মৌমা দাসের আর এক নজির। অলিম্পিক্সে টেবল টেনিসে দ্বিতীয় বার কোয়ালিফাই করার নজির গড়ে ফেললেন বঙ্গকন্যা। টিটিতে বাংলার মেয়েদের মধ্যে যে রেকর্ড আর কারও নেই। কিছু দিন আগেই কমনওয়েলথ টিটি-তে ভারতীয়দের মধ্যে ইন্দু পুরীর সবচেয়ে বেশি পদক জেতার রেকর্ড ভেঙেছিলেন মৌমা।
আগেই সৌম্যজিৎ ঘোষ ও মণিকা বাত্রা নিশ্চিত করে ফেলেছিলেন রিও অলিম্পিক্সের টিকিট। শনিবার প্রথমে শরথ কমল তৃতীয় অলিম্পিক্সের ছাড়পত্র পান। মৌমাও সকালেই রিওর টিকিট পেতে পারতেন উত্তর কোরিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারালে। কিন্তু তিনি সেই ম্যাচ হেরে যান। প্রচল চাপ সামলে বিকেলে শেষ সুযোগে অবশ্য বাংলার অভিজ্ঞ টিটি তারকা আর ভুল করেননি। অলিম্পিক্সে একই বছরে দু’জন ভারতীয় মহিলা টিটি প্লেয়ারের কোয়ালিফাই করার ঘটনাও এই প্রথম।
অবশ্য মৌমা যে ভাবে চলতি মরসুমে খেলছিলেন, সাউথ এশিয়ান গেমস, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জেতার পর মৌমার রিওর টিকিট পাওয়ার ব্যাপারটা প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু হংকং থেকে ফোনে মৌমা শনিবার বললেন, ‘‘দারুণ লাগছে ২০০৪-এর পর আবার অলিম্পিক্সে খেলতে পারব ভাবলে। তবে হংকংয়ে নিজের পারফরম্যান্সে আমি খুশি নই। রিওর জন্য আরও অনেক ভাল ভাবে তৈরি হতে হবে।’’ বাংলা থেকে মেয়েদের মধ্যে পৌলমী ঘটক (২০০০) ও অঙ্কিতা দাস (২০১২) অলিম্পিক্সে কোয়ালিফাই করেছেন। মৌমার আথেন্স অলিম্পিক্সের বারো বছর পর তাই রিওর ছাড়পত্র পাওয়া কম কৃতিত্বের নয়।
হংকংয়ে মৌমারা অলিম্পিক্স কোয়ালিফায়ারের জন্য পৌঁছনোর পর থেকেই বৃষ্টির দাপট চলছিল। ফলে আর্দ্রতার একটা সমস্যা ছিলই। মৌমা র্যাকেটে যে রাবার ব্যবহার করেন আর্দ্র পরিবেশে তাতে খেলতে সমস্যা হয়। তাই পরিবেশের সঙ্গে প্রথম থেকেই লড়াই করতে হয়েছে বঙ্গকন্যাকে। কী ভাবে সামলালেন সব? নিজেই জানালেন ফোনে, ‘‘একে বৃষ্টি তার উপর যে ইন্ডোর স্টেডিয়ামে খেলছিলাম সেখানে প্রচণ্ড জোরে এসি চলছিল। তাই আমি সাধারণত যে শটগুলো মিস করি না সেগুলোও মিস করছিলাম।’’ প্রথম রাউন্ডে বাই পাওয়ার পর মৌমার লড়াই ছিল বিশ্বের ৩৩ নম্বর কোরিয়ান প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে। যিনি আবার ডিফেন্ডার হিসেবে বিশ্বসেরা। মৌমা এ ধরনের প্লেয়ারদের বিরুদ্ধে সাধারণত ভাল খেললেও আর্দ্রতার সমস্যায় হাড্ডাহাড্ডি লড়েও হেরে যান। তবে এই ম্যাচ থেকেই যেটুকু আত্মবিশ্বাস দরকার ছিল সেটাও পেয়ে যান তিনি।
শনিবার সকালে অবশ্য তাও যথেষ্ট ছিল না। তাই ম্যাচটা সরাসরি সেটে হারেন মৌমা। আরও চাপে পড়ে যান। বলছিলেন, ‘‘একে পরিবেশ প্রতিকূল তার উপর প্রথম ম্যাচটা হেরে গিয়েছি। ও দিকে শরথ কোয়ালিফাই করে ফেলেছে। গোটা দেশ এখন আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এটা ভেবে টেনশন হচ্ছিল।’’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘‘কষ্টে চোখ দিয়ে জল পড়ছিল। বাড়িতে ফোন করে কিছুটা সামলাই। আমার পরিবার এতটা সাপোর্ট করে বলেই এই জোরটা পাই। আমাকে পারতেই হবে এই জেদটা মাথায় চেপে গিয়েছিল। এক বার নামার পর শুধু ম্যাচটা ফোকাস করে গিয়েছি।’’ এর পর উজবেকিস্তানের প্রতিদ্বন্দ্বীকে ৪-১ হারিয়ে ‘মিশন সাকসেসফুল।’
এ বার মৌমার টার্গেট রিওর প্রস্তুতি। তার জন্য জার্মানিতে মাসখানেকের প্রস্তুতি নেওয়ার পরিকল্পনাও আছে বলে জানান। বললেন, ‘‘আপাতত দেশে ফিরে দিন পাঁচেক বিশ্রাম নেব তার পর উঠে পড়ে লাগব। এখন একটাই ফোকাস, রিও অলিম্পিক্স।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy