নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতিতে বোয়া।—নিজস্ব চিত্র
ডার্বির পর ময়দানি রসিকতায় নতুন সংযোজন। যার সৃষ্টিকর্তা যুবভারতী ফেরত সবুজ-মেরুন জনতা। কিন্তু সেই ঠাট্টাতেই যে লুকিয়ে শুক্রবার সুনীল ছেত্রীদের বধ করার প্রতিষেধক!
রসিকতা— আই লিগের হাস্যকর এবং স্বার্থপর ফুটবলারের পুরস্কার পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে কে? ডেনসন দেবদাস আর সনি নর্ডি আবার কে?
যা শুনে হাসছেন ছয়ের দশকের শেষের দিকের মোহনবাগানের সুদর্শন উইঙ্গার প্রণব গঙ্গোপাধ্যায়। ঊনসত্তরের শিল্ড ফাইনালে যাঁর জোড়া গোলে ইস্টবেঙ্গলকে ৩-১ হারানো আজও অনেক প্রবীণ সবুজ-মেরুন সমর্থকের সোনার স্মৃতি। পার্ক সার্কাসের বাড়িতে বসে প্রণব বলে বসলেন, “ডেনসন আগে তবু বলটা ভাল কাড়ত। আর সনি! ও তো দু’শো গজ দৌড়ে দু’গজের পাস বাড়াচ্ছে। দরকার ঠিক উল্টোটাই।”
কথাগুলো বাগান কোচ সঞ্জয় সেনের কানে পৌঁছেছে কি? উত্তর জানা নেই। তবে গত বারের আই লিগ আর এ বারের ফেড কাপ চ্যাম্পিয়ন বেঙ্গালুরু এফসি-র বিরুদ্ধে আজ ঘরের মাঠে নামার আগে ডেনসনকে বসাতে চলেছেন সঞ্জয়। মুখে যদিও বললেন, “ডেনসন বিশ্রাম পাচ্ছে না। এই সুযোগে অন্যদেরও দেখে নেব।”
বৃহস্পতিবার অনুশীলনে মাঝমাঠে বিকল্পও পরখ করে রাখলেন বাগান কোচ। বেঙ্গালুরুর বক্স অফিস জোশুয়া-সুনীল-রবিন-রুনির চতুর্ভূজ। জোশুয়া আবার অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের অধিনায়কত্ব করেছেন ছ’বছর আগে। খেলেছেন প্রিমিয়ার লিগে। মাঝমাঠে এঁদের বোতলবন্দি করতে বিক্রমজিতের সঙ্গে শেহনাজ বা সৌভিক চক্রবর্তীকে রেখে জয়ের অঙ্ক কষছেন সঞ্জয়।
আর এই মুহূর্তে বাগানের প্রাণভোমরা তকমাধারী সনি? তাঁকে আর বোয়াকে নিয়ে সকালে র্যাম্পার্টের দিকে ছাউনিতে দীর্ঘ ক্লাস নিলেন চেতলাবাসী বাঙালি কোচ। কেন সনি বল ছাড়তে দেরি করছেন তা জানতে চান সঞ্জয়। আর বোয়ার জন্য নির্দেশ বিপক্ষের দখলে বল থাকলে নেমে এসে বেঙ্গালুরু সেন্ট্রাল মিডিওকে ধরো। বাড়ি ফেরার আগে সনি বলে গেলেন, “ডার্বিতে বল বেশি হোল্ড করেছি। সেটা আর হবে না।” যা শুনে সঞ্জয় বলছেন, “ওদের ভুল শুধরে দিয়েছি। ইস্টবেঙ্গলের চেয়েও কঠিন বিপক্ষ বেঙ্গালুরু। ওদের লং বল আর ডেড বল সামলানো আমার ডিফেন্সের চ্যালেঞ্জ।”
চার ম্যাচে ৮ পয়েন্টে লিগ টেবলে বাগান পাঁচ নম্বরে। যেখানে দু’ম্যাচ বেশি খেলে ১০ পয়েন্টে তিনে অ্যাশলে ওয়েস্টউডের বেঙ্গালুরু। ডার্বির দিন উড়ে এসে সনি-কাতসুমিদের রেকি করে গিয়েছেন তিনি। আজ জিতলেই যে উঠে আসবেন শীর্ষে। ব্রিটিশ কোচ বলছেন, “ফেড কাপে মোহনবাগানকে দেখেছি। ওরা সব সময় শক্ত প্রতিপক্ষ। বিশেষ করে হোম ম্যাচে।” বাগান কোচ আবার বিপক্ষকে সমীহ দেখিয়েও খোঁচা দিয়ে রাখলেন, “আরে ফেড কাপে ওরা তো তিন গোলে হারে! আমাদের কপাল খারাপ তাই ড্র হয়েছিল। এ বার জিততেই হবে।”
ভারতীয় ফুটবলে আত্মপ্রকাশ থেকে ইস্টবেঙ্গল তাদের গাঁট হলেও মোহনবাগানের বিরুদ্ধে এখনও অপরাজিত বেঙ্গালুরু। তবে ভারত অধিনায়কের এ বারের লিগে এখনও গোল নেই। সুনীল-সমস্যার চেয়েও তাদের আজ বড় সমস্যা হতে পারে কিনিয়ান স্টপার ওসানোর সাসপেনশনে থাকা।
হয়তো বিপক্ষ রক্ষণে এই ছিদ্রের সন্ধান জেনে সনি-কাতসুমিদের মুখে তাঁবু ছাড়ার আগে ঝকঝকে হাসি। দেখার, শুক্র-রাতে এই হাসি অটুট থাকে কি না বাগানে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy