেছে তাদের সেই আদ্যিকালের লং বল থিওরিকে টেমসের জলে ভাসিয়ে। স্টিভ কুপারের এই দলটার সম্পদ উইং প্লে। আর মাটিতে বল রেখে বক্স টু বক্স ওয়াল পাস খেলতে খেলতে বিপক্ষ রক্ষণে গিয়ে চকিতে ফাইনাল পাস বাড়িয়ে সর্ষেফুল দেখিয়ে দিচ্ছে ফডেন, গোমসরা। যা এত দিন করত দক্ষিণ আমেরিকার দলগুলো। এ দিন ইংল্যান্ডের শেষ তিনটে গোল এল এ ভাবেই। এমিল স্মিথ রোয়ে ড্যানিয়েল লোডার (২) এ ভাবেই গোল করে গেল স্রেফ ওয়াল পাস খেলেই। টানা তিন ম্যাচ জিতে গ্রুপ ‘এফ’ থেকে শেষ ষোলোয় গেল ইংল্যান্ড। প্রি-কোয়ার্টারে তাঁদের কলকাতায় খেলতে হবে জাপানের বিরুদ্ধে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy