Advertisement
২১ মে ২০২৪
ISL 2023-24

এ বার কি বদলে যাওয়া ইস্টবেঙ্গলকে দেখা যাবে? সোমবার আইএসএলে নামার আগে আত্মবিশ্বাসী লাল-হলুদ

গত তিন বছরে অনেক হতাশা, অনেক কষ্ট-দুঃখ সামলাতে হয়েছে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের। প্রতি বারই শেষ করতে হয়েছে পয়েন্ট তালিকার নীচের দিকে। এ বার হাল ফিরবে, আশাবাদী দলের কোচ।

football

রবিবার অনুশীলন ইস্টবেঙ্গলের। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২১:৩৬
Share: Save:

এই নিয়ে চতুর্থ বছর আইএসএল খেলতে নামছে ইস্টবেঙ্গল। আগের তিন বছরে অনেক হতাশা, অনেক কষ্ট-দুঃখ সামলাতে হয়েছে ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের। প্রতি বারই শেষ করতে হয়েছে পয়েন্ট তালিকার নীচের দিকে। ট্রফির লড়াই তো দূর, এক বারও প্লে-অফে উঠতে পারেনি তারা। সেই দৃশ্য এ বছর বদলাবে কি না, তা বোঝা যাবে সোমবার। চলতি আইএসএলের প্রথম ম্যাচে ঘরের মাঠে জামশেদপুরের বিরুদ্ধে নামছে ইস্টবেঙ্গল। সেই লড়াইয়ে সবচেয়ে বড় ভরসা কোনও ফুটবলার নন, কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাত। দায়িত্ব নিয়েই যিনি দলকে তুলেছেন ডুরান্ড কাপের ফাইনালে।

ইস্টবেঙ্গল এবং জামশেদপুর, দুই দলই গত মরশুমে ছিল পয়েন্ট তালিকার নীচের দিকে। ইস্টবেঙ্গল ন’নম্বরে থেকে লিগ শেষ করেছিল। জামশেদপুর শেষ করেছিল দশ নম্বরে। এ বারের আইএসএল দুই দলের সামনেই ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। ডুরান্ড কাপে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগানকে হারানো এবং ফাইনালে ওঠার পরে ইস্টবেঙ্গল এখন আত্মবিশ্বাসী। সেই আত্মবিশ্বাস আইএসএলের মতো কঠিন মঞ্চে কতটা কাজে লাগবে, তার ইঙ্গিত পাওয়া যাবে সোমবারের ম্যাচেই।

আগের বছরগুলির মতো দেরিতে দল তৈরি না করে বিনিয়োগকারী ইমামি এ বার ঢেলে সাজিয়েছে দলকে। কোচ হিসেবে আনা হয়েছে অতীতে আইএসএল জেতা কুয়াদ্রাতকে। তিনি বেশ কয়েক জন তারকা ফুটবলারকে দলে নিয়ে এসেছেন, যাঁদের আইএসএলে অভিজ্ঞতা ও সাফল্য আছে। স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড জেভিয়ার সিভেরিয়ো ও সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার সাউল ক্রেসপোর সঙ্গে হায়দরাবাদ এফসি থেকে এসেছেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার বোরহা হেরেরাও। রয়েছেন আর এক স্প্যানিশ ডিফেন্ডার হোসে পারদো। এ ছাড়া গত মরশুমের দলে থাকা বিদেশি স্ট্রাইকার ক্লেটন সিলভা রয়েছেন। জর্ডান এলসেকেও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চোটের কারণে ছিটকে যাওয়ায় আর এক বিদেশির দরজা খোলা রয়েছে।

কয়েকজন তরুণ ও অভিজ্ঞ ভারতীয় ফুটবলারও নিয়েছে ইস্টবেঙ্গল। নাওরেম মহেশ সিং আগে থেকেই ছিলেন। এ ছাড়া হরমনজ্যোৎ সিং খাবরা, মন্দার রাও দেশাই ও রাইট ব্যাক এডউইন ভ্যান্সপল, নন্দকুমার শেখর, নিশু কুমার ও গোলকিপার প্রভসুখন গিল রয়েছেন।

তবে ম্যাচের আগের দিন ইস্টবেঙ্গলের কোচ কুয়াদ্রাত স্বীকার করে নিলেন, বিপক্ষের সম্পর্কে খুব বেশি কিছু জানেন না। তবে তা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন। কুয়াদ্রাত মনে করেন, তাঁর দল নিজেদের সেরা পারফরম্যান্স দিলেই চলবে। কুয়াদ্রাত বলেছেন, “জামশেদপুর সম্পর্কে আমরা বেশি কিছু জানি না। তবে এটা কোনও অজুহাত নয়। আমাদের পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। ভাল খেলার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। মরশুমের প্রথম ম্যাচ জিততে হবে। এটা কোনও বড় ব্যাপার নয়। আমরা আমাদের মতো খেলব।”

লিগের প্রথম ম্যাচ জেতা যে খুবই জরুরি সেটা জানিয়ে কুয়াদ্রাত বলেন, “সমর্থকদের জন্য তো বটেই, আমাদের জন্যও প্রথম ম্যাচে জিততে হবে। সমর্থকেরা আমাদের পাশে থেকেছেন। তাঁদের কথা ভেবে আমাদের সাফল্য নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। দলের মানসিকতা বদলেছে। ঘরের মাঠে ছ’টা ম্যাচ খেলে ফেলেছি আমরা। তাতে সমর্থকেরা আমাদের পাশে ছিলেন। এ বার তাঁদের কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার পালা।”

ডুরান্ড কাপ ফাইনাল থেকে আইএসএলের শুরু পর্যন্ত যে এক মাসেরও বেশি সময় ছিল তা পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছেন বলে জানালেন কুয়াদ্রাত। তাঁর কথায়, “আমরা এক মাস সময় পেয়েছি অনুশীলনের জন্য। বিভিন্ন সিস্টেম নিয়ে চর্চা হয়েছে। যখন ডুরান্ড খেলেছিলাম, তখন আমাদের জেতার লক্ষ্যে মাঠে নামতে হত এবং ট্রেনিংয়েও সেই লক্ষ্যই থাকত। কিন্তু গত এক মাসে আমরা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাজ করেছি। যদিও মাঝে কিছুটা সময় মহেশ (সিং), লালচুংনুঙ্গা, (প্রভসুখন) গিল, জর্ডন (এলসে)-দের পাইনি। তাতে অসুবিধা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহের প্রস্তুতির পর আমি খুশি। একাধিক ফ্রেন্ডলি ম্যাচে আমরা বিভিন্ন কৌশলে খেলার চেষ্টা করেছি। আমার মনে হয়, দলের ছেলেরা সবাই এগুলো ভালই বুঝতে পেরেছে এবং তার প্রতিফলন মাঠে পড়বে।”

দলের অস্ট্রেলীয় ডিফেন্ডার জর্ডন চোট পেয়ে ছিটকে গিয়েছেন। আর এক তরুণ ডিফেন্ডার লালচুংনুঙ্গা এশিয়ান গেমসে খেলছেন। রক্ষণে এই দুই খেলোয়াড়কে ছাড়াই ইস্টবেঙ্গলকে আইএসএল অভিযান শুরু করতে হলেও বেশি দুশ্চিন্তা করতে রাজি নন কুয়াদ্রাত। বলেন, “প্রথম ছ’টা ম্যাচ আমরা এক রকম পরিকল্পনা নিয়ে খেলেছিলাম। কিন্তু এখন তাতে পরিবর্তন আনতে হচ্ছে। ফুটবলে এমন হয়েই থাকে। এটা অজুহাত হতে পারে না। কেউ খেলতে না পারলে তার জায়গায় অন্য ফুটবলারকে তৈরি রাখতে হয় এবং ভাল খেলতেও হয়। তাদের নিয়েই জেতার চেষ্টা করতে হয়। আমাদের জর্ডান, চুংনুঙ্গার অনুপস্থিতির সমস্যা সামলাতে হবে। জর্ডনের জায়গায় খেলোয়াড় আনার চেষ্টা চলছে। তবে এখন নতুন খেলোয়াড় এনে তাকে দলের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সোজা হবে না। তবু ক্লাব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।”

প্রথম এগারো রাউন্ডের মধ্যে ছ’টি ম্যাচ ঘরের মাঠে খেলতে হবে ইস্টবেঙ্গলকে। এই ছ’টি ম্যাচে তাদের লক্ষ্য কী? লাল-হলুদ কোচ বলেন, “আমরা প্রথম ম্যাচ থেকেই কঠিন প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে চাই। প্রতিটা পয়েন্ট আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের দলের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত খেলেও দু’পয়েন্ট হারানোয় আমি রেগে গিয়েছিলাম। আইএসএলে প্রতিটি পয়েন্ট গুরুত্বপূর্ণ। চোট-আঘাত হোক, জাতীয় দলের জন্য খেলোয়াড় ছাড়তে হোক, আমাদের শক্তি বজায় রাখতে হবে। আর ঘরের মাঠের সুবিধা কাজে লাগাতে হবে। ঘরের মাঠে প্রতিটি ম্যাচ জিততে হবে আমাদের। সব পয়েন্ট পেতে হবে।”

এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে কোচের সঙ্গে ছিলেন অধিনায়ক হরমনজ্যোৎ সিং খাবরা। ইস্টবেঙ্গলে ফিরেছেন সাত বছর পরে। লাল-হলুদ বাহিনীর হয়ে ৭৮টি ম্যাচ খেলেছেন। গত তিন মরশুমে ব্যর্থতার পরে ইস্টবেঙ্গলের সামনে আসা এই ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে খাবরা বলেন, “পেশাদারদের সবসময়ই কড়া চ্যালেঞ্জ সামলাতে হয়। এটা আমি সারা জীবন দিয়ে শিখেছি। বেঙ্গালুরুতে যখন খেলতাম, তখনও অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। কেউ মনে করত না, আমি একজন বল প্লেয়ার। কেরালা ব্লাস্টার্সে খেলার সময় একেবারে নীচ থেকে উঠে এসে আমরা ফাইনালে পৌঁছই। এই চ্যালেঞ্জগুলোর মোকাবিলা সারা জীবনই করেছি। কোচ আমাকে যে বড় দায়িত্ব দিয়েছেন, তা পালন করাটাই আমার কাছে বড় কাজ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ISL 2023-24 East Bengal Carles Cuadrat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE