Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
Ireland

Indian Cricketer: ক্রিকেটের স্বপ্ন ভুলে যাওয়া ভারতীয় পড়ুয়াই এখন বিশ্বরেকর্ডের মালিক

২০০৫ সালে আয়ারল্যান্ড গিয়েছিলেন সিমি। তবে ক্রিকেট যে তাঁর পিছু পিছু সেখানেও পৌঁছে যাবে, তা বুঝতে পারেননি।

সিমি সিংহ।

সিমি সিংহ। ছবি: রয়টার্স

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২১ ১৩:১৬
Share: Save:

১৮ বছর বয়স অবধি মোহালি ছিল তাঁর ঘরের মাঠ। অনূর্ধ্ব ১৪, অনূর্ধ্ব ১৭ ক্রিকেটে ব্যাট হাতে পঞ্জাবের হয়ে সেরার পুরস্কার পেয়েছেন অনেক বার। কিন্তু অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেটে সুযোগ পাননি। ব্যর্থ মনে ক্রিকেটের স্বপ্ন ভুলে ১৮ বছর বয়সে হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়তে আয়ারল্যান্ড পাড়ি দেন সিমরঞ্জিত সিংহ ওরফে সিমি সিংহ।

দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের বিরুদ্ধে শতরান। আট নম্বরে ব্যাট করতে নেমে রেকর্ড গড়ে সিমি এখন পরিচিত নাম। দলকে জেতাতে না পারলেও তাঁর শতরান উঠে এসেছে আলোচনায়। ভারতের মাটিতে আট নম্বরে নেমে স্যাম কারেনের ৯৫ রানের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত সিমি।

২০০৫ সালে আয়ারল্যান্ড গিয়েছিলেন সিমি। তবে ক্রিকেট যে তাঁর পিছু পিছু সেখানেও পৌঁছে যাবে, তা বুঝতে পারেননি। ডাবলিনে গিয়ে জানতে পারেন পড়াশোনার সঙ্গে ক্রিকেট খেলাও চালিয়ে যেতে পারবেন তিনি। ব্যাস, যেমন ভাবা তেমন কাজ। ২০০৬ সালে যোগ দেন ডাবলিনের মালাহাইড ক্রিকেট ক্লাবে।

সেখান থেকে এসে আয়ারল্যান্ডের হয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে রেকর্ড গড়া সিমি এক সংবাদ মাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “এই ইনিংস আমার কাছে খুব আবেগের। শতরান করার পর মনের মধ্যে আমার পুরো যাত্রাটা যেন দেখতে পেলাম এক ঝলক। এই মাঠেই আমার ক্রিকেট যাত্রা শুরু হয়েছিল। এই মাঠেই শতরান করলাম। এটা আমার মনে থেকে যাবে চিরদিন।”

দক্ষিণ আফ্রিকার যে বোলারদের সামলাতে অনেক বড় বড় ব্যাটসম্যানই হিমশিম খান, সেই এনরিখ নোখিয়ে, তাবরেজ শামসি, কেশব মহারাজদের বিরুদ্ধে শতরান করেন সিমি। আয়ারল্যান্ডের অলরাউন্ডার বলেন, “আমার কাছে এটা সব থেকে তৃপ্তির যে শতরানটা এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা বোলারদের বিরুদ্ধে। আমার স্ট্রাইক রেটও ভাল ছিল।”

৩৪ বছরের সিমি সিংহের সঙ্গে আয়ারল্যান্ড দলে খেলেন তাঁর ছাত্র হ্যারি টেক্টর। ২১ বছরের হ্যারির হাতে অভিষেক ম্যাচে টুপি তুলে দিয়েছিলেন সিমি। আয়ারল্যান্ড ক্রিকেট তাঁকে যে দু’হাত ভরে দিয়েছে, আগামী প্রজন্মকে তৈরি করে সেটাই যেন ফিরিয়ে দিতে চান। সিমি বলেন, “হ্যারি যখন ওয়াইএমসিএ-তে আসে তখন ওর বয়স ১২ বছর। আমি তখন ওই ক্লাবের প্রশিক্ষকের দায়িত্বে। ওর হাতে আন্তর্জাতিক টুপিও আমি তুলে দিয়েছি। সত্যি অনেকটা পথ চলে এলাম।”

ছবি: টুইটার থেকে

সত্যিই অনেকটা পথ। ব্যাটসম্যান হিসেবে রেকর্ড গড়া সিমি আসলে অফস্পিনার হিসেবে দলে সুযোগ পান। মোহালির মাঠে যাঁর ব্যাট কথা বলত, আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাঁর পরিচয় বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে। তবে ব্যাটসম্যান সিমি যে এখনও ফুরিয়ে যাননি সেটাই যেন ফুটে উঠল দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, “আমি যখন ব্যাট করতে নেমেছিলেন, তখন দলের স্কোর ৬ উইকেটে ৯২ রান। ক্রিজে মানিয়ে নেওয়ার জন্য নিজেকে সময় দিয়েছিলাম। তার পর নিজের স্বাভাবিক খেলাটা শুরু করি। আশা করি পরের ম্যাচগুলিতে আরও একটু ওপরে ব্যাট করার সুযোগ পাব।”

মোহালি থেকে ডাবলিনে পৌঁছে খুব সহজ ছিল না ক্রিকেট জীবন তৈরি করা। আয়ারল্যান্ডের নাগরিক হতে গেলে বেশ কিছু বাধা টপকাতে হয়। কাজ এবং ক্রিকেট এক সঙ্গে সামলাতে হত সিমিকে। মুদি দোকানে কাজও করেছেন টাকার জন্য। ক্রিকেট ক্লাবে খেলতে হলে তাঁর ম্যাচ প্রতি খরচ পড়ত ৪০০ টাকা। সেই টাকা যোগাড় করতে বিভিন্ন কাজও করতে হয়েছে তাঁকে।

তবে সেই লড়াইয়ের দিনগুলি উপভোগ করেন সিমি। তিনি বলেন, “পিছনে তাকালে সেই দিনগুলি আমাকে উদ্বুদ্ধ করে। আমি উপভোগ করি ওই দিনগুলি।” আয়ারল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন ১২ বছর ধরে। ২০১৭ সালে নাগরিকত্ব পান আয়ারল্যান্ডের। সেই বছরেই সুযোগ আসে আন্তর্জাতিক দলের হয়ে খেলার।

আয়ারল্যান্ডের হয়ে ৩০টি একদিনের ম্যাচ এবং ২৪টি টি২০ ম্যাচ খেলেছেন সিমি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর এখনও অবধি সংগ্রহ ৫৫টি উইকেট এবং ৭৫০ রান। কোনও ভারতীয় নন, সিমির অফস্পিনের অনুপ্রেরণা পাকিস্তানের সাকলিন মুস্তাক।

একটি একদিনের ম্যাচে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিরুদ্ধে ১০ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। একদিনের ক্রিকেটে সব চেয়ে কম রান দিয়ে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্বে তিনি পঞ্চম স্থানে। সামনে রয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোর্টনি ওয়ালশ (১ রান দিয়ে ৫ উইকেট শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে), ভারতের সুনীল জোশি (৬ রান দিয়ে ৫ উইকেট দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে), স্টুয়ার্ট বিনি (৪ রান দিয়ে ৬ উইকেট বাংলাদেশের বিরুদ্ধে) এবং শ্রীলঙ্কার মুথাইয়া মুরলীধরন (৯ রান দিয়ে ৫ উইকেট নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে)।

আয়ারল্যান্ডের হয়ে নিজের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন সত্যি করেছেন সিমি। সেই দেশের ক্রিকেট আগামী দিনে যে আরও দাপট দেখাবে সেই বিষয়ে নিশ্চিত তিনি। সিমি বলেন, “এখন আর পল স্টারলিং বা কেভিন ও’ব্রায়েনের দিকে তাকিয়ে থাকে না দল। সবার মধ্যে লড়াই করার সাহস আছে। নিজেদের আরও ফিট করে তুলতে চায় দল। ফিল্ডিংয়েও আমরা দক্ষিণ আফ্রিকার থেকে এগিয়ে ছিলাম।” কখনও ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দেওয়া বা কখনও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দেওয়া, আয়ারল্যান্ড কি পারবে টানা সাফল্য পেতে? আশাবাদী মোহালি থেকে ডাবলিনে গিয়ে নিজের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন সত্যি করা সিমি সিংহ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE