নজরে: রোমে কিয়েল্লিনিরা। ছবি রয়টার্স।
মাঝখানে মাত্র চার বছর গিয়েছে। তার মধ্যেই বদলে গিয়েছে ইটালি ফুটবল সামগ্রিক চালচিত্র।
২০১৭ সালের ১৩ নভেম্বর। সে দিন সুইডেনের বিরুদ্ধে একটি গোল করতে না পারায় রাশিয়া বিশ্বকাপের ছাড়পত্র পায়নি ইটালি। সে দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল ভেজা চোখে জানলুইজি বুফন, জর্জে কিয়েল্লিনিদের মাঠ ছাড়ার ছবি। চার বারের বিশ্বসেরা দল বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জন করতে না পারায় সে দিন গেজেত্তা দেল্লো স্পোর্ট সংবাদপত্র শিরোনাম করেছিল ‘সমাপ্তি’। বিভিন্ন খবরের কাগজেও জাতীয় দলের তুমুল সমালোচনা হয়েছিল।
চার বছর পরে সেই দলটাই দুর্দান্ত ফুটবল খেলে ইউরোপ সেরার ট্রফি নিয়ে গেল রোমে। সেখানে এখন চলছে বাঁধভাঙা উৎসব। রবের্তো মানচিনির দলের এই দুরন্ত ছন্দময় ও আক্রমণাত্মক ফুটবল দেখে বিস্মিত বিশেষজ্ঞরাও। রক্ষণাত্মক ফুটবলের খোলস ছেড়ে এই ইটালি আক্রমণ ও রক্ষণের ভারসাম্য বজায় রেখে সম্পূর্ণ অন্য ঘরানার ফুটবল উপহার দিয়েছে এ বার। সে কারণেই বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এটা ইটালির ফুটবলের নবজাগরণ।
বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করতে না পারায় নতুন কোচের সন্ধানে নেমে ইটালীয় ফুটবল সংস্থার কর্তাদের সামনে ভেসে উঠেছিল অনেক বড় নামের কোচের নাম। যার মধ্যে ছিলেন কার্লো আনচেলোত্তি, রবের্তো মানচিনি। নির্বাচকদের একটা বড় অংশ সাফল্যের অতীত রেকর্ডের জন্য মানচিনির পক্ষে সওয়াল করলেও বর্তমান ইটালি কোচের বিপক্ষে গিয়েছিল তাঁর খেলোয়াড় জীবনের বেশ কিছু আচরণ। ১৯৮৮ সালে ফুটবলার জীবনে মানচিনি ইটালির হয়ে গোল করার পরে প্রেসবক্সে থাকা কয়েক জন সাংবাদিককে লক্ষ্য করে নানা অঙ্গভঙ্গি করেছিলেন। কারণ, তাঁরা প্রায়ই সমালোচনা করতেন লিয়োনার্দো বোনুচ্চিদের গুরুকে। সেই রাগী রবের্তোর হাত ধরেই ছবির মতো ফুটবল খেলা শুরু ইটালির। শেষ ৩৪ ম্যাচে অপরাজিত তাঁর দল। ইউরোপ সেরাও। প্রাক্তন খেলোয়াড় থেকে বিশেষজ্ঞ, সকলেই বলছেন মানচিনি জাদুতেই বদলে গিয়েছে ইটালির ফুটবল।
কী করেছেন তিনি? আস্থা রেখেছেন তারুণ্যে। তাঁর জমানায় এই ক’বছরে ইটালির জাতীয় দলে অভিষেক হয়েছে ৩৫ জন ফুটবলারের। তারুণ্যের এই গতি, উদ্যমকে সম্বল করেই বর্তমান ইটালি কোচ তাঁর আক্রমণাত্মক ফুটবলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। যে দলে নেই কোনও ব্যক্তিত্বের সংঘাত। যা দেখা গিয়েছে স্পেনের বিরুদ্ধে ম্যাচে। চোটের কারণে ছিলেন না ডিফেন্ডার লিয়োনার্দো স্পিনাজ্জোলা। ম্যাচ জেতার পরেই লোরেনজ়ো ইনসিনিয়ে দৌড়ে গিয়ে নিয়ে এসেছিলেন প্রিয় সতীর্থ ‘স্পিনা’-র জার্সি। সেই জার্সি সবাই মিলে তুলে ধরে বার্তা দিয়েছিলেন, এই সাফল্যে এএস রোমা দলের ডিফেন্ডারের অবদান ভুলছে না। দলের মধ্যেও একটা চাপমুক্ত পরিবেশ সব সময়েই রেখেছেন ইটালি কোচ। ৫৩ বছর পরে তাই ইউরোর সেরার তাজ ইটালির মাথায়। এর পাশাপাশি মানসিক ও শারীরিক ভাবে দলকে পোক্ত করেছেন কোচ। এ বারের ইউরোয় তিন বার ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গিয়েছে। এই তিন ম্যাচেই মানচিনির ছেলেরা চাপকে হেলায় উড়িয়ে দিয়ে ম্যাচ বার করে নিয়েছেন। সে কারণেই ইটালির ক্লাব দলে কোচিং করানো বাকি প্রশিক্ষকরা এখন বলছেন, ‘‘কোচই বদলে দিয়েছেন দলটাকে।’’
রণনীতির দিক থেকেও চমক দিয়েছে মানচিনির দল। ইটালি ৪-৩-৩ ছকে শুরু করলেও বল নিজেদের দখলে থাকলে লেফ্ট ব্যাক মাঝমাঠে যায় আক্রমণে। ইনসিনিয়ে তখন অনেকটা ভিতরে ঢুকে আসেন। ইমমোবিলে মাঝখানে চলে আসেন। ফলে এই সময়ে ইটালি হয়ে যেত ৩-৪-২-১। যা ধাঁধায় ফেলেছে বিপক্ষ দলগুলিকেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy