নরসিংহ বা ইন্দ্রজিতের ডোপ টেস্টে ধরা পড়ার পর আমারই যেন কেমন অস্বস্তি হচ্ছে। তিনবার অলিম্পিক্স-সহ অসংখ্য টুনার্মেন্ট খেলেছি, পদক জিতেছি, আমি শিবিরে থাকাকালীন কখনও এরকম ঘটনা ঘটেনি। আমাদের সময়ও তো নাডা ছিল। নিয়মিত ডোপ পরীক্ষা হত। অলিম্পিক্সে রওনা হওয়ার মুখে এভাবে ডোপিং তো কখনও কালো ছায়া ফেলেনি জাতীয় টিমের উপর!
তা হলে কি পদক জেতার তাগিদেই শক্তিবর্ধক ওষুধ খাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে? না কি ক্রীড়াবিদরা সচেতন নন বলেই এ সব ঘটছে? কোনটা ঠিক এই প্রশ্নটা আমার মনে বারবার নাড়া দিচ্ছে। হয়তো দু’টোই ঠিক। নরসিংহ বা ইন্দ্রজিতের ক্ষেত্রে কী ঘটেছে বা ওদের বিরুদ্ধে কোনও চক্রান্ত হয়েছে কি না সেটা বলার জায়গায় আমি নেই। তদন্ত চলছে। নিশ্চয়ই আজ না হোক কাল সত্যটা প্রকাশ্যে আসবে। আমি এ বার যাচ্ছি না। তাই শিবিরে নেই। তাই দূর থেকে কিছু বলে বিতর্ক বাড়াতে চাই না। তবে সিডনি, আথেন্স এবং বেজিং, তিন তিনটি অলিম্পিকের শিবিরে বা টিমের সঙ্গে ছিলাম বলে এটা বলতে পারি, ডোপ সম্পর্কে আমাদের দেশের বেশির ভাগ ক্রীড়াবিদই সচেতন নয়। আঠাশ বছর ধরে শুটিং করছি, তাতেও আমিও তো সব জানি না। নেট ঘেঁটে বা পড়াশোনা করে জানার চেষ্টা করি কী খাওয়া উচিত, কী নয়। আসলে এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট টিমের ফেডারেশন, সাই বা ক্রীড়ামন্ত্রকের আরও সচেতন হওয়া দরকার। অ্যাথলিটদের জানানো দরকার। আর রাশিয়ার মতো শুধু পদকপ্রাপ্তির জন্য বা অলিম্পিক্স, এশিয়াড বা কমনওয়েলথের দলে সুযোগ পাওয়ার জন্য কেউ যদি এটা করে তবে সেটা অন্য কথা। চিটিং হিসাবে সেটা ধরতে হবে। এটা অন্যায়। যাঁরা এটা করে তাদের নির্বাসনে পাঠানোই উচিত।
এমনিতে ডোপের মতো বিষয় নিয়ে লিখতে ভাল লাগে না। বলতেও না। কারণ এ সব কেলেঙ্কারি খেলার মাঠকে কলঙ্কিত করে। পেশাদারিত্বের যুগে বলে সেই কলঙ্ককে চাপা দেওয়া দিতে গেলে লজ্জা লাগে।
ডোপ ছেড়ে খেলার কথায় আসি। অলিম্পিক্সের পদক না পেলেও শ্যুটিংয়ের বহু অর্ন্তজাতিক পদক আমার বাড়ির লকারে আছে। সে জন্যই যেখানেই যাচ্ছি সবাই প্রশ্ন করছে, অভিনব বিন্দ্রা কী এ বার রিওতে পদক পাবে? গগন নারাঙ্গ? জিতু, হিনা সিধুদের পদক সম্ভাবনা কতটা। সরাসরিই বলি, বারোজনের শুটিং দলে অনেক সম্ভাবনাময় বা অভিজ্ঞ শ্যুটার থাকলেও তিনটি পদকের ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। সেটা বাড়লে আরও খুশিই হব।
পদক জেতার ব্যাপারে আমার প্রথম বাজি অভিনব বিন্দ্রা নয়, জিতু রাই। পিস্তল ইভেন্টে দারুণ করছে ছেলেটা। ওর এটা প্রথম অলিম্পিক্স। কিন্তু বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দু’বছর আগে থেকে ওর সোনার বছর চলছে। গত ছয় মাস তো চমকে দিচ্ছে। ওর অ্যাটিটিউড, হার না মনোভাব ওকে পদক এনে দেবে মনে হচ্ছে। সেনা কর্মী হিসাবে ও যা অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছে তাতে পদক না পেলে সেটা খারাপ হবে। আমার দ্বিতীয় বাজি হিনা সিঁধু আবার টেকনিক্যালি প্রচণ্ড ভাল। হয়তো কোনও খারাপ শট মেরেছে। পয়েন্ট নষ্ট হয়েছে। পরেরটা মারার সময়ই কিন্তু দেখবেন ওর চোখ-মুখ অন্য রকম হয়ে গিয়েছে। আরও স্থির। আরও নিখুঁত। এবং দেখবেন হিনা ঘুরে দাঁড়াবেই। ও অভিজ্ঞ সে জন্যই প্রত্যাশা বেশি।
অভিনব বিন্দ্রার সঙ্গে দীর্ঘদিন একসঙ্গে বহু টুনার্মেন্ট খেলেছি। সতীর্থ হিসাবে শিবিরে থেকেছি। প্রচুর আলোচনা করেছি। ওকে যত দেখি তত মুগ্ধ হই। অসাধারণ প্রতিভা। দশ মিটার এয়ার রাইফেলে অলিম্পিক্সে দেশের একমাত্র ব্যক্তিগত সোনাজয়ী অ্যাথলিট। ও তো নিজেই একটা মাইলস্টোন। শ্যুটিং-এ নতুন নিয়ম চালু হওয়ার পর অভিনব কী করে সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকব। ও ঘোষণা করে দিয়েছে রিও-ই ওর শেষ অলিম্পিক্স। চাইব এখানে আমার বন্ধু আর একটা সোনা জিতে মহানায়ক হয়ে অবসর নিক। এশিয়াড থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণার পর সোনা জিতেছিল, এ বার যেভাবে ও তৈরি হয়ে গিয়েছে তাতে অভিনব পদক না পেলে অবাকই হব। অনেকেই গগন নারাঙ্গের কথা বলছেন। ও পদক জয়ের দাবিদার নয় বলব না। গগন ট্যালেন্টেড, পরিশ্রমী। তবে প্রচণ্ড মুডি। সেটাই ওর ভাল বা মন্দ দিক। ওর দিনে ওই সেরা। পেলে তো ভালই। স্টার স্পোর্টসের বিশেষজ্ঞ লেখক হিসাবে শ্যুটারদের পারফরম্যান্স নিক্তিতে মাপার পর অয়নিকা পাল, গুরপ্রীত সিংহ, অপূর্বী চান্ডিলাদের উপর বাজি রাখতে পারছি না। প্রত্যেকেরই এটা প্রথম অলিম্পিক্স। ওদের উপর তাই চাপ বাড়াতে চাই না। সিডনিতে প্রথমবার আমার নিজের কথা মনে পড়ছে ওদের দেখে। জিতে ফাইনাল রাউন্ডে ওঠার পর পা কেঁপে গিয়েছিল। রাইফেল নড়ে গিয়েছিল। আসলে অলিম্পিক্সের মতো ইভেন্টে অভিজ্ঞতা যে সব সময়ই একটা বড় অস্ত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy