সৌজন্য: ম্যাচ শেষে গুরপ্রীতের সঙ্গে বিশাল কাইত। আইএসএল
তাঁর দু’হাতের উপরে ভর করেই হায়দরাবাদ এফসিকে হারিয়ে আইএসএলের ফাইনালে উঠেছিল এটিকে-মোহনবাগান। শনিবার গোয়ার ফতোরদায় বেঙ্গালুরু এফসিকে টাইব্রেকারে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নেপথ্যেও অন্যতম কারিগর সবুজ-মেরুনের শেষ প্রহরী বিশাল কাইত।
যুবভারতীর মতো গোয়ার স্টেডিয়ামের গ্যালারি থেকে খেলা শুরু হওয়ার আগেই মোহনবাগান গোলরক্ষকের ছবি দেওয়া বিশাল ব্যানার ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন সবুজ-মেরুন সমর্থকরা। নীচে লেখা ছিল ‘আওয়ার ফ্লাইং কাইট’ (আমাদের উড়ন্ত ঘুড়ি)! ব্রুনো সিলভার শট ডান দিকে ঘুড়ির মতোই উড়ে গিয়ে আটকালেন তিনি। ফাইনালের অনেক আগেই আইএসএলে এই মরসুমের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার জিতে নিয়েছেন তিনি। ফাইনালে অনবদ্য খেলে দলকে জিতিয়েও অবশ্য বাড়তি উচ্ছ্বাস নেই বিশালের। জাতীয় দলে যে তাকে অতিরিক্ত তালিকায় রেখেছেন কোচ ইগর স্তিমাচ। উৎসবের রাতেও উপেক্ষার যন্ত্রণা ক্ষতবিক্ষত করছে মোহনবাগান গোলরক্ষকের হৃদয়।
হিমাচল প্রদেশের শিমলা জেলার রোহরুতে জন্ম বলেই হয়তো আশ্চর্যরকম বরফ শীতল মানসিকতা বিশালের। বলছিলেন, ‘‘গোলরক্ষক হিসেবে আমার দায়িত্ব গোল আটকানো। নিজের কাজটা ঠিক মতো করতে পেরেছি বলে ভাল লাগছে।’’ শনিবারও টাইব্রেকার শুরু হওয়ার আগে গোলরক্ষক কোচ আঙ্খেল পিনদাদোর সঙ্গে একান্তে কথা বলছিলেন বিশাল। এ দিনও বললেন, ‘‘আমাদের গোলরক্ষক কোচের কাছেই বিপক্ষের কে কী ভাবে পেনাল্টি মারে, সব তথ্য থাকে। তাই ওর পরামর্শ নিচ্ছিলাম।’’ অসাধারণ খেলা সত্ত্বেও জাতীয় দলে ডাক না পাওয়ায় হতাশ নন? বিশাল এর আগেও যা বলেছিলেন, তারই পুনরাবৃত্তি করলেন, ‘‘আমার কাজ প্রতি ম্যাচেই নিজের সেরাটা দেওয়া। বাকিটা কোচের সিদ্ধান্ত। তবে এই রাত বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে থাকবে আমার জীবনে। এই সাফল্য উৎসর্গ করছি আমার পরিবারকে।’’
ফাইনাল দেখতে আসা সর্বভারতীয় ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কল্যাণ চৌবেকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করলে বললেন, ‘‘হাল ছাড়লে চলবে না। বিশালকে এগিয়ে যেতে হবে।’’
মোহনবাগানের আইএসএল জয়ের আর এক নায়ক দিমিত্রি পেত্রাতোস। ১৪ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন। ম্যাচ শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে ফের পেনাল্টি থেকেই ২-২ করেন দিমিত্রি। ম্যাচের পরে উচ্ছ্বসিত অস্ট্রেলীয় তারকা বললেন, ‘‘ভারতে অভিষেকের মরসুমেই ট্রফি জয় আমার জীবনের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি। এই জয় আমার পরিবার, সমর্থক ও দলের সকল সদস্যকে উৎসর্গ করছি।’’
তিনটি পেনাল্টিই নিখুঁত ভাবে একই জায়গা দিয়ে জালে জড়িয়ে দেওয়ার রহস্য কী? হাসতে হাসতে দিমিত্রি বললেন, ‘‘প্রথম গোলটা করার পরেই ঠিক করে নিয়েছিলাম, ফের যদি পেনাল্টি পাই একই জায়গা দিয়ে মারব। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিপক্ষের গোলরক্ষকের ধারণা হয়, একই জায়গায় কখনও পেনাল্টি কেউ মারবে না।’’ দিমিত্রির কথা শেষ হওয়ার আগেই তাঁকে ড্রেসিংরুমে টেনে নিয়ে গেলেন কিয়ান নাসিরি।
ফুটবলারদের উচ্ছ্বাস দেখে হাসছিলেন কোচ জুয়ান ফেরান্দোও। বরফ জলে তাঁকে স্নান করিয়ে দিয়েছেন লিস্টন কোলাসোরা। চ্যাম্পিয়ন লেখা ভেজা টি-শার্ট পরেই অধিনায়ক প্রীতম কোটালকে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে এসে স্পেনীয় কোচ বললেন, ‘‘অনেক দিন পরে আজকের রাতটা আমি ভাল করে ঘুমোতে চাই।’’ আইএসএলের মাঝপথে মোহনবাগানে তাঁর ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল। সমালোচকদের কী বলবেন এখন? হাসতে হাসতে জুয়ান বললেন, ‘‘সমালোচকরা সমালোচনা করবেনই। ওঁদের জবাব দিয়ে আমি নিজের শক্তি ক্ষয় করতে চাই না। আমার লক্ষ্য এ বার সুপার কাপেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য দলকে প্রস্তুত করা।’’
আইএসএলে এই মরসুমে সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার সোনার বুট পেয়েছেন ওড়িশার দিয়েগো মরিসিয়ো। সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছেন মুম্বইয়ের লালরিনজ়ুয়ালা ছাংতে। সেরা প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছেন বেঙ্গালুরুর শিবশক্তি নারায়ণন। সেরা ক্লাব এটিকে-মোহনবাগান ও বেঙ্গালুরু এফসি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় ছয় কোটি টাকা পেল এটিকে-মোহনবাগান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy