মেসিদের হার আর অঘটন নয়। ফাইল ছবি
সৌদি আরবের কাছে আর্জেন্টিনার হার। জাপানের কাছে জার্মানির হার। পর পর দু’দিন এশিয়া দুই দেশের কাছে বিশ্ব ফুটবলের দুই মহাশক্তিধর দেশের পতন হয়েছে। অনেকেই একে অঘটন হিসাবে দেখছেন। ফিফার ক্রমতালিকায় হয়তো দু’টি দেশের অনেক পার্থক্য। কিন্তু ফুটবল মাঠে উপরের দিকে থাকা দলগুলিকে অনায়াসে হারিয়ে দিচ্ছে তারা। ফুটবল বিশ্লেষকদের মতে, এখনকার পরিস্থিতিতে এই ফলাফলকে অঘটন মনে করা হলেও, আর কয়েক বছর পর তা স্বাভাবিক হয়ে যাবে। অর্থাৎ, এশিয়ার দলগুলি বড় কোনও দেশকে হারালেও তাকে আর অঘটন বলা হবে না। কেন এই ফলাফল অস্বাভাবিক নয়, তার কারণ খুঁজে দেখল আনন্দবাজার অনলাইন:
এক, টেকনিক্যালি এগিয়ে থাকা: গত কয়েক বছর ধরে টেকনিক্যালি এশিয়ার দেশগুলি অনেক এগিয়েছে। পরিকাঠামোর উন্নতি হয়েছে। তৃণমূল স্তর থেকে ফুটবলার তুলে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নির্দিষ্ট একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে বছরের পর বছর যাওয়ার পর তবেই জাতীয় দলে শিকে ছিঁড়ছে তাঁদের। ফলে বিশ্বমঞ্চে নামার আগেই অনেকটা তৈরি হয়ে যাচ্ছেন ফুটবলাররা। কোনও শক্তিকেই আর ভয় পাচ্ছেন না। জাপানকে সত্তরের দশকে শ্যাম থাপার ভারত অনায়াসে হারিয়েছে। তার পর থেকে জাপান এগিয়েছে, ভারত পিছিয়েছে।
দুই, নিয়মিত বিদেশি লিগে খেলা: জাপানের যে দল জার্মানিকে হারিয়েছে, তাদের অন্তত ছ’জন বিদেশি লিগে খেলেন। জাপানের দুই গোলদাতা রিৎসু দোয়ান এবং তাকুমা আসানো জার্মানির ঘরোয়া লিগে নিয়মিত খেলেন। ফলে বিপক্ষের ফুটবলারদের সম্পর্কে একটা ধারণা ছিলই তাঁদের। জাপানের তাকুমি মিনামিনো লিভারপুল হয়ে এখন ফ্রান্সের ক্লাব মোনাকোতে। ফলে বিশ্ব ফুটবলে কোন দেশের কে কেমন খেলেন, সে সব তাঁদের নখদর্পণে। বিশ্বকাপে খেলতে গিয়ে সেটারই প্রতিফল দেখা যাচ্ছে।
তিন, দীর্ঘ দিন একসঙ্গে থাকা: সৌদি আরবের জাতীয় দলের ৯ জন ফুটবলার খেলেন আল-হিলালে। ফলে জাতীয় দলে খেলতে এলেও তাঁদের বোঝাপড়া নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। শুধু তাই নয়, বিশ্বকাপের আগে বাকি ফুটবলাররা যখন ক্লাব ফুটবল খেলতে ব্যস্ত, তখন সৌদি আরবের ফুটবলাররা টানা এক মাস প্রস্তুতি নিয়েছেন। বিপক্ষের দলগুলিকে কাটাছেঁড়া করেছেন। তার প্রভাব পড়েছে খেলাতেও।
চার, ছোট সুযোগও কাজে লাগানো: সৌদি আরব এবং জাপানের বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনা এবং জার্মানির দাপট দেখা গিয়েছে। দ্বিতীয়ার্ধে কেন তা হলে সেই দাপট বজায় রাখা গেল না? এর কারণ, সামান্য সুযোগ পেলেও কাজে লাগিয়েছে জাপান, সৌদি। তারা জানত বড় প্রতিপক্ষ মোটেই ম্যাচে সুযোগ দেবে না। ফলে ‘ক্লিনিক্যাল ফিনিশিং’ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে তাদের খেলায়। একটা সুযোগ, তাতেই গোল। এটাই সাফল্যের মন্ত্র। আর্জেন্টিনা এবং জার্মানি একের পর এক সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে পারেনি।
পাঁচ, জাপান, সৌদিকে হালকা ভাবে নেওয়া: আর্জেন্টিনা এবং জার্মানির সবচেয়ে বড় ভুল হল, এশিয়ার দল হওয়ায় জার্মানি এবং জাপানকে হালকা ভাবে নেওয়া। এ কথা কেউই অস্বীকার করতে পারবেন না যে, দু’দলের খেলাতেই দ্বিতীয়ার্ধে মরিয়া প্রচেষ্টা দেখা যায়নি। পিছিয়ে পড়ার পরেই তেড়েফুঁড়ে উঠতে দেখা গিয়েছে। তত ক্ষণে জাপান বা সৌদি রক্ষণ জমাট করে ফেলে প্রত্যাবর্তনের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy