গোল করতে যাচ্ছেন লারা। মঙ্গলবার মুম্বইয়ে। ছবি এটিকে-র সৌজন্যে।
মুম্বই-১ : আটলেটিকো-১
(ডিফেডেরিকো) (লারা)
মাস দেড়েকের ছোট্ট ফুটফুটে বাচ্চার গালটা টিপে একটা চওড়া হাসি দিলেন। তার পর ফ্রুট জুসের গ্লাস হাতে নিয়ে উদ্দাম নাচ। গ্যালারিতেও নীল-ঝড়।
একটু দূরের ছবিটা অবশ্য একেবারে আলাদা। একটা হাত গালে রাখা। শান্ত। উদ্বিগ্নে ভরা স্থির চোখ দু’টো মাঠের দিকে। গ্যালারির রঙ ফিকে।
সাতাশ মিনিটে ডিফেডেরিকোর নিখুঁত গোলে মুম্বইয়ের ভিভিআইপি গ্যালারি তখন দু’ভাগ। দুই মার্কির দু’রকম আবেগের মতোই। মুম্বইয়ের দিয়েগো ফোরলান যখন নাচছেন, হতাশায় ডুবে কলকাতার হেল্ডার পস্টিগা। দুই মহাতারকাই যে মঙ্গলবারের ম্যাচে স্রেফ দর্শক। চোট-সমস্যার জেরে গ্যালারিতে টিমের চিয়ারলিডার! তবে মুম্বইয়ে ফোরলানের মুখরক্ষার দায়িত্বে যেমন ডিফেডেরিকো। তেমন কলকাতায় পর্তুগিজ স্ট্রাইকারের মান বাঁচাচ্ছেন জাভি লারা (আইএসএল থ্রি-তে দু’জনেরই দু’টো করে গোল হয়ে গেল)। কোচির মতোই কলকাতার নায়ক আবার তিনি। একটাই আফসোস, এ দিন গোল করেও দলকে জেতাতে পারলেন না। ড্র করেই সন্তুষ্ট থাকতে হল এটিকে-কে।
লারার সৌজন্যে কোনও রকমে রক্ষা পেলেও, বিরতির আগেই তিন গোলে পিছিয়ে পড়ার কথা এটিকে-র। হাওকিপের একটা শট ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে। একটা ওপেন নেট নষ্ট করেন কোস্তা। আসলে এ দিন ৪-২-৩-১ ফর্মেশনে একেবারে ফ্লপ মলিনা। কোচিতে উইংগারদের জোরে যেটুকু কামব্যাক করার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি, মুম্বইয়ে শুরুতে সেটাও করতে পারলেন না এটিকে কোচ। বিক্রমজিৎ আর দ্যুতিকে শুরুতেই আটকে দেওয়ায়। এমনকী বিরতির পরে দ্যুতিকে রাখলেও, বিক্রমজিৎকে তুলে নিতে বাধ্য হন মলিনা। তবে তাঁর বদলে অবিনাশ রুইদাস নেমেও যে এটিকে-র কোনও সুবিধে হয়, সেটাও কিন্তু নয়। মুম্বইয়ের দিক পরিবর্তন করে খেলার স্ট্র্যাটেজিতে যেন আটকে গেল কলকাতা। সে ভাবে নড়াচড়াও করতে পারেননি লারা-হিউমরা।
তবে প্রথম পঁয়তাল্লিশ মিনিট মুম্বইয়ের হলে, পরের হাফ কলকাতার। মলিনার ছক বদল। টিমেও গতি। পঁয়ষট্টি মিনিটেই গোলের সবচেয়ে ভাল সুযোগ এসেছিল। কিন্তু এখানে প্রীতমের কাঁটা-কম্পাসে মাপা ক্রস থেকে গোলের ঠিকানা খুঁজতে পারেননি দ্যুতি। কিন্তু কথায় বলে না রাখে হরি, মারে কে! এটিকে-র ভাগ্যের দরজা খুলে যায় সত্তর মিনিটে। লাল কার্ড দেখে মুম্বইয়ের প্রণয় হালদার মাঠের বাইরে চলে যাওয়ার পরে। দশ জনের মুম্বইকে তখন আষ্টেপৃষ্টে চেপে ধরে এটিকে। লারার গোলটাকে এ সবের মধ্যে মেলালে অবশ্য চলবে না। দশ জনের মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে গোল হলেও, তাঁর বাঁক খাওয়ানো শট নিশ্চিত ভাবে টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা গোল। তবে শেষ কুড়ি মিনিট যতটা তেড়ে ফুঁড়ে খেলা উচিত ছিল, সেটা খেলেননি অর্ণব-বোরহারা। না হলে মুম্বই থেকে তিন পয়েন্ট নিয়েই ফেরা উচিত ছিল তাঁদের। উল্টে দশ জনের মুম্বইকেই ম্যাচে বরাবর শক্তিশালী লেগেছে। এমনকী সনি নর্ডি নামার পর তো আরও বেশি।
তবে মলিনার একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে। বিরতির পরেই হিউমকে তুলে নিলেন কেন? গত বছর এই মাঠেই হ্যাটট্রিক করেছিলেন হিউম। আর এই ম্যাচে যখন গোলের প্রবল দরকার তখন দলের প্রধান গোল স্কোরারকে বসিয়ে কি বার্তা দিতে চাইলেন মলিনা? এ দিন রাতে তার সঠিক উত্তর পাওয়া যায়নি। ম্যাচ শেষে এটিকে কোচ অবশ্য বলছিলেন, ‘‘ফুটবলে ভাল খেলে হেরে যায়। আবার খারাপ খেলে জিতে যায়। সবে তো টুর্নামেন্টের শুরু। এই ম্যাচ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা ঘরের মাঠে নামব।’’
শিক্ষার চেয়ে পরিশ্রম বেশি দরকার এটিকে-র। না হলে মুম্বই সত্তর মিনিটে দশ জনে নেমে এলেও, কলকাতার জয়ের দেখা নেই কেন! এটিকে-র ভাগ্য ভাল পস্টিগার অভাব ঢেকে দেওয়ার মতো অস্ত্র টিমে আছে।
জাভি লারা।
আটলেটিকো: দেবজিৎ, অর্ণব, প্রীতম (ডিকা), প্রবীর, আরোয়ো, বিক্রমজিৎ (অবিনাশ), বোরহা, হিউম (পিয়ারসন), দ্যুতি, লারা, বেলেনকোসো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy