মোটিভেটর: অধিনায়ক বিরাটের ভূয়সী প্রশংসা করলেন আলি ব্যাখার।
ওয়ান্ডারার্সে ‘বিপজ্জনক’ উইকেট তৈরি করার সিদ্ধান্তকে এক হাত নিলেন দক্ষিণ আফ্রিকারই প্রাক্তন অধিনায়ক এবং অতীতের সর্বময় ক্রিকেট প্রশাসক আলি ব্যাখার। শুক্রবার তৃতীয় দিনের খেলা চলাকালীন আনন্দবাজার-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলে দিলেন, ‘‘চোদ্দো বছর ধরে আমি ওয়ান্ডারার্সে ক্রিকেট খেলেছি। এখানে কখনও এ রকম পিচ দেখিনি। কখনও বল এতটা বাঁক খেতে দেখিনি। এ রকম অসমান বাউন্স দেখিনি। ব্যাট এবং বলের লড়াইয়ে ভারসাম্য কোথায় এখানে?’’
আইসিসি-র কি উচিত এই ধরনের পিচের ক্ষেত্রে কড়া রিপোর্ট দেওয়া? ব্যাখার নিজের দেশকে আড়াল করতে গেলেন না। বরং বলে দিলেন, ‘‘আইসিসি-র অবশ্যই উচিত কড়া বার্তা পাঠানো। যদি টেস্ট ক্রিকেটকে রক্ষা করতে হয়, পাঁচ দিন পর্যন্ত যাতে খেলা গড়ায়, সেটাও তো নিশ্চিত করতে হবে।’’ তার পরেই তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘এখানে টেস্ট শুরু হয়েছে বুধবারে। সব চেয়ে বেশি লোক হবে শনি আর রবিবারে। তিরিশ হাজার লোক হতো শেষ দিন রবিবারে। এখন যা অবস্থা, ম্যাচটাই তো রবিবার পর্যন্ত গড়াবে না।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘টি-টোয়েন্টির সঙ্গে প্রতিযোগিতার যুগে যদি তিন দিনে শেষ হয়ে যাওয়ার পিচ হয়, তা হলে কী করে টেস্ট ক্রিকেট বাঁচবে?’’
দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ১২টি টেস্ট খেলেছেন ব্যাখার। কিন্তু ক্রিকেট মহলে তিনি বেশি পরিচিত দক্ষিণ আফ্রিকার সফলতম ক্রিকেট প্রশাসক হিসেবে। নেলসন ম্যান্ডেলার আস্থাভাজন কর্তা ছিলেন ব্যাখার। বলে দিচ্ছেন, নিজে অধিনায়ক থাকার সময় কখনও পিচ প্রস্তুতকারককে গিয়ে বলেননি, পছন্দের উইকেট চাই। সেটা নিয়ম করে বন্ধ করে দেওয়া উচিত বলে তাঁর সুপারিশ। ব্যাখার বলছেন, ‘‘পিচ প্রস্তুতকারকের কাছে কোনও ক্যাপ্টেন পিচ নিয়ে বলতে গেলে সঙ্গে-সঙ্গে বোর্ডের কাছে সেই ক্যাপ্টেনকে নিয়ে রিপোর্ট জমা দেওয়া হোক। তা হলে ঠাণ্ডা হয়ে যাবে সব।’’
আরও পড়ুন: তৃতীয় দিন শেষে জোহানেসবার্গ টেস্টে চালকের আসনে ভারত
তবে ব্যাখার সমালোচনা করছেন দক্ষিণ আফ্রিকা যখন ভারতে গিয়েছিল, সেই সময় ভারতে তৈরি হওয়া উইকেটেরও। বলছেন, ‘‘ভারতেও দু’বছর আগের টেস্ট সিরিজে প্রথম দিন লাঞ্চের মধ্যেই দেখেছিলাম, অফস্পিনার বল করা শুরু করে দিয়েছে। তখনই বল বনবন করে ঘুরছে, অসমান বাউন্স দেখা যাচ্ছে। সেটাও গ্রহণযোগ্য নয়।’’ যোগ করলেন, ‘‘ওয়ান্ডারার্সের পিচ ছিল অনেকটা পার্থের মতো। খুব ফাস্ট, বাউন্সি। কিন্তু অসমান বাউন্স থাকত না কখনও। যেটা এই পিচে দেখছি। এখানে সেঞ্চুরি করা প্রায় অসম্ভব। কী করে এমন হল!’’
শুধু ওয়ান্ডারার্সের পিচ নয়, চলতি সিরিজে তিনটে টেস্টের কোনও জায়গাতেই পিচ দেখে খুব খুশি হননি তিনি। বলে দিচ্ছেন, ‘‘কেপ টাউনে খরা চলছিল। আমার তো মনে হয়েছিল, বল টার্ন করবে। এতটা শুকনো ছিল। কিন্তু যে পিচ আমি ওখানে দেখেছিলাম, বিশ্বাসই করতে পারিনি।’’ যোগ করছেন, ‘‘আমি নিউল্যান্ডসে ক্রিকেট দেখছি ১৯৬০ থেকে। কখনও এতটা ফাস্ট, বাউন্সি পিচ দেখিনি ওখানে।’’ সেঞ্চুরিয়ন নিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘সেঞ্চুরিয়নে ভাল উইকেট হয়। পেস থাকে, কিন্তু সমান বাউন্সের পিচ হয়। এ বারে দেখলাম ওখানেও মন্থর, নিচু বাউন্সের পিচ।’’
সেঞ্চুরিয়নে জেতার পরেও ডুপ্লেসি পিচ নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে বলেছিলেন, ‘‘আমরা ফাস্ট, বাউন্সি পিচ চাই।’’ নিজের দেশের অধিনায়কের কথা শুনেই কি এমন উইকেট বানাতে গিয়ে বিপত্তি ডেকে এনেছেন ওয়ান্ডারার্সের কিউরেটর? ব্যাখ্যারের জবাব, ‘‘সেটা বলতে পারব না। আমি বলতে চাইছি, ভারত নিজেদের দেশে একই জিনিস করেছে। এ বার দক্ষিণ আফ্রিকাতেও হচ্ছে। দু’টোই খারাপ। দু’টোই বন্ধ হোক।’’
হুঙ্কার: ওয়ান্ডারার্সে মার্করাম আউট হওয়ার পরে সতীর্থদের সঙ্গে বিরাট কোহালির উচ্ছ্বাস। শুক্রবার তৃতীয় টেস্টের তৃতীয় দিন। ছবি: গেটি ইমেজেস
জানালেন, তিনি যখন দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেটের সর্বময় কর্তা ছিলেন, অ্যাডিলেড থেকে পিচ প্রস্তুতকারক নিয়ে এসেছিলেন। কেন? ‘‘ক্রিকেট বিশ্বে সেরা পিচ অস্ট্রেলিয়ায়। প্রথম দিনে পেসাররা সাহায্য পাবে। দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দিন ব্যাটিংয়ের জন্য খুব ভাল। তার পর শেষের দিকে গিয়ে টার্নও করবে। টেস্ট ম্যাচের ভাল উইকেট মানে তো এ রকমই হবে। সকলের জন্যই কিছু না কিছু সাহায্য থাকবে।’’
তাঁর দেশের প্রাক্তন অধিনায়ক গ্রেম স্মিথ আক্রমণ করেছেন বিরাট কোহালির নেতৃত্বের ধরনকে। প্রশ্ন উঠেছে কোহালির অতিরিক্ত আগ্রাসী ভঙ্গি নিয়েও। ব্যাখারের কিন্তু ভাল লেগেছে কোহালি চরিত্রটিকে। ‘‘ধুর, এ সব কারা বলছে,’’ মন্তব্য তাঁর, ‘‘মাঠে খুব ডাকাবুকো, শক্তিশালী দেখায় কোহালিকে। দারুণ মোটিভেটর। ওকে দেখে আমার অস্ট্রেলীয় বলে মনে হয়। মাঠের মধ্যে যেরকম ইতিবাচক থাকে অস্ট্রেলীয়রা, কোহালিও সে রকম।’’
ভারতীয় হাইকমিশনারের দেওয়া পার্টিতে কোহালির সঙ্গে দেখা হয়েছিল ব্যাখারের। ভারত অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলে খুব ভাল লেগেছিল জানিয়ে ওয়ান্ডারার্সের লং রুমে ফিরে যাওয়ার আগে ব্যাখার বলে গেলেন, ‘‘দুর্দান্ত নেতা কোহালি। ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য অনেক সাফল্য আনবে।’’
অসাধারণ ব্যাটসম্যান। চার জনের মধ্যে ও এক জন। এ বি, বিরাট, স্মিথ, জো রুট। ফোর বেস্ট।
সব সময় খেলায় থাকে। ছাড়ে না সহজে। যখন ভারত একটা উইকেট পায়, কোহালিকে দেখো। আনন্দে আত্মহারা হয়ে লাফাচ্ছে। এতটাই উত্তেজিত হয়ে পড়ে ও। শুধু শুধু কেন সেটাকে ও কমাতে যাবে? আমার মনে হয় দারুণ একটা লিডার পেয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট।
এই পিচে জাজমেন্ট দেব না। রবি আমাকে বলেছে, তরুণ এই টিমটা খুব ভাল করছে। রবির ক্রিকেট মস্তিষ্ককে আমি খুবই সম্মান করি। নিশ্চয়ই ও যখন বলছে, ঠিকই বলছে। কিন্তু এই পিচে আমি কোনও দলকে বিচার করব না। খুবই কঠিন সব পিচে খেলা হয়েছে। এই পিচে সেরা ক্রিকেটাররা খেললেও কী করতে পারবে, আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy