Advertisement
১৮ মে ২০২৪

বিরল সমর্থনও পারল না জেতাতে

বাংলাদেশ শিবিরে যখন উৎসব, ভারতীয় শিবিরে তখন হতাশা। গোল করে ও গোল লাইন থেকে বল বিপন্মুক্ত করে ইগর স্তিমাচের দলে এ দিন নায়ক আদিল খান।

জনজোয়ার: এ ভাবেই সুনীলদের হয়ে গলা ফাটাল গ্যালারি। নিজস্ব চিত্র

জনজোয়ার: এ ভাবেই সুনীলদের হয়ে গলা ফাটাল গ্যালারি। নিজস্ব চিত্র

দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:২৪
Share: Save:

ম্যাচ শেষে যুবভারতীর প্রবেশদ্বার দিয়ে বেরিয়ে আসছিলেন বাংলাদেশের অধিনায়ক জ়ামাল ভুঁইয়া। সাংবাদিকরা এগিয়ে যেতেই বললেন, ‘‘ভারত আজ বেঁচে গেল। ম্যাচটা আমাদেরই জিতে ফেরার কথা।’’

পরক্ষণেই যোগ করেন, ‘‘এ রকম দর্শক ঠাসা ফুটবলপ্রেমীদের সামনে খেলার মজাই আলাদা। ভারত হয়তো ম্যাচটা জিততে পারেনি। কিন্তু যুবভারতীর দর্শকরা আমার মন জিতে নিয়েছে। প্রথম মিনিট থেকেই ওরা গলা ফাটিয়ে সমর্থন করে গেল।’’

জ়ামাল যখন এ কথা বলছেন, তখন তাঁর পনেরো গজ দূরেই সাংবাদিক সম্মেলন করছিলেন বাংলাদেশ কোচ জেমি ডে। তিনিও বলছিলেন, ‘‘ভারতীয় দর্শকদের মাঝে আমার ছেলেরা যে এ রকম দুর্দান্ত ম্যাচ খেলে দেবে, তা ভাবতে পারিনি। এ রকম সমর্থন পক্ষে বা বিপক্ষে যে দিকেই থাকুক না কেন, তা ভাল খেলার তাগিদ বাড়িয়ে দেয়।’’

বাংলাদেশ শিবিরে যখন উৎসব, ভারতীয় শিবিরে তখন হতাশা। গোল করে ও গোল লাইন থেকে বল বিপন্মুক্ত করে ইগর স্তিমাচের দলে এ দিন নায়ক আদিল খান। ২০১৩ সালে খেলে গিয়েছিলেন মোহনবাগানে। সে বারও সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে প্রথম গোল করেছিলেন। এ দিন আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রথম গোল পেলেন আদিল। টিম বাসে ওঠার আগে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমাদের সমর্থকরা এ দিন জিতবে আশা করে মাঠে এসেছিলেন। জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক গোল পেলাম। গোললাইন থেকে বাংলাদেশের আক্রমণ ফেরালাম। কিন্তু জয় উপহার দিতে পারলাম না এই ফুটবল পাগল দর্শকদের। এই খেদটা থেকে যাচ্ছে।’’

দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৬৩ হাজার দর্শক খেলা দেখতে এসেছিলেন এ দিন। প্রথমার্ধে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পিছিয়ে গিয়েও শেষ মুহূর্তে সমতায় ফেরা ভারতের। জিততে না পারার দুঃখ ছিলই যুবভারতীতে এ দিন খেলা দেখতে আসা দর্শকদের। কিন্তু তা সত্ত্বেও ম্যাচের পরে ‘ভাইকিং ক্ল্যাপ’ দিয়ে সুনীল ছেত্রীদের উৎসাহ দিচ্ছিলেন তাঁরা। সাংবাদিক সম্মেলনে যে ঘটনার কথা উল্লেখ করে ভারতীয় কোচ ইগর স্তিমাচও কলকাতার দর্শকদের এই সমর্থন নিয়ে আপ্লুত। বললেন, ‘‘দারুণ দর্শক। ভুলতে পারব না ওঁদের। এ রকম সমর্থন! সত্যিই হৃদয় নাড়া দিয়ে গেল। জীবনে অনেক বড় ম্যাচ বড় স্টেডিয়ামে খেলেছি। কিন্তু কলকাতার এই স্টেডিয়াম ও সমর্থকেরা হৃদয়ে থেকে যাবেন।’’

এ দিন বেলা তিনটে থেকেই যুবভারতীর প্রবেশদ্বারে জমা হতে শুরু করেছিল ভিড়। সন্ধে সাতটার সময়ে ভারত বনাম বাংলাদেশ ম্যাচ শুরুর আগে যুবভারতী কানায় কানায় ভর্তি! যা দেখে ভিআইপি বক্সে থাকা ভারতীয় দলের প্রাক্তন ফুটবলার রেনেডি সিংহ বিস্মিত। বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে নিজেই জার্সি পরে মাঠে নেমে যাই। জাতীয় দলের ম্যাচে এ রকম ভরা যুবভারতী কোনও দিন দেখিনি।’’

রেনেডির পিছনেই বসেছিলেন এ বারের কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ জয়ী কোচ জহর দাস, মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরাও বলছিলেন, ‘‘এ রকম ভরা যুবভারতী দেখে এর পর থেকে হয়তো জাতীয় কোচ ইগর স্তিমাচ সব ম্যাচই এখানে খেলতে চাইবেন।’’

ভারতের খেলা দেখতে এ দিন সুনীল ছেত্রীর এগারো নম্বর জার্সি পরে ভারতের আট থেকে আটান্নর ফুটবলপ্রেমীরা এ ভাবেই স্টেডিয়াম ভরিয়ে দিয়েছিলেন। যেখানে বাদ যাননি মহিলা ও শিশুরাও। গোটা স্টেডিয়াম মোড়া ছিল তেরঙ্গা পতাকা দিয়ে। খেলা শুরুর আগে দুই নম্বর গেটের দিকের গ্যালারিতে বড়সড় একটা টিফোও (বিশাল কাপড়ের ব্যানার) দেখা গেল। যেখানে সবুজ-মেরুন, লাল-হলুদ, সাদা-কালো জার্সি গায়ে তিন খেলোয়াড়ের প্রতিকৃতি। নেপথ্যে বার্তাটা স্পষ্ট— জাতীয় দলের ম্যাচে আজ আর কোনও ক্লাবতুতো বিভেদ নয়। মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল-মহমেডান সকলেই আজ মিলেমিশে একাকার। কিন্তু খেলা শেষে সবাই মুখ কালো করেই বাড়ি ফিরলেন। দুঃখ একটাই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জেতা হল না।

অন্য দিকে, তখন যুবভারতীর পাঁচ নম্বর গেটের দিকের গ্যালারিতে শুরু হয়ে গিয়েছে উৎসব। সেখানে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে হাজির ছিলেন শ’দুয়েক সমর্থক। এদেরই একজন মহম্মদ মাহবুবুর রহমান। বাংলাদেশে জ়ামাল ভুঁইয়ার ক্লাব সইফ স্পোর্টিং ক্লাবের সচিব। সকালবেলা ঢাকা থেকে পঁচিশ জনের বিশাল দল নিয়ে কলকাতায় এসেছিলেন। বিয়াল্লিশ মিনিটে সাদ উদ্দিনের গোলে যখন বাংলাদেশ এগিয়ে গেল তখন লাফিয়ে উঠে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকায় মুখ ঢেকে আবেগে কেঁদেই ফেলেছিলেন। গর্ব করে বলছিলেন, ‘‘আমার ক্লাবের ফুটবলার জ়ামাল দলের অধিনায়ক। আর ওর ফ্রি-কিক থেকেই গোল করল সাদ। দারুণ আনন্দ হচ্ছে।’’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সিলেটের সৌদীপ্ত সোম, আরাফতরাও এ দিন যুবভারতীতে হাজির ছিলেন খেলা দেখতে। তাঁর আবার আক্ষেপ, ‘‘আমাদের মাত্র ২০০টি টিকিট দেওয়া হয়েছে। অথচ সাতশ টিকিট পাওয়ার কথা ছিল। অনেকেই কলকাতায় এসেও আজ এ রকম বর্ণময় যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে খেলা দেখতে আসতে পারলেন না। হোটেলের ঘরে বসে টিভিতেই ম্যাচ দেখতে হল তাঁদের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

World Cup Qualifier Football India Bangladesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE