Advertisement
২৭ মে ২০২৪
Sports

Kalyan Chaubey: ফেভারিট কল্যাণ চৌবের ডাকে বুধবার সভা দিল্লিতে

প্রভাবশালী কর্তাদের হাতে থাকা তথ্য অনুযায়ী, ৩৬টি রাজ্য সংস্থার মধ্যে অন্তত ২৪-২৫টি সংস্থার কর্তারা রাজধানীতে এই সভায় যোগ দিতে চলেছেন।

চর্চায়: ভাইচুংয়ের সঙ্গে দ্বৈরথে এগিয়ে কল্যাণ।

চর্চায়: ভাইচুংয়ের সঙ্গে দ্বৈরথে এগিয়ে কল্যাণ। ফাইল চিত্র।

সুমিত ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২২ ০৮:১৪
Share: Save:

সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের মসনদে বসার দৌড়ে প্রথম থেকেই ফেভারিট থাকা কল্যাণ চৌবে আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে গেলেন। আর তার সব চেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে, আজ, বুধবার নয়াদিল্লিতে ৩৬টি রাজ্য সংস্থার কর্তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি। বিভিন্ন সংস্থার কর্তাদের কাছে আমন্ত্রণ তো গিয়েইছে, কাউকে কাউকে টিকিটও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে দিল্লি আসার। প্রভাবশালী কর্তাদের হাতে থাকা তথ্য অনুযায়ী, ৩৬টি রাজ্য সংস্থার মধ্যে অন্তত ২৪-২৫টি সংস্থার কর্তারা রাজধানীতে এই সভায় যোগ দিতে চলেছেন।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে ৩৬টি রাজ্য সংস্থারই শুধু ভোটাধিকার থাকছে। সিওএ (কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স) প্রস্তাবিত ৩৬টি রাজ্য সংস্থার সঙ্গে ৩৬ জন প্রাক্তন ফুটবলারকে ভোটাধিকার দেওয়া হয়নি। যার অর্থ, নির্বাচনী যুদ্ধে যার দিকে ১৯টি রাজ্য সংস্থার ভোট থাকবে, তিনিই নতুন এআইএফএফ প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে। সেই জায়গায় ২৪-২৫টি রাজ্য সংস্থাকে হাজির করিয়ে দিতে পারলে কল্যাণের নির্বাচনী ম্যাচ একস্ট্রা টাইম বা টাইব্রেকার পর্যন্ত গড়ানোর ব্যাপার নেই। ২৪-২৫ জনের সকলেই যে ব্যালট বাক্সে সমর্থন জানাবে, তার নিশ্চয়তা নেই। তবে হুড়মুড়িয়ে সকলে যে ছুটে আসছে, সেটাও যে বেশ ইঙ্গিতবাহী!

গোলকিপার কল্যাণকে যিনি ‘গোল’ দেওয়ার শপথ নিচ্ছিলেন সেই ভাইচুং ভুটিয়ার সম্ভাবনা আপাতত বেশ কিছুটা ধাক্কা খেয়েছে। যে-হেতু ফুটবলারদের ভোটাধিকার দেওয়া হয়নি। রাজ্য সংস্থাগুলির মধ্যে এখনও সে রকম প্রভাব বিস্তার করে উঠতে পারেননি ভাইচুং। প্রস্তাব এবং সমর্থন করার মতো দু’টি রাজ্য এখনও তিনি পেয়ে যেতে পারেন। তা হলেই শুক্রবার থেকে শুরু নতুন মনোনয়নও জমা দিতে পারবেন। কিন্তু গোলরক্ষকের ডাকা সভায় যদি বুধবার সত্যিই এমন নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখা যায়, তার পরেও গোলমেশিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কি না, তা দেখার।

ভাইচুং যেখানে সব চেয়ে বেশি ফুটবল খেলেছেন, সেই বাংলার শীর্ষ কর্তারাও যাচ্ছেন বুধবারের বৈঠকে যোগ দিতে। আইএফএ প্রেসিডেন্ট অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যাচ্ছেন সুব্রত (বাপী) দত্ত। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাদা অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। শুক্রবার থেকে চালু হবে নতুন মনোনয়ন। ফের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার আবেদন তিনি করবেন কি না, তা দেখার। আর সুব্রত দত্তদের দিক থেকে বিজেপি হাইকম্যান্ড সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে এই মুহূর্তে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী দাঁড় করানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ।

সংস্থার নির্বাচনে প্রাচীন প্রথা হল, ভোটার-সদস্যদের আমন্ত্রণ জানিয়ে আগেই প্যারেড করিয়ে পেশিশক্তি দেখিয়ে দাও। যাতে সকলের কাছে পরিষ্কার বার্তা চলে যায় যে, ব্যালট বাক্স কে বা কারা নিয়ন্ত্রণ করতে চলেছে। আপাতত এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের আসন্ন নির্বাচনে নেপথ্যে থেকে ব্যালট বাক্স নিয়ন্ত্রণ করছে বিজেপি। পার্টির হাইকম্যান্ডের অনুমোদন নিয়েই যে কল্যাণ মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, তা নিয়েও সংশয় না রাখাই ভাল। কারণ কল্যাণ নিজে বিজেপি পার্টির সদস্য, সাধারণ নির্বাচনেও লড়েছেন। তাঁর মনোনয়ন প্রস্তাব করেছে গুজরাত। নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের রাজ্যের প্রতিনিধি হয়ে আসার চেয়ে জোরালো বার্তা আর কিছু হতে পারে না বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। সূত্রের খবর, ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানে খেলা প্রাক্তন গোলকিপার মনোনয়ন জমা দেওয়ার আগেই বিভিন্ন রাজ্য সংস্থায় সর্বোচ্চ স্তর থেকে ফোন চলে গিয়েছে সমর্থনের কথা জানিয়ে। সর্বভারতীয় ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচনের ইতিহাসে বরাবর এই ফোনগুলি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাধবরাও সিন্ধিয়া হোক কী জগমোহন ডালমিয়া কী শরদ পওয়ার— ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের ধুন্ধুমার সব নির্বাচনেও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে থাকা ভোট নিশ্চিত করার লড়াই চলেছে। কলকাতায় ক্রিকেট বোর্ডের হাড্ডাহাড্ডি নির্বাচনে ডালমিয়া-পক্ষ হেরে যান কেন্দ্রের সমর্থন শরদ পওয়ার জিতে নেওয়ায়।

ক্রিকেটে শেষ বারও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বোর্ড প্রেসিডেন্ট হওয়ার নেপথ্যে শাহ-সমর্থনই ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছিল বলে মনে করা হয়। ফুটবলের আসন্ন নির্বাচনও সেই পথে এগোলে অবাক হওয়ার থাকবে না। তবে সৌরভ ও কল্যাণের মধ্যে বড় তফাত, বেহালার বাঁ হাতি কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। কল্যাণ সরাসরি বিজেপি পার্টির সদস্য এবং নির্বাচনেও লড়েছেন। বোর্ড প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরেও নানা গুঞ্জন চলেছে যে, সৌরভ বিজেপিতে যোগ দিতে পারেন। প্রাক্তন অধিনায়ক রাজনীতির ময়দানে নামেননি।

প্রভাবশালী কারও কারও ব্যাখ্যা, ‘‘কর্তাদের বিরুদ্ধে যে রকম পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তাতে খেলোয়াড়-মুখ আনার কথা ভাবা হচ্ছে। সেই কারণেই সংস্থায় দীর্ঘদিন যুক্ত কোনও কর্তার চেয়ে কল্যাণের মতো প্রাক্তন ফুটবলারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।’’ এই ব্যাখ্যাকে একেবারে উড়িয়েও দেওয়া যাচ্ছে না কারণ, সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনে প্রচুর আর্থিক দুর্নীতির খোঁজও পেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটি অব অ্যাডমিনিস্ট্রেটর্স। ফিফার নির্বাসন তুলতে সর্বোচ্চ আদালত সেই কমিটিকে নিষ্ক্রিয় করে দিলেও শুনানির সময় সিওএ আইনজীবীরা জানিয়েছেন, সংস্থায় এত দিন ধরে বসে থাকা কর্তাদের উপস্থিতিতে প্রচুর টাকার হেরাফেরির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। সেই তদন্ত সম্পূর্ণ করার আবেদনও জানিয়েছে সিওএ। কারও কারও আশঙ্কা, ফিফার নির্বাসনদণ্ডে তৈরি হওয়া আতঙ্কে না দুর্নীতির ‘স্বচ্ছ অভিযান’-ই বন্ধ হয়ে যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sports Kalyan Chaubey bhaichung bhutia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE