Advertisement
২১ মে ২০২৪

যুবভারতীতে অধরা জয়ের খোঁজে আজ মোহনবাগান

শনিবার সকালে মোহনবাগান মাঠে লাজং এফসি ম্যাচের প্রস্তুতির ফাঁকে বার বার হাইতি তারকার দিকে তাকাচ্ছিলেন শঙ্করলাল চক্রবর্তী।

মরিয়া: ম্যাচ-ফিট হতে প্রাণপাত সনি নর্দের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

মরিয়া: ম্যাচ-ফিট হতে প্রাণপাত সনি নর্দের। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক

শুভজিৎ মজুমদার
শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:৩৬
Share: Save:

একশো মিটার বারো সেকেন্ডে দৌড়চ্ছেন সনি নর্দে। একবার নয়, বেশ কয়েক বার। দৌড় শেষ করেই পেশির শক্তি বাড়ানোর জন্য মাঠের বাইরে চলে গেলেন সাইক্লিং করতে।

শনিবার সকালে মোহনবাগান মাঠে লাজং এফসি ম্যাচের প্রস্তুতির ফাঁকে বার বার হাইতি তারকার দিকে তাকাচ্ছিলেন শঙ্করলাল চক্রবর্তী। কিন্তু সবুজ-মেরুন কোচের অভিব্যক্তিতে স্বস্তির বদলে উদ্বেগই বেশি করে ধরা পড়ল। লাজংয়ের গতিময় ফুটবলের বিরুদ্ধে সনি-ই হতে পারতেন তাঁর তুরুপের তাস। কিন্তু এখনও যে খেলার মতো জায়গায় নেই দলের সেরা অস্ত্র।

অনুশীলন শেষ করেই সনি ছুটলেন ডাক্তারের কাছে চোট পরীক্ষা করতে। বলে গেলেন, ‘‘আগের চেয়ে অনেক সুস্থ। আশা করছি, ২৮ ডিসেম্বর নেরোকা এফসি-র বিরুদ্ধে ম্যাচেই মাঠে ফিরব।’’ এই পরিস্থিতিতে প্রতিপক্ষ আই লিগ টেবলের সব চেয়ে নীচে থাকা বিদেশিহীন লাজং এফসি হলেও শঙ্করলাল স্বস্তিতে নেই। সাংবাদিক বৈঠকে বললেন, ‘‘লাজংয়ে কোনও বিদেশি ফুটবলার আছে কি নেই তা নিয়ে ভাবছি না। আমাদের লক্ষ্য এই ম্যাচ থেকে তিন পয়েন্ট অর্জন করা।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘ডার্বিতে হারের পরে মিনার্ভার বিরুদ্ধে জয় ফুটবলারদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে।’’

শুধু সনির চোট নয়, শঙ্করলালের দুশ্চিন্তার আরও একটা কারণ এই মরসুমে আই লিগে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে মোহনবাগানের পারফরম্যান্স। এখনও পর্যন্ত কলকাতায় চারটি ম্যাচ খেলেছেন দিপান্দা ডিকারা। একটিও জেতেননি। হেরেছেন দু’টি। চার্চিল ব্রাদার্স ও ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে। ড্র করেছেন আইজল এফসি ও চেন্নাই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে। মোহনবাগান কোচ বললেন, ‘‘আই লিগে এ বার ঘরের মাঠে এখনও পর্যন্ত জিততে পারিনি। রবিবার ছবিটা বদলাতে হবে।’’

আট ম্যাচে ১২ পয়েন্ট নিয়ে এই মুহূর্তে আই লিগ টেবলে ষষ্ঠ স্থানে মোহনবাগান। আজ, রবিবার লাজংয়ের বিরুদ্ধে জিতলে তৃতীয় স্থানে উঠে আসার সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎ, খেতাবি দৌড়ে প্রত্যাবর্তন ঘটাবেন হেনরি কিসেক্কারা। কিন্তু জিততে না পারলে আরও পিছিয়ে পড়তে হবে। ফিকে হয়ে যাবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন। তাই অগ্নিপরীক্ষায় নামার চব্বিশ ঘণ্টা আগে সবুজ-মেরুন অন্দরমহলের আবহ রীতিমতো থমথমে।

মোহনবাগান কোচ সাধারণত ম্যাচের আগের দিন হাল্কা অনুশীলন করান। ফুটবলারদের চনমনে রাখতে কখনও হ্যান্ডবল, কখনও ফুটভলি খেলেন ফুটবলারেরা। শনিবার সকালেই দেখা গেল ব্যতিক্রমী দৃশ্য। প্রায় ঘণ্টাখানেক ম্যাচ অনুশীলন করালেন শঙ্করলাল। সামনে ডিকা-হেনরি। এক দিকের উইংয়ে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে আই লিগের ডার্বিতে গোল করা আজহারউদ্দিন মল্লিক। অন্য দিকে শেখ ফৈয়জ। বল নিয়ে উঠে তাঁরা ভাসিয়ে দিচ্ছেন ডিকা ও হেনরি-র উদ্দেশে।

আই লিগের ডার্বিতে লাল কার্ড (জোড়া হলুদ কার্ড) দেখায় মিনার্ভা এফসি-র বিরুদ্ধে খেলতে পারেননি অধিনায়ক কিংসলে। রবিবার মাঠে ফিরছেন তিনি। এ ছাড়া প্রথম একাদশে খুব বেশি পরিবর্তনের পক্ষপাতী নন মোহনবাগান কোচ। কিন্তু তাঁর একটা সিদ্ধান্তে কেউ কেউ ক্ষুব্ধ। শিল্টন পালকে আঠারো জনের তালিকাতেও রাখেননি তিনি। শোনা যাচ্ছে, অভিজ্ঞ গোলরক্ষকের সঙ্গে মানসিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে শঙ্করলালের। এই কারণেই বাদ পড়েছেন শিল্টন।

আট ম্যাচ খেলে চার পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবলে সবার শেষে লাজং। আগের ম্যাচে রিয়াল কাশ্মীর ১-৬ চূর্ণ করেছে তাদের। তা সত্ত্বেও লাজং কোচ অ্যালিসন খারসিনিউ জানিয়ে দিলেন, তাঁদের প্রধান লক্ষ্য মোহনবাগানের জয়রথ আটকানো। সাংবাদিক বৈঠকে বললেন, ‘‘মোহনবাগানের মতো দলের বিরুদ্ধে কলকাতায় খেলা কঠিন। তা সত্ত্বেও আমাদের প্রধান লক্ষ্য অন্তত এক পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়া।’’ অর্থাৎ, মোহনবাগানকে আটকাতে রক্ষণাত্মক রণনীতিকেই অস্ত্র করবেন লাজং কোচ। প্রতিপক্ষের রণকৌশল অকেজো করতেই অনুশীলন ম্যাচে নাইজিরীয় ডিফেন্ডার কিংসলেকে খেলালেন ডিকা-হেনরির বিরুদ্ধে।

সনি নেই। লাজংয়ের বিরুদ্ধে ডিকা-ই এখন প্রধান ভরসা মোহনবাগানের। দু’বছর আগে লাজংয়ে খেলার সময় আই লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন ক্যামেরুন স্ট্রাইকার। পুরনো দলের শক্তি ও দুর্বলতা সব চেয়ে ভাল জানেন তিনি। তবে রবিবাসরীয় যুবভারতীতে মোহনবাগানকে খেতাবি দৌড়ে ডিকা ফিরিয়ে আনতে পারেন কি না, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE