Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
প্রতিপক্ষ প্রহরী 
SC East Bengal

ISL 2021-22: রক্ষণের ভুলেই জয় হাতছাড়া লাল-হলুদের

জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ৪-৪-২ ছকে দল সাজিয়েছিলেন ম্যানুয়েল।

মরিয়া: অমীমাংসিত ম্যাচেও নজর কাড়লেন লাল-হলুদের আন্তোনিয়ো পেরোসেভিচ। রবিবার।

মরিয়া: অমীমাংসিত ম্যাচেও নজর কাড়লেন লাল-হলুদের আন্তোনিয়ো পেরোসেভিচ। রবিবার। ছবি এসসি ইস্টবেঙ্গল।

ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২১ ০৯:০৩
Share: Save:

আইএসএল

এসসি ইস্টবেঙ্গল ১ জামশেদপুর এফসি ১

এগিয়ে থেকেও জিততে না পারার রোগ এই মরসুমেও সারল না এসসি ইস্টবেঙ্গলের! রক্ষণের ভুলেই ফের জয় হাতছাড়া লাল-হলুদের।

রবিবারই এই মরসুমে এসসি ইস্টবেঙ্গলের প্রথম ম্যাচ ছিল। তাই খেলা শুরু হওয়ার আগে একটু দুশ্চিন্তা হচ্ছিল। একটা সময় আইএসএলে লাল-হলুদের খেলা নিয়েই প্রবল সংশয় তৈরি হয়েছিল। দীর্ঘ টানাপড়েনের পরে যখন লগ্নিকারী সংস্থার কর্তারা দল গড়ে আইএসএলে খেলার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন, তখন একটু স্বস্তি পেলেও আশঙ্কা হচ্ছিল। কেমন হল দল? এই আইএসএলে কি স্বমহিমায় দেখা যাবে লাল-হলুদকে?

রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় টেলিভিশনে জামশেদপুর এফসির বিরুদ্ধে ম্যাচটা দেখতে দেখতে বারবারই মনে হচ্ছিল, মাঝমাঠে কোনও ব্লকার না থাকায় সমস্যায় পড়তে পারে এসসি ইস্টবেঙ্গল। কারণ, জামশেদপুরের কোচ আওয়েল কয়েল দল সাজিয়েছিলেন ৪-৩-৩ ছকে। বিপক্ষের আক্রমণাত্মক খেলার পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়ার জন্য দুই স্টপারের সামনে এক জন রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার অত্যন্ত জরুরি। না হলেই রক্ষণের উপরে প্রবল চাপ পড়বে। টানা নব্বই মিনিট তা সামলানো খুবই কঠিন হবে। বিশেষ করে, বিপক্ষে যখন নেরিউচ ভাল্সকিসের মতো ভয়ঙ্কর স্ট্রাইকার রয়েছে।ঠিক সেটাই হল। বিপক্ষের আক্রমণের সামনে বারবার ভেঙে পড়ল লাল-হলুদের রক্ষণ।

বুঝলাম না অঙ্কিত মুখোপাধ্যায়কে দলে না রেখে মহম্মদ রফিককে মাঝমাঠের পরিবর্তে রাইটব্যাকে খেলানোর ঝুঁকি কেন নিলেন স্পেনীয় কোচ ম্যানুয়েল দিয়াস? ও দারুণ লড়াই করতে পারে। গত মরসুমেও রবি ফাওলার বেশ কয়েকটি ম্যাচে রফিককে ব্লকার হিসাবে ব্যবহার করে সফল হয়েছিলেন।

জামশেদপুরের বিরুদ্ধে ৪-৪-২ ছকে দল সাজিয়েছিলেন ম্যানুয়েল। আক্রমণভাগে ড্যানিয়েল চিমার সঙ্গে আন্তোনিয়ো পেরোসেভিচ। রক্ষণে দুই বিদেশি টমিস্লাভ মর্সেলা ও ফ্রানিয়ো পর্চে। লেফ্টব্যাক হীরা মণ্ডল। মাঝমাঠে বিকাশ জাইরুর সঙ্গে লালরিনলিয়ানা হানামতে, সৌরভ দাস ও ওয়াহেংবাম লুয়াং। কেন প্রতিশ্রুতিমান অমরজিৎ সিংহ কিয়াম, অভিজ্ঞ জ্যাকিচন্দ্র সিংহকে শুরু থেকে খেলালেন না লাল-হলুদ কোচ, তা আমার কাছে রহস্য। রক্ষণ মজবুত করে প্রতিআক্রমণ নির্ভর খেলার রণনীতি নেওয়ার কোনও কারণ ছিল বলে আমার মনে হয়নি।

এই মরসুমে প্রথমবার লাল-হলুদের খেলা দেখছি। এর আগে অনুশীলন ম্যাচ দেখারও সুযোগ হয়নি। শুনেছিলাম, লাল-হলুদের তুরুপের তাস নাকি চিমা। কিন্তু প্রথম ম্যাচে ওকে দেখে হতাশই হয়েছি। ওকেরি চিমার সঙ্গে নামের মিলটাই শুধু রয়েছে। খেলায় সেই তেজটা দেখলাম না। হয়তো প্রথম ম্যাচ বলেই।

চিমা হতাশ করলেও বেশি ভাল লেগেছে আর এক স্ট্রাইকার আন্তোনিয়োকে। ২৯ বছর বয়সি ক্রোয়েশীয় স্ট্রাইকারের ছটফটানি বারবার অস্বস্তিতে ফেলছিল জামশেদপুরের ডিফেন্ডারদের। আন্তোনিয়োর সৌজন্যেই ১৭ মিনিটে এগিয়ে যেতে পেরেছিল এসসি ইস্টবেঙ্গল। বিকাশের কর্নার থেকে উড়ে আসা বল জামশেদপুরের গোলরক্ষক রেহনেস টি পি-র হাতে লেগে আন্তোনিয়োর কাছে গেলে গোল লক্ষ্য করে শট নেয়। জটলার মধ্যে থেকে সেই বল অসাধারণ ব্যাকভলিতে জালে জড়িয়ে দেয় পর্চে। ইটালির লাজ়িয়োতে খেলা লাল-হলুদ ডিফেন্ডারের কৃতিত্বকে বিন্দুমাত্র খাটো না করে বলছি, এই গোলের জন্য রেহনেস সম্পূর্ণ ভাবে দায়ী। প্রাক্তন গোলরক্ষক হিসাবে আমি মনে করি, প্রথমত ওর উচিত ছিল বলটা গ্রিপ করা। তা না হলে ঘুসি মেরে বল বিপদসীমার বাইরে পাঠানো। দায়সারা ভাবে রেহনেস শুধু বলে হাত ছুঁইয়েছিল।

১৭ মিনিটের মধ্যে আমার প্রিয় দল এগিয়ে যাওয়ার পরে দারুণ আনন্দ হওয়ার পাশাপাশি চিন্তাও হচ্ছিল। কারণ, জামশেদপুর এ বার আরও মরিয়া হয়ে উঠবে সমতা ফেরানোর জন্য। আমার আশঙ্কাই ঠিক। প্রথমার্ধের সংযুক্ত সময়ে লাল-হলুদ রক্ষণের ভুলেই ১-১ করে দেয় পিটার হার্টলি। জামশেদপুরের কর্নার পাওয়ার পরে দীর্ঘদেহী এই ডিফেন্ডার কখন যে উঠে এসেছিল, তা সম্ভবত খেয়ালই করেনি এসসি ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্ডাররা। আলেকজ়ান্ডার লিমার ভাসিয়ে দেওয়া বলে প্রথমে হেড করে ভাল্সকিস। লাফিয়ে ওঠা বল কার্যত বিনা বাধায় জালে জড়িয়ে দেয় জামশেদপুর অধিনায়ক।

দ্বিতীয়ার্ধে লাল-হলুদ কোচের বোধোদয় হয়। অমরজিৎ ও জ্যাকিকে নামালেন। চিমার পরিবর্তে আমির দেরভিচেভিচ। সংযুক্ত সময়ে রেহনেসকে গোল ছেড়ে এগিয়ে আসতে দেখে মাঝমাঠ থেকে অসাধারণ শট নিয়েছিল জ্যাকি। অল্পের জন্য বল ক্রসবারের উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। কিন্তু ম্যানুয়েল রণকৌশলে কোনও পরিবর্তন করেননি। অরিন্দম অবধারিত ভাবে গোল না বাঁচালে হারের যন্ত্রণা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হত লাল-হলুদকে। এই ম্যাচের পরে ২৭ নভেম্বর এটিকে-মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ডার্বির কথা ভাবলেই রক্তচাপ বেড়ে যাচ্ছে। রয় কৃষ্ণ, হুগো বুমোসরা
আরও ভয়ঙ্কর।

এখনও অনেক সময় আছে। জামশেদপুর ম্যাচের ভুল থেকে শিক্ষা নিন ম্যানুয়েল।

এসসি ইস্টবেঙ্গল: অরিন্দম ভট্টাচার্য, মহম্মদ রফিক, টমিস্লাভ মর্সেলা, ফানিয়ো পর্চে, হীরা মণ্ডল, লালরিনলিয়ানা হানামতে (জ্যাকিচন্দ্র সিংহ), সৌরভ দাস (জয়নের লরেন্সো), ওয়াহেংবাম লুয়াং (অমরজিৎ সিংহ কিয়াম), বিকাশ জাইরু, আন্তোনিয়ো পেরোসেভিচ ও ড্যানিয়েল চিমা (আমির দেরভিসেভিচ)।

অন্য বিষয়গুলি:

SC East Bengal Jamshedpur FC ISL 2021-22
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE