হতাশ মুলার। ছবি রয়টার্স।
অবিশ্বাস্য। এ মরসুমে ইউরোপের যে ক্লাব প্রায় প্রতিটি ম্যাচ তিনের বেশি গোলে জিতেছে, তারাই কি না পাঁচ গোল হজম করে বসল! হালফিলে বিশ্বফুটবলের সম্ভবত সবচেয়ে বড় অঘটনটি ঘটল বুধবার রাতে। জার্মান কাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে বরুসিয়া মনশেনগ্লাডবাখ ৫-০ হারিয়ে দিল রবার্ট লেয়নডস্কিদের ‘অপ্রতিরোধ্য’ বায়ার্ন মিউনিখকে।
কে বলবে ইউলিয়ান নাগেলসম্যানের দল মাঠে নামিয়েছিল তাদের সেরা এগারোকেই। লেয়নডস্কি, লেরয় সানে, থোমাস মুলার, স্যাজ নাব্রি থেকে ইয়োসুয়া কিমিচ— কে খেলেননি? যাঁরা আগের ম্যাচেই হফেনহেইমকে কার্যত উড়িয়ে দিয়ে ৪-০ জিতেছিলেন। আর গত সপ্তাহেই আরও বেশি গোলে জেতেন (৫-০) বেয়ার লেভারকুসেনের বিরুদ্ধে। এমনকি চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও বায়ার্নের কাছে পর্যূদস্ত হয় বেনফিকা (৪-০)। যেন অলৌকিক ভাবে সেই একই দল মনশেনগ্লাডবাখের সঙ্গে খেলতে গিয়ে গোলের মালা পরে মাঠ ছাড়ল। শুধু তাই নয়, কুয়ার্দিয়ো কোনে ১-০ করে দিলেন ম্যাচের ৭১ সেকেন্ডেই। এবং ২১ মিনিটের মধ্যেই মনশেনগ্লাডবাখ ৩-০ এগিয়ে গেল রামি বেনসেনবাইনির জোড়া গোলে (১৫ ও ২১ মিনিট)। আলজেরিয়ার ফুটবলার বেনসেনবাইনি নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন পেনাল্টিতে।
পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, আরও একটি অবিশ্বাস্য তথ্য। ২৭ বছরে প্রথম বার জার্মানির সর্বকালের শ্রেষ্ঠ ক্লাব এত বেশি গোলে কোনও ম্যাচে হারাল। ১৯৭২-এ কার্ল হাইঞ্জ রুমেনিগেদের বায়ার্ন এই জার্মান কাপেই কোয়ার্টার ফাইনালে ৫-১ হেরেছিল। তার পরে, এটাই তাদের সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হার। মজার ব্যাপার, মনশেনগ্লাডবাখের দু’জন এ দিন জোড়া গোল করে ফেললেন। বেনসেনবাইনির পরে দলের চতুর্থ ও পঞ্চম গোল করেন ব্রিল এমবোলো (৫১ ও ৫৭ মিনিট)। যিনি আবার রজার ফেডেরারের দেশ সুইৎজ়ারল্যান্ডের ফুটবলার। বায়ার্ন অবশ্য গত বারও জার্মান কাপ থেকে বিদায় নিয়েছিল দ্বিতীয় রাউন্ডে। তবে সে বার (গত জানুয়ারিতে) তারা হলস্টেইন কিয়েলের কাছে
হেরেছিল টাইব্রেকারে।
এমনিতে বুধবার মনশেনগ্লাডবাখের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে মাঠের বাইরে এমন বেশ কিছু ঘটনা ঘটে, যা সম্ভবত লেয়নডস্কিদের মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। খেলা শুরুর বেশ কয়েক ঘণ্টা আগেই বায়ার্ন শিবিরে খবর আসে, তাদের ফরাসি ডিফেন্ডার লুকাস এনাদেজ়কে স্পেনে জেল খাটতে হবে না। ২০১৭-তে তিনি সরকারি নিয়ম ভাঙার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন। লুকাস এই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করেছিলেন। মাদ্রিদের আদালাত তাঁর আবেদন মঙ্গলবারই মঞ্জুর করে। তাই ম্যাচ শুরুর অনেক আগেই বায়ার্ন শিবির কার্যত উৎসবে মেতেছিল বলে শোনা যাচ্ছে। যে ঘটনার ছাপ টোমাস মুলারদের খেলাতেও হয়তো পড়েছে।
সেইসঙ্গে কোভিড প্রতিষেধকের টিকা নিতে অস্বীকার করায় কিমিচকে নিয়ে আবার জলঘোলা হয়েছে বুধবারই। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, করোনায় আক্রান্ত কোচ নাহেলসমানকেও সাহায্যের জন্য পাননি নাব্রিরা। তাঁকে এখনও বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে হচ্ছে। হতে পারে, এ সবের জন্যই জার্মানির সেরা ক্লাব বায়ার্নকে এ ভাবে হারতে হয়েছে।
জার্মান কাপে অবশ্য একই দিন আরও একটা আঘটন ঘটেছে। নিজেদের মাঠে কার্লসরুহের কাছে ১-২ হেরে প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় নিয়েছে বেয়ার লেভারকুসেনও। ইউরোপীয় ফুটবলে এই বুধবারটাকে অঘটনের রাত বলাই যায়। লা লিগায় বার্সেলোনা যেমন হেরেছে, তেমনই সেরি আ-তে পর্যূদস্ত হয়েছে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পুরনো ক্লাব জুভেন্টাস। তাদের ১-২ হারিয়ে চমকে দিয়েছে সাসাউয়োলো। ১-১ অবস্থায় ম্যাচ শেষ হওয়ার মুখে সাসাউয়োলোর ম্যাক্সিং লোপেজ় ২-১ করে দেন। হেরে জুভেন্টাস সেরি আ টেবলে সপ্তম স্থানে নেমে গেল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy