শিকার: নারাইন আউট। উৎসবে মাতলেন কুলদীপ। রবিবার। ছবি: পিটিআই।
এক একটা উইকেট নিচ্ছেন, আর মুষ্টিবদ্ধ হাতটা ঝাঁকিয়ে গর্জন করে চলেছেন। প্রত্যেকটি উইকেটের পিছনে লুকিয়ে যেন লুকিয়ে একটা বার্তা— দেখো, আমি ফুরিয়ে যাইনি।
ফুরিয়ে যে যাননি তাঁর ছাত্র, তা জানতেন কুলদীপ যাদবের গুরু কপিল দেব পাণ্ডে। তাই কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে রবিবার ছাত্র চার উইকেট পাওয়ায় অবাক নন তিনি। ম্যাচের পরে কানপুর থেকে ফোনে কুলদীপের গুরু বলছিলেন, ‘‘আমরা এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলাম। এত দিন ধরে যে পরিশ্রম করেছি, তার ফলটা পাওয়া গেল।’’
ম্যাচের কিছু ঘণ্টা আগে, অর্থাৎ শনিবার রাত বারোটা নাগাদ কুলদীপ ফোন করেন তাঁর গুরুকে। যতই হোক, প্রতিপক্ষের নাম যে কলকাতা নাইট রাইডার্স। যে দলটার হয়ে খেলেই আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছিলেন কুলদীপ। তাই একটু চাপ যে ছিল না, তা নয়। কিন্তু ছাত্রকে কোচ বলে দেন, ‘‘একদম অন্য কিছু ভাববি না। মনে করবি আর পাঁচটা কোনও দলের বিরুদ্ধে খেলছিস। যে ভাবে প্রস্তুতি নিয়েছিলি, সেটা মাথায় রেখে বল করবি।’’
কী ছিল সেই প্রস্তুতি? দু’টো মন্ত্রে কুলদীপকে দীক্ষা দিয়েছিলেন কোচ। এক, ছোট বল একদম করা চলবে না। অর্থাৎ, শর্ট বল নয়। দুই, খুব বেশি ফ্লাইট দেওয়াও যাবে না। যাতে ব্যাটার তুলে মারার কোনও সুযোগ না পায়। আর আন্দ্রে রাসেলকে নিয়ে বিশেষ কোনও পরিকল্পনা ছিল কি? কোচের জবাব, ‘‘অবশ্যই ছিল। রাসেলকে কেকেআরের নেটে অনেক দিন দেখেছে কুলদীপ। ওর শট খেলার ধরনটা জানা ছিল। আমাদের কৌশল ছিল, পায়ের দিকে বলটা রাখা। যাতে রাসেল তুলে মারার জায়গা না পায়। খেয়াল করে দেখবেন, লেগ স্টাম্প আক্রমণ করতে গিয়ে গোটা দু’য়েক ওয়াইডও দিয়েছে কুলদীপ।’’ রাসেলকে ফেরাতে না পারলেও আটকে রেখেছিলেন কুলদীপ। আর আউট করেন শ্রেয়স আয়ার, প্যাট কামিন্স, সুনীল নারাইনের মতো বিধ্বংসী ব্যাটারদের।
বছর চারেক আগে ইডেনে মইন আলির বিধ্বংসী ব্যাটিং কুলদীপের ক্রিকেট জীবনে বড় ধাক্কা দিয়েছিল। তার পর থেকে দলে অনিয়মিত হয়ে পড়েন এই চায়নাম্যান স্পিনার। সি বরুণের উত্থান নাইট দল থেকে পুরোপুরি ছিটকে দেয় কুলদীপকে। ওই সময় মনে হয়েছিল, কুলদীপের ক্রিকেট জীবনই না শেষ হয়ে যায়।
কী রকম মানসিক অবস্থা ছিল তখন ছাত্রের? কী ভাবেই বা ফিরিয়ে আনলেন লড়াইয়ে? কপিল বলছিলেন, ‘‘কেকেআর বসিয়ে দেওয়ার পরে মানসিক ভাবে খুবই ভেঙে পড়েছিল কুলদীপ। তখন ওকে বোঝাই, আইপিএলে সুযোগ পাসনি তো কী হয়েছে। আমরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য তৈরি হব। আর যখন সুযোগ পাবি, তখন দেখিয়ে দিবি। এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল কুলদীপ। দিল্লি ক্যাপিটালসকে ধন্যবাদ সেই সুযোগটা দেওয়ার জন্য।’’ এও বলেন, ‘‘কুলদীপের প্রতিভা নিয়ে তো প্রশ্ন নেই। প্রয়োজন ছিল আত্মবিশ্বাসটা ফিরিয়ে আনার।’’
চোটের জন্য জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে রিহ্যাবে ছিলেন কুলদীপ। সেখান থেকে ফিরে কোচের সঙ্গে শুরু করেন প্রত্যাবর্তনের লড়াই। সকাল ন’টা থেকে শুরু হয়ে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলত অনুশীলন। যেখানে বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিং এবং ফিল্ডিংয়ের মহড়াও চলেছে। কপিলের লক্ষ্য ছিল, ছাত্র যখন মাঠে নামবে, তখন তিনটে বিভাগেই তৈরি হয়েই নামবে। যে কারণে ফলো থ্রুয়ের পরে পিছনে ২০-২২ গজ দৌড়ে কুলদীপের অবিশ্বাস্য ক্যাচ দেখে ক্রিকেট বিশ্ব বিস্মিত হলেও অবাক নন কোচ। অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন চায়নাম্যান বোলার ব্র্যাড হগ টুইট করেছেন, ‘‘সেরা কট অ্যান্ড বোল্ড।’’ কপিল বলছিলেন, ‘‘কুলদীপ খুব ভাল ফিল্ডারও। আমরা সেটা জানি। এমনকি, এখানে প্র্যাক্টিস ম্যাচে ও কিন্তু ভাল ব্যাটও করেছে। হাফসেঞ্চুরি করেছে। তাই কুলদীপের ব্যাট থেকে যদি রান আসে, অবাক হবেন না।’’ কোচ জানালেন, প্রস্তুতির অঙ্গ হিসেবে গোটা পাঁচেক ম্যাচ খেলেছেন কুলদীপ। সেখানে কয়েক বার পাঁচ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি ব্যাট হাতে হাফসেঞ্চুরিও করেছেন।
নিজের এই ক্যাচ নিয়ে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসে কুলদীপ বলে যান, ‘‘ক্যাচটা নেওয়ার সময় অত কিছু ভাবিনি। মনে হয়েছিল, নিতে পারব।’’ চারটে উইকেটের মধ্যে শ্রেয়সের উইকেটকেই সেরা বলছেন কুলদীপ। ম্যাচের সেরা ক্রিকেটার দিল্লিকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেছেন, ‘‘এখানকার পরিবেশটা খুব উপভোগ করছি। সবাই পাশে আছে। ঋষভ পন্থও উইকেটের পিছন থেকে আমাকে সাহায্য করছে।’’
কোচ বলছেন, ‘‘আপনারা এক নতুন কুলদীপকে দেখছেন।’’ এই ‘কুলদীপ ২.০’ কী করতে পারে, তা রবিবার ভাল ভাবেই বুঝে গেল শাহরুখ খানের নাইট বাহিনী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy