মধ্যমণি: ভারতীয় বোলিংয়ের নেতা। মেলবোর্নে প্রথম সকালে তিনিই ধাক্কা দেন অস্ট্রেলিয়াকে। দ্বিতীয় ইনিংসে স্টিভ স্মিথকে আউট করেন। দু’ইনিংস মিলিয়ে সংগ্রহ ছয় উইকেট। গেটি ইমেজেস
মেলবোর্নে ভারতের ঘুরে দাঁড়ানোর কাহিনি নতুন নয়। ১৯৭৭ ও ১৯৮১ সালের দু'টি সফরেই সিরিজে পিছিয়ে পড়ে ঘুরে দাঁড়ায় ভারত। মঙ্গলবারও মেলবোর্ন সাক্ষী থাকল আরও এক ঐতিহাসিক জয়ের।
গত ম্যাচেই যে দল ৩৬ রানে অলআউট হওয়ার লজ্জা নিয়ে মাঠে নেমেছিল, যে দলে ছিলেন না বিরাট কোহালি অথবা রোহিত শর্মার মতো তারকা। চোটের জন্য ছিটকে গিয়েছেন মহম্মদ শামিও, বিশেষজ্ঞেরাও সেই ভারতীয় দলের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করার আস্থা ছিল এক অদম্য নেতার মধ্যে। মঙ্গলবারের মেলবোর্ন সাক্ষী থাকল তাঁর দলেরই মরিয়া লড়াইয়ের।
সেই অদম্য নেতা অবশ্যই অজিঙ্ক রাহানে। '৮১ সালের বিজয়ী দলের সদস্যেরা তাঁর নেতৃত্বে মুগ্ধ। দিলীপ বেঙ্গসরকর ও কারসন ঘাউড়ি তো বলেই দিলেন, ভারতের অন্যতম সেরা প্রত্যাবর্তন হিসেবে দেখা যেতে পারে এই ম্যাচকে।
মেলবোর্নে অন্যতম সফল ভারতীয় ব্যাটসম্যান গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ জানিয়েছেন, অন্যান্য ম্যাচের সঙ্গে এই জয়কে এক সুতোয় বাঁধা যায় না। '৭৭ সালে দুই ইনিংসেই হাফসেঞ্চুরি ছিল বিশ্বনাথের। '৮১ সালের মেলবোর্ন টেস্টে ভারতের প্রত্যেকে যখন ব্যর্থ, বিশ্বনাথ একাই করেছিলেন ১১৪ রান। ভারতের দুরন্ত জয় দেখে তিনি বলেন, “মেলবোর্ন আমাদের পয়া মাঠ। এখানকার উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য আদর্শ। কিন্তু এই ম্যাচের পিচ একেবারেই সহজ ছিল না। রাহানের অদম্য ইনিংসের জন্যেই এই ম্যাচ জেতা সম্ভব হয়েছে।”
'৮১ সালের সেই মেলবোর্ন টেস্টে বিশ্বনাথের সঙ্গে জুটি গড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করেন দিলীপ বেঙ্গসরকর। তাঁর মতে, সে ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পের সঙ্গে এই কাহিনির তুলনা চলে না। দুই প্রজন্মে ক্রিকেট অনেক পাল্টে গিয়েছে। বেঙ্গসরকর বলছিলেন, “গত ম্যাচে ৩৬ রানে অলআউট হওয়ার কলঙ্ক গায়ে নিয়ে নেমেছিল ভারত। কতটা চাপ অতিক্রম করতে পারলে এ রকম একটি ম্যাচ জেতা সম্ভব তা অনেকেই ধারণা করতে পারবেন না। অবশ্যই সর্বকালের অন্যতম সেরা প্রত্যাবর্তন হিসেবে ইতিহাসের পাতায় থেকে যাবে এই ম্যাচ। ভারত দেখিয়ে দিল, কোহালি নির্ভরতা তারা কাটিয়ে উঠতে পেরেছে।”
বেঙ্গসরকরদের সেই ম্যাচে দ্বিতীয় ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়ে ভারতকে ৫৯ রানে জিততে সাহায্য করেন কপিল দেব। যদিও অস্ট্রেলীয় শিবিরে প্রথম ধাক্কা দিয়ে যান কারসন ঘাউড়ি। তাঁর বিরুদ্ধে প্রথম বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান বিপক্ষ অধিনায়ক গ্রেগ চ্যাপেল। ওপেনার জন ডাইসনকেও ফেরান ঘাউড়ি। প্রাক্তন বাঁ-হাতি পেসার মনে করেন, সে ম্যাচে তাঁর পারফরম্যান্সের চেয়ে কিছুটা হলেও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ যশপ্রীত বুমরা ও আর অশ্বিনের দাপট। ঘাউড়ির কথায়, “বুমরার জন্য ভারতকে ভয় পেতে শুরু করেছে প্রত্যেকটি দল। অশ্বিনকে হাল্কা ভাবে নেওয়ার ফলও পেয়ে গিয়েছে স্মিথ, লাবুশেনরা। দ্বিতীয় ইনিংসে একজন বোলার কম থাকার পরেও যে দুর্বলতা বোঝা গেল না, এটাই দলগত সাফল্যের উদাহরণ। যাই হয়ে যাক, এই ভারত হাল ছাড়ে না। অস্ট্রেলিয়ায় শীতকালীন ছুটি কাটানোর রীতি আর নেই। ওদের মাঠে ওদের হারানোর জন্যই অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে ভারত।”
বাঁ-হাতি স্পিনার দিলীপ দোশি '৮১ সালের ঐতিহাসিক ম্যাচে মোট পাঁচ উইকেট নেন। স্পিনার হিসেবেও যে অস্ট্রেলিয়ায় সফল হওয়া যায় তা চন্দ্রশেখরের পরে দেখিয়েছিলেন দোশি। প্রাক্তন বাঁ-হাতি স্পিনার মনে করেন, সেই রীতি বজায় রেখেছেন অশ্বিন ও জাডেজা। দোশির কথায়, “স্পিনাররা আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়ে বল করেছে। মেলবোর্নের পিচে স্পিনাররা অতিরিক্ত বাউন্স পায়, তাই এই রণনীতিই ঠিক। অশ্বিন ও জাডেজা দেখিয়ে দিল, অস্ট্রেলিয়ায় সাফল্যের জন্য পেসার হওয়ার দরকার পড়ে না।”
চারজনের মুখেই নেতা রাহানের অদম্য মনোভাবের প্রশংসা শোনা গেল। তাঁদের কেউই রাহানের এই ইস্পাত-কঠিন মানসিকতার সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy