Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
Jos Buttler

Jos Buttler: দিলশানের আগেই স্কুপ মারে বাটলার, বলছেন কোচ

ওর হাতের উপরের দিকের অংশ যথেষ্ট শক্তিশালী। কব্জি প্রচণ্ড নমনীয়। তাই ব্যাট-স্পিড যে রকম ভাল ছিল, সে রকমই মাঠের বিভিন্ন কোণে বল পাঠাতে পারত।’’ সেটা আরও এক বার বাটলার বুঝিয়ে দিয়েছেন শনিবার মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের সঙ্গে সেঞ্চুরিতে।

ব্যতিক্রম: ছোট থেকেই স্কুপ শটে পারদর্শী ছিলেন বাটলার। আইপিএল

ব্যতিক্রম: ছোট থেকেই স্কুপ শটে পারদর্শী ছিলেন বাটলার। আইপিএল

কৌশিক দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২২ ০৭:১৯
Share: Save:

কখনও দুরন্ত কভার ড্রাইভ, কখনও মিডউইকেটের ওপর দিয়ে কব্জির মোচড়ে ফ্লিক শটে ছয়। কখনও অসাধারণ পুল, কখনও বা ফাইন লেগের ওপর দিয়ে স্কুপ শট। প্রথাগত কপিবুক ব্যাটিং থেকে কব্জি আর হাতের জোরে অসম্ভব সব অক্রিকেটীয় স্ট্রোক— জস বাটলারের ব্যাটিং মানেই দেখা যায় যাবতীয় শটের ফুলঝুরি। যা বিস্মিত করে তোলে ক্রিকেট দুনিয়াকে। কিন্তু এক জনই অবাক হন না। তিনি বাটলারের শৈশবের কোচ ফিল লুইস। কারণ সমারসেটের টনটনে স্কুল জীবনে বেড়ে ওঠার সময় থেকেই যে ছাত্রের হাতে এই সব শট দেখতে অভ্যস্ত ফিল।

১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং রাহুল দ্রাবিড় যখন ওয়ান ডে ক্রিকেটের ওই সময়কার বিশ্বরেকর্ড জুটি গড়ছিলেন, তখন বছর আটেকের বাটলারও টনটনের দর্শকদের মধ্যে ছিলেন। ক্রিকেটকে ভালবাসা শুরু তখন থেকেই। টনটনের ‘কিংস কলেজ’-এ ফিলের হাতেই ক্রিকেটে হাতখড়ি বাটলারের।

ছোটবেলা থেকেই কি ও রকম অবিশ্বাস্য শট খেলতেন বাটলার? সমারসেট থেকে আনন্দবাজারের প্রশ্নের জবাবে কিংস কলেজের ডিরেক্টর অব স্পোর্টস ফিল বলেছেন, ‘‘হ্যাঁ, ও ছোটবেলা থেকেই নানা রকম শট খেলত। যাকে কখনওই ক্রিকেট ব্যাকরণের মধ্যে ফেলা যাবে না। উদ্ভাবনী শক্তিটা বাটলারের বরাবরই বেশি ছিল।’’ তবে যোগ করতে ভুলছেন না, ‘‘কিন্তু ক্রিকেটের প্রাথমিক ভিতটা ওর বরাবরই মজবুত ছিল। মাথাটা স্থির থাকত, শরীরের ভারসাম্যটা দারুণ ছিল। অনেক দেরিতে শট খেলত। শক্তি আর ব্যাট-স্পিডে তো বাকিদের হাজার মাইল পিছনে ফেলে দিয়েছিল। স্কুলের বাচ্চাদের মধ্যে ও রকম দক্ষতা
আমি দেখিনি।’’

বাটলারের তূণে একটা বড় অস্ত্র হল স্কুপ শট। ফাস্ট বোলারদের বিরুদ্ধে কিছুটা হাঁটু মুড়ে বসে ব্যাটটাকে চামচের মতো ব্যবহার করে উইকেটকিপারের পাশ দিয়ে ফাইন লেগ বাউন্ডারিতে পাঠানো। বিশ্বক্রিকেটে এই শটকে ‘দিলস্কুপ’ বলা হয়ে থাকে, কারণ শ্রীলঙ্কার তিলকরত্নে দিলশানকে এই শটের জনক বলে মনে করা হয়। কিন্তু ফিলের কথা ধরলে, দিলস্কুপ নয়, এই শটের নাম হওয়া উচিত ‘জসস্কুপ’। কারণ, তাঁর ছাত্র নাকি এই শট আরও আগে থেকেই খেলা শুরু করেছেন।

ফিলের কথায়, ‘‘দিলশান চালু করার অনেক আগে থেকেই কিন্তু বাটলার ওই স্কুপ শটটা মারছে।’’ এর পরে একটা স্কুল ম্যাচের প্রসঙ্গ টেনে আনলেন ফিল। জানালেন, ‘‘একটা টি-টোয়েন্টি কাপের ম্যাচ চলছিল আমাদের স্থানীয় প্রতিদ্বন্দ্বী মিলিফিল্ডের সঙ্গে। বাটলার যখন ব্যাট করছিল, তখন হঠাৎ করে ওরা ফাইন লেগ উপরে নিয়ে আসে অন্য দিকে ফিল্ডার রাখার জন্য। ওই সময় ফাইন লেগকে উপরে তুলে আনা হচ্ছে, এটা ভাবাই যেত না। তখনই প্রথম স্কুপ শট মারতে দেখি বাটলারকে। অফস্টাম্পের বাইরে সরে গিয়ে স্কুপ করে ফাইন লেগের ওপর দিয়ে একটা ড্রপে বল বাউন্ডারির বাইরে পাঠায়। ওর ওই শটটা দেখে দর্শকরা আনন্দে পাগল হয়ে গিয়েছিল।’’

গতির বিরুদ্ধে যেমন সাবলীল, সে রকমই সচ্ছ্বন্দে স্পিনের বিরুদ্ধেও শট নিতে দেখা যায় বাটলারকে। বিশেষ করে স্পিনারদের বিরুদ্ধে সুইপ শটটা দারুণ ভাবে কাজে লাগান ইংল্যান্ডের এই বিধ্বংসী ব্যাটার। সুইপ শটে পারদর্শী হওয়ার নেপথ্যেও কিন্তু একটা কাহিনি আছে, যা জানালেন শৈশবের কোচ।

কী সেই কাহিনি? কোচের কথায় জানা গেল, কিংস কলেজে পেশাদার এক জন স্পিনার ছিলেন। নাম ডেনিস ব্রেকওয়েল। যাঁকে নিয়মিত নেটে খেলতে হত বাটলারকে। এবং, সেখানেই সুইপ মারার পাঠ রপ্ত করেন তিনি। ফিলের মন্তব্য, ‘‘ডেনিস সব দিকে স্পিন করাতে পারত। ওর কব্জির মোচড়ে বল কোন দিকে ঘুরবে, বোঝা কঠিন ছিল। বাটলারও বুঝতে পারত না। তাই বল ঘোরার আগেই সুইপ মেরে স্পিন সামাল দিত! ওই ভাবেই সুইপটা অস্ত্র হয়ে ওঠে ওর।’’

ছোটবেলায় শুধু ক্রিকেটের গণ্ডিতেই নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি বাটলার। খেলতেন হকি, ফুটবল, রাগবি, টেনিসও। যে সব খেলা ক্রিকেটার হিসেবে ধারালো করেছে বাটলারকে বলে মনে করেন কোচ। ফিল বলছিলেন, ‘‘বাটলার হকিটা দারুণ খেলত। পাশাপাশি ফুটবল, রাগবি, টেনিসেও সমান পারদর্শী ছিল। ওর হাতের উপরের দিকের অংশ যথেষ্ট শক্তিশালী। কব্জি প্রচণ্ড নমনীয়। তাই ব্যাট-স্পিড যে রকম ভাল ছিল, সে রকমই মাঠের বিভিন্ন কোণে বল পাঠাতে পারত।’’ সেটা আরও এক বার বাটলার বুঝিয়ে দিয়েছেন শনিবার মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের সঙ্গে সেঞ্চুরিতে।

অন্য বিষয়গুলি:

Jos Buttler IPL 2022
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE