Advertisement
১৬ মে ২০২৪
ফর্মুলা ওয়ান

সোচির জয় বিয়াঙ্কিকে উত্‌সর্গ করলেন হ্যামিল্টন

পুরো একশো বছর পর রাশিয়ায় ফর্মুলা ওয়ানের প্রত্যাবর্তনের রেসে নিজেদের শিলমোহর এঁটে দিল মার্সিডিজ দল। টিমের প্রথম কনসট্রাক্টর্স ট্রফি নিশ্চিত করে। দলের জন্য ঐতিহাসিক রেসে নিজস্ব ইতিহাস গড়লেন লুইস হ্যামিল্টনও। জীবনের ৩১ তম ফর্মুলা ওয়ান রেস জিতে ব্রিটিশ কিংবদন্তি নাইজেল ম্যানসেলকে স্পর্শ করে। এবং জয়টা উত্‌সর্গ করলেন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে চলা মরিসিয়া চালক জুলে বিয়াঙ্কিকে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৪২
Share: Save:

পুরো একশো বছর পর রাশিয়ায় ফর্মুলা ওয়ানের প্রত্যাবর্তনের রেসে নিজেদের শিলমোহর এঁটে দিল মার্সিডিজ দল। টিমের প্রথম কনসট্রাক্টর্স ট্রফি নিশ্চিত করে। দলের জন্য ঐতিহাসিক রেসে নিজস্ব ইতিহাস গড়লেন লুইস হ্যামিল্টনও। জীবনের ৩১ তম ফর্মুলা ওয়ান রেস জিতে ব্রিটিশ কিংবদন্তি নাইজেল ম্যানসেলকে স্পর্শ করে। এবং জয়টা উত্‌সর্গ করলেন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে চলা মরিসিয়া চালক জুলে বিয়াঙ্কিকে।

রেসে দ্বিতীয় স্থানটাও গেল জার্মান দলের অপর তারকা নিকো রোজবার্গের দখলে। সব মিলিয়ে সোচির ঝকঝকে নতুন ট্র্যাকে এ দিন রেসের শুরু থেকে শেষদাপট চলল মার্সিডিজেরই। যারা ফর্মুলা ওয়ানে অস্ট্রিয়ার দল রেড বুল রেসিংয়ের গত চার বছরের একাধিপত্ব শেষ করে দিল এ দিন। অন্য দিকে, নির্মাতাদের যুদ্ধে পাচ নম্বর স্থানটা ম্যাকলারেনের কাছে হারিয়ে বসল সহারা ফোর্স ইন্ডিয়া। যারা মাত্র এক পয়েন্টে এগিয়ে সোচিতে এসেছিল। সের্জিও পেরেজ দশ নম্বরে শেষ করে দলকে এক পয়েন্ট দিলেন। কিন্তু নিকো হুল্কেনবার্গ পয়েন্ট না পাওয়ায় শেষ রক্ষা হল না। ম্যাকলারেনের জেনসন বাটন এবং কেভিন ম্যাগনাসেন যথাক্রমে চতুর্থ ও পঞ্চম হওয়ায় ২২ পয়েন্ট নিয়ে মাল্যর দলকে টপকে গেল ব্রিটিশ টিম।

তবে সোচি পর্বের এ সবই স্রেফ শুকনো পরিসংখ্যান। ফর্মুলা ওয়ানের সমস্ত আবেগ এ দিনও আবর্তিত হল শুধুই জুলে বিয়াঙ্কিকে ঘিরে। গ্রিডের উপর লেখা হয়, “জুলে, আমরা সবাই তোমার পাশে আছি।” রেসের আগে ট্র্যাকে চালকদের প্যারেড প্রথা ভেঙে হয়ে ওঠে মরিসিয়া দলের ফরাসি তারকার জন্য প্রার্থনা সভা। আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন অনেকেই। ১৯১৪-য় সেন্ট পিটার্সবার্গের শেষ রেসের পুরো একশো বছর পর আবার রাশিয়ার সোচিতে ফিরেছে ফর্মুলা ওয়ান। কিন্তু সাত দিন আগের সুজুকায় বিয়াঙ্কির মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটা ঐতিহাসিক এই প্রত্যাবর্তনের উপর শোকের চাঁদোয়া হয়ে থেকে গিয়েছে। পঁচিশ বছরের ফরাসি চালক যে মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত নিয়ে জাপানের হাসপাতালে, সেটা মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারছেন না কেউ। এ দিন প্রত্যেক চালক রেসে নেমেছিলেন ফরাসিতে হেলমেটে “তৌস আভেক জুলে”, মানে সবাই তোমার সঙ্গে লিখে। মরিসিয়া আগেই জানিয়েছিল, রেসে তারা একটাই গাড়ি নামাবে। বিয়াঙ্কির গাড়ি গ্যারেজে থাকবে চালকের প্রতি সম্মানে। তবে তাঁর টিমমেট ম্যাক্স চিলটনের গাড়িতে জেবি ১৭ লেখা ছিল, যাতে প্রতীকী ভাবে বিয়াঙ্কিও রেসে নামেন।

ফর্মুলা ওয়ানের অন্দরমহলের মেজাজটা বিধ্বস্ত। ফের্নান্দো আলোনসো যেমন পর পর টুইট করেছেন, “ঘুমোতে পারছি না... কুড়ি ঘণ্টার উড়ানে রাশিয়া পৌঁছেছি কিন্তু মনটা এখনও জাপানে জুলের পাশেই পড়ে... বন্ধু, কাম অন, প্লিজ!” ২০০৯ হাঙ্গারি গ্রাঁ প্রি-তে মস্তিষ্কে আঘাত পেয়ে দীর্ঘ কোমায় চলে যাওয়া ব্রাজিলীয় তারকা ফিলিপে মাসা বলেছেন, “নিজের দুর্ঘটনাও এতটা নাড়িয়ে দেয়নি। বিয়াঙ্কিকে দেখার পর রেসিং-ই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম!” হ্যামিল্টন বলেছেন, “আজ আমাদের টিমের জন্য ঐতিহাসিক দিন। কিন্তু গত সপ্তাহে সুজুকায় যা ঘটেছে সেটা এক মুহূর্তের জন্যও ঙোলা যায় না। জুলে জীবনের জন্য লড়ছে। আমার জয়টা ওকে উত্‌সর্গ করছি।”

এ দিকে, দুর্ঘটনার সাত দিনের মধ্যে নিরাপত্তার ফস্‌কা গেরোগুলো চিহ্নিত করে মৌলিক কিছু পরিবর্তন ঘটাতে যাচ্ছেন ফর্মুলা ওয়ান শীর্ষ কর্তারা। যার মধ্যে অন্যতম, চালকদের নিরাপত্তা বাড়াতে ককপিটের মাথা ঢেকে দেওয়ার চিন্তা। সেফ্টি কার না নামলেও দুর্ঘটনার পর হলুদ পতাকা থাকলে প্রত্যেক গাড়ির গতি বেঁধে দেওয়ারও প্রস্তাব পরের যুক্তরাষ্ট্র গ্রাঁ প্রি-তেই পরীক্ষা করে দেখা হতে পারে। সব ধরনের রিকভারি যান-এ ধাতব ‘স্কার্ট’ পরানোর প্রস্তাবও উঠেছে। যাতে বিয়াঙ্কির গাড়ির মতো আর কোনও গাড়ি রিকভারি ট্র্যাকের নীচে চলে না যায় বা সংঘর্ষে জড়িয়ে না পড়ে। আন্তর্জাতিক আটোমোবাইল ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট জঁ টড, ফর্মুলা ওয়ান রেসিং ডিরেক্টর চার্লি হুইটিং শুক্রবারই নিরাপত্তার দিকটা নতুন করে ঢেলে সাজার কথা বলেছিলেন। সুজুকার দুর্ঘটনার সব দিক তদন্ত করে দেখছেন হুইটিং নিজে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE