সমর্থন: ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হলে দুই দেশের সমর্থকদের এমন উন্মাদনার ছবিই ধরা পড়ে। ফাইল চিত্র।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাইশ গজে ভারত-পাকিস্তান দ্বৈরথ ২৪ অক্টোবর। সেই মহারণের আগে উত্তেজিত তিনিও। ক্রিকেট জীবনে যে রকম আগ্রাসী ব্যাট করতেন, লাহৌর থেকে ফোনে আনন্দবাজার-কে একান্ত সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় একই রকম বিস্ফোরক সেলিম মালিক। পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক দাবি তুললেন, এখনই ইস্তফা দিক দেশের নির্বাচক প্রধান।
প্রশ্ন: আগামী ২৪ তারিখ ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। আপনার কী মনে হচ্ছে?
সেলিম মালিক: এখনও টিভির সামনে বসলে উত্তেজিত হয়ে পড়ি। মনে পড়ে যায়, পুরনো দিনের কথা। কী সব রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ হত তখন!
প্র: এ বারের লড়াইয়ে কাকে এগিয়ে রাখবেন?
মালিক: কোনও সন্দেহ নেই, পাকিস্তানের থেকে ভারত অনেক এগিয়ে। বেশ কয়েক বছর ধরে এমনটাই হয়ে আসছে। আইপিএল খেলে খেলে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এখন দারুণ জায়গায় চলে গিয়েছে ভারত। সত্যি কথা বলতে কী, এই ভারতীয় দলটাকে হারানো খুবই কঠিন।
প্র: তা হলে বলছেন, ভারতই ফেভারিট?
মালিক: নিশ্চয়ই। কাগজে-কলমে ভারত অনেক এগিয়ে। আপনাদের দলের ব্যাটিংয়ের গভীরতা দেখুন। আট নম্বর পর্যন্ত ব্যাট করতে পারে। সাতে আসে রবীন্দ্র জাডেজার মতো ক্রিকেটার।
প্র: পাকিস্তান কি অঘটন ঘটাতে পারে?
মালিক: ভারত যদি হঠাৎ করে চাপের মুখে ভেঙে পড়ে, তা হলে ম্যাচ পাকিস্তান জিততেও পারে। যেটা বছর চারেক আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে হয়েছিল। আর একটা কথা। পাকিস্তান যদি জেতে, বোলারদের জন্য জিতবে, ব্যাটারদের জন্য নয়।
প্র: পাকিস্তান ক্রিকেটের সমস্যাটা কোথায়?
মালিক: সবার আগে দল নির্বাচন নিয়ে যে নাটকটা হল, সেটার কথা বলব। প্রথমে একটা দল বাছা হল। তার পরে প্রচুর সমালোচনা হল সেই দল নিয়ে। আবার নির্বাচকরা সেই দল বদলে ফেলল। এর কোনও মানে আছে? এমন হলে দলের ক্রিকেটারদের উপরে চাপ তৈরি হয়। এর দায়িত্ব নিয়ে এখনই ইস্তফা দেওয়া উচিত জাতীয় নির্বাচক কমিটির প্রধান মহম্মদ ওয়াসিমের। বিশ্বকাপের দল নির্বাচন নিয়ে নোংরা সব কাণ্ড হল।
প্র: এই ম্যাচে তা হলে পাকিস্তানের ভরসা বলতে কাদের নাম করবেন?
মালিক: ব্যাটিংয়ে একমাত্র বাবর আজ়মই আছে, যার উপরে ভরসা রাখা যায়। বাকিদের মধ্যে ফখর আজ়ম রান পেয়েছে। ও কিছুটা রানের মধ্যে আছে। তাও ফখরকে নিয়ে কী হচ্ছে দেখুন!
প্র: কী রকম?
মালিক: প্রথমে দলে রাখা হয়নি। তার পরে ফিরিয়ে আনা হল। এখন প্রস্তুতি ম্যাচে দেখলাম, তিন নম্বরে ব্যাট করানো হচ্ছে। কোনও মানে হয়! ফখর হল এমন এক জন ব্যাটার, যে প্রথম ছয় ওভারের সুযোগটা নিতে পারে। দ্রুত রান তুলতে পারে। ভারতের বিরুদ্ধে ওকে অবশ্যই ওপেন করতে পাঠানো উচিত।
প্র: পাকিস্তানের বাকি ব্যাটারদের নিয়ে কী বলবেন?
মালিক: আর কারও উপরেই ভরসা করা যাচ্ছে না। মহম্মদ হাফিজ় আর শোয়েব মালিক থাকায় অভিজ্ঞতা বেড়েছে, কিন্তু ওরাও মারাত্মক চাপে আছে। মাথার উপরে তলোয়ার ঝুলছে। এই দলে রাখছে, এই বাদ দিয়ে দিচ্ছে। এ ভাবে কেউ ভাল খেলতে পারে নাকি? সব সময় বাদ যাওয়ার ভয়। ভারতে ছবিটা ঠিক উল্টো।
প্র: ভারতের কোন ব্যাপারটা আপনার ভাল লেগেছে?
মালিক: আইপিএল থেকে নতুন নতুন প্রতিভা তুলে আনছে ভারতীয় ক্রিকেট। এই তো সে দিন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি ম্যাচে ওপেন করে একটা নতুন ছেলে দারুণ ব্যাট করল। কী যেন নামটা...
প্র: ঈশান কিশান।
মালিক: হ্যাঁ, হ্যাঁ। ঈশান কিশান। কী দারুণ ব্যাট করল। একেবারে ভয়ডরহীন ব্যাটিং। আমরা যে রকম খেলতাম। ও তো বোধ হয় আন্তর্জাতিক স্তরে আগে ওপেনও করেনি। কিন্তু কী সব শট খেলল! আপনাদের আর আমাদের ক্রিকেটারদের মধ্যে আরও একটা তফাত আছে।
প্র: কী সেটা?
মালিক: ভারতীয় ক্রিকেটারেরা দলের জন্য খেলে। আমাদের ক্রিকেটারেরা খেলে দলে নিজেদের জায়গা ধরে রাখার জন্য। যে কারণে ভারতীয় ব্যাটাররা শট খেলতে ভয় পায় না। মারার বল একটাও ছাড়ে না। আর আমাদের ব্যাটাররা মারার আগে ভয় পায়, আউট হয়ে যাব না তো! দলের কথা ভাবে না কেউ। একটা সময় ভারত এ রকম ক্রিকেট খেলত। নিজেদের বাঁচানোর জন্য খেলত দলের কথা না ভেবে। এখন ছবিটা উল্টো হয়ে গিয়েছে।
প্র: আশি-নব্বইয়ের দশকে তো আপনারা ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে এসেছেন।
মালিক: তার কারণ আমাদের অধিনায়ক ইমরান খান খুব প্রভাবশালী আর শক্তিশালী এক জন অধিনায়ক ছিল। ইমরান আমাদের বলত, দলের জন্য খেলো। নিজেদের কথা ভেবে খেলো না। আউট হলে কিছু হবে না। আমি বুঝে নেব। তাই আমরা ভয় না পেয়ে খেলতাম।
প্র: এখন পরিস্থিতি সে রকম নেই বলছেন?
মালিক: একেবারেই নেই। পাকিস্তানে এখন সে রকম অধিনায়ক কোথায়? যে বলবে, আউট হওয়ার চিন্তা না করে খেলো। দলের জন্য খেলো, আমি তোমাদের পাশে আছি। ভারত আর পাকিস্তানে এখন এটাই বড় তফাত হয়ে গিয়েছে।
প্র: বিরাট কোহালির নেতৃত্বে এখন ভারতীয়রা সেই ভয়ডরহীন ক্রিকেটটাই খেলছে।
মালিক: একদমই তাই। বিরাট দারুণ একটা দলও পেয়েছে। যে খেলতে নামছে, সে-ই নিজেকে উজাড় করে দিচ্ছে। ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে ভারতীয়রা। বাইরে থেকে দেখে বোঝা যায় ওরা দলের জন্য খেলছে। আমাদের ছেলেরা সব সময় একটা ভয়ের মধ্যে থাকে। ভাবে, এই বুঝি বাদ পড়ে গেলাম।
প্র: রামিজ রাজা বোর্ডে এসেই তো বিশ্বকাপের জন্য ম্যাথু হেডেন আর ভার্নন ফিল্যান্ডারকে কোচ করে আনলেন। তাতে কোনও লাভ হবে?
মালিক: রামিজ়কে দেখে মনে হচ্ছে, ওর খুব তাড়াহুড়ো আছে। কিন্তু এই ভাবে কী চমক দেখানো যায়! চমক দেখাতে গেলে এক জনকে সময় দিতে হয়। দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে কোচকে মিশে যেতে হবে। দলের সবাইকে বুঝতে বুঝতে হেডেনের যা সময় লাগবে, তত দিনে বিশ্বকাপ শেষ!
প্র: মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে মেন্টর করে কত দূর লাভ হবে ভারতের?
মালিক: দারুণ সিদ্ধান্ত। ধোনি দেশের জন্য যা করেছে, খুব কম খেলোয়াড়েরই তেমন অবদান আছে। অসাধারণ ক্রিকেটার। ওর মতো ক্রিকেটার পাওয়া খুবই কঠিন। চাইলে এখনও বিশ্বকাপটা খেলে দিতে পারে ধোনি। আমার খুব পছন্দের ক্রিকেটার। ভারতীয় ক্রিকেট উপকৃত হবে ধোনি দলের সঙ্গে থাকায়।
প্র: আপনাকে ডাকলে কি পাকিস্তান ক্রিকেটকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসবেন?
মালিক: অবশ্যই। কেউ আমার সাহায্য চাইলে আমি এগিয়ে আসতে তৈরি। কিন্তু আগে তো সাহায্য চাইতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy