যুগলবন্দি: কোচ-অধিনায়কের মাথায় ভবিষ্যতের রো়ডম্যাপ। ফাইল চিত্র
এখনও দেড় বছরের উপর সময় রয়েছে। কিন্তু গা ঢিলেমি নয়, বিরাট কোহালিদের সংসারে ২০১৯ বিশ্বকাপের বাজনা বেজে গিয়েছে। দেশের মাটিতে ওয়ান ডে বা টি-টোয়েন্টি সিরিজে নতুন সব মুখ খেলানো হচ্ছে বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে। দেখে নেওয়া হচ্ছে কে কোথায় ফিট করতে পারেন। কী রকম হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ রোডম্যাপ? ভারতীয় দলের অন্দরমহলে খোঁজ নিয়ে যা পাওয়া গেল—
প্রাথমিক দল তৈরির ভাবনা: ২০১৯ বিশ্বকাপের কথা মাথায় রেখে কুড়ি জনের বিশেষ ‘পুল’ তৈরি করার কথা ভেবেছে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। একদম ব্যাটসম্যান, বোলার, অলরাউন্ডার— বিভাগ ধরে ধরে নাম চূড়ান্ত করা হবে। বিশ্বকাপ হবে ২০১৯-এর জুনে। সম্ভাব্যদের এই তালিকা চূড়ান্ত করে ফেলার চেষ্টা হবে অন্তত তার ছ’মাস আগে। যাতে চূড়ান্ত দল গড়ার আগে যথেষ্ট চিন্তাভাবনা করে নেওয়া যায়।
কারা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছেন: কয়েকটি নাম এখনই চোখ বুজে লিখে ফেলা যায়। যেমন ব্যাটিংয়ে বিরাট কোহালি, রোহিত শর্মা, শিখর ধবন বা অলরাউন্ডার হিসেবে হার্দিক পাণ্ড্য, বোলারদের মধ্যে ভুবনেশ্বর কুমার, যশপ্রীত বুমরা-রা। জনপ্রিয় মত হচ্ছে, দুই তরুণ ‘রিস্ট স্পিনার’ যুজবেন্দ্র চহাল এবং কুলদীপ যাদবও বিশ্বকাপের টিকিট প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছেন। মোটামুটি ভাবে ধরা যেতে পারে, আট থেকে ন’জনের জায়গা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে।
বড় কিছু নাম নিয়ে জল্পনা: সেই শ্রীলঙ্কা সফর থেকে একদিনের ক্রিকেটে ব্রাত্য আর. অশ্বিন এবং রবীন্দ্র জাডেজা। দু’জনকেই শুধু টেস্টের দলের জন্য ভাবা হচ্ছে এখন। ক্রমশ পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে যে, অশ্বিনদের বিশ্রামে রাখা হয়নি। তাঁদের ওয়ান ডে ক্রিকেটের উপযুক্ত বলেই সম্ভবত আর ভাবা হচ্ছে না। অশ্বিনের ক্ষেত্রে ফিল্ডিং এবং ফিটনেস তাঁর এক দিনের দলে ফেরার রাস্তায় বাধা হতে পারে। জাডেজাকে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে একটা সময়ে অন্যতম সেরা ম্যাচউইনার মনে করা হতো। আইপিএলে রেকর্ড অর্থে তাঁকে কিনেছিল শ্রীনিবাসন ও ধোনির চেন্নাই সুপার কিংগস। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সীমিত ওভারের ম্যাচে সেই কার্যকারিতা আর দেখাতে পারছেন না তিনি। বাদ যাওয়ার আগে এক বছর ধরে ওয়ান ডে ক্রিকেটে বলার মতো পারফরম্যান্স ছিল না।
জুটি: সীমিত ওভারে ভারতের নয়া অস্ত্র। চহাল, কুলদীপ। ফাইল চিত্র
তরুণ দুই স্পিনারের কামাল: চহাল-কুলদীপ জুটি এমন টগবগিয়ে ছুটছে যে, অশ্বিন-জাডেজার দিকে ফিরে তাকানোর পরিস্থিতিও নেই। কটকের বরাবাটি স্টেডিয়ামে বুধবার রাতে প্রবল শিশিরের মধ্যেও কামাল করলেন দুই তরুণ স্পিনার। দু’জনে মিলে নিলেন ছয় উইকেট। আর বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডে ‘রিস্ট স্পিনার’ (যে সব স্পিনাররা কব্জির ব্যবহারে বল করেন) বেশ কাজে দেবে বলে অনেকের বিশ্লেষণ। যত সময় যাচ্ছে, মনে হচ্ছে, ভারতীয় দলের স্পিন বোলিং বিভাগের দু’টো আলাদা সরণি তৈরি হয়ে যাচ্ছে। অশ্বিন-জাডেজা শুধু টেস্টে থাকবেন। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে খেলবেন দুই তরুণ এবং তরতাজা ‘রিস্ট স্পিনার’। লেগস্পিনার যুজবেন্দ্র চহাল এবং বাঁ হাতি চায়নাম্যান কুলদীপ যাদব। একেবারেই অবাক হওয়ার থাকবে না যদি শোনা যায় অশ্বিনরা বিশ্বকাপের রাস্তা থেকে হড়কে গিয়েছেন।
আরও পড়ুন: বিরাট-অনুষ্কার বিদেশে বিয়ে, গম্ভীর কী বললেন জানেন?
চার নম্বরের দৌড়ে শ্রেয়স: দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের প্রস্তুতির মধ্যেও এই একটা ‘পাজ্ল’ নিয়ে দুশ্চিন্তা ঠেকানো যাচ্ছে না। ওয়ান ডে-তে চার নম্বর ব্যাটসম্যান কে হবেন তা নিয়ে রীতিমতো ‘মিউজিক্যাল চেয়ার’ চলেছে সাম্প্রতিক কালে। কে এল রাহুলকে ওপেন থেকে নামিয়ে মাঝে চেষ্টা করা হল। মণীশ পাণ্ডে-কে দেখা হয়েছে। অজিঙ্ক রাহানে-কে সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেউ দাঁড়াতে পারেননি। নতুন আশা নিয়ে হাজির হয়েছেন শ্রেয়স আইয়ার। এমনিতেই মুম্বইয়ের ব্যাটসম্যানকে নিয়ে খুব আগ্রহ ছিল ভারতীয় শিবিরে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে দু’টি ওয়ান ডে-তে রান করার পরে তাঁকে নিয়ে উৎসাহ বেড়েছে। যা ইঙ্গিত, আপাতত তাঁকেই চার নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে ভাবা হতে পারে। কোহালি ফিরলে তিনি তিন নম্বরে, শ্রেয়স নামবেন চারে। টিম ম্যানেজমেন্ট যে তাঁর প্রাথমিক স্কোরশিট নিয়ে খুশি, সন্দেহ নেই। এখন দেখার, শ্রেয়স আশা জাগিয়ে বুদবুদের মতো না মিলিয়ে যান।
তারুণ্যের স্লোগান উঠেছে: সীমিত ওভারের ক্রিকেটে যে কোনও ‘ব্যাগেজ’ বয়ে বেড়ানো হবে না, সেটা ঠিক হয়ে গিয়েছে। ‘ব্যাগেজ’ অর্থাৎ আনফিট ক্রিকেটার। সেই কারণেই ফিটনেস পরীক্ষার উপর এত জোর দেওয়া হয়েছে। ইয়ো ইয়ো টেস্ট পাশ না করলে প্রবেশাধিকার নেই। সুরেশ রায়না এই টেস্টের ধাক্কায় ওজন কমিয়ে ফেলছেন। যুবরাজ সিংহ জাতীয় অ্যাকাডেমিতে ট্রেনিং করতে ছুটছেন। অশ্বিন পরীক্ষা দিতে যাচ্ছেন। ফিটনেস এবং ফিল্ডিংয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে বলেই তরুণ রক্তের স্লোগান জোরালো ভাবে উঠে পড়েছে। এক ঝাঁক তরুণ প্রতিভাবান ক্রিকেটার এসে গিয়েছেন। তাঁদের টি-টোয়েন্টি ম্যাচে খেলে দেখেও নেওয়া হচ্ছে। স্পিনার-অলরাউন্ডার ওয়াশিংটন সুন্দরকে নিয়ে আশাবাদী অনেকে। মহম্মদ সিরাজ, বাসিল থাম্পির মতো তরুণ জোরে বোলারদের নিয়েও উৎসাহ রয়েছে। দীপক হুডার শক্তিশালী চেহারা দেখে আবার কেউ কেউ প্রভাবিত। ওয়ান ডে-তে পাওয়ার হিটার লাগবে। কোহালিদের স্কিলের পাশাপাশি যে এখন সীমিত ওভারের ক্রিকেটে জিততে গেলে শক্তিশালী ক্রিকেটারও দরকার, সেটা কেউ অস্বীকার করতে পারছে না। বিশ্বকাপের ২০ জনের ‘পুল’-এ তাই কয়েকটি তরুণ মুখ থাকতেই পারে।
ধোনি-তর্কের উত্তর কী: কটকের বরাবাটিতে ভাল খেলে দেওয়ায় মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে নিয়ে তৈরি হওয়া চাপ কিছুটা হাল্কা হয়েছে। টিম ম্যানেজমেন্টে এখনও ধোনির সমর্থকের সংখ্যা বেশি। অধিনায়ক কোহালি তাঁর উপর আস্থা রাখেন। হেড কোচ রবি শাস্ত্রী তাঁকে সর্বসেরা ভারতীয় কিংবদন্তিদের মধ্যে রেখেছেন। তাই ধোনিই যে প্রথম পছন্দ তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু বিশ্বকাপের আগামী দেড় বছরের রাস্তায় ধোনিকে ক্রমাগত পীরক্ষা দিয়ে যেতে হবে। দু’একটা ম্যাচে তিনি রান না পেলেই কথা উঠবে তাঁকে সরানোর। ভারতীয় দলের স্কোয়াডে রাখা হচ্ছে দীনেশ কার্তিক-কে। কিপিং করছেন ধোনি কিন্তু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলছেন কার্তিক। ইংল্যান্ডে ভাল রেকর্ড কার্তিক-এর। সম্ভবত সে কথা মাথায় রেখে তাঁকেও নকশায় রাখা হচ্ছে। যদিও বত্রিশ বছরের কার্তিক (বিশ্বকাপের সময় হবেন প্রায় চৌত্রিশ) সঠিক পছন্দ কি না, তা নিয়ে তর্ক থেকেই যাচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy