আগামী ২৪ মে-র রাত থেকে অন্য খাতে বইতে পারে ভারতীয় ক্রিকেট।
সে দিন ইডেনে আইপিএল ফাইনালের রাত। তবে সেই রাতের বাইশ গজ থেকে কোনও ট্রেন্ড তৈরি হচ্ছে না। যা তৈরি হতে পারে বাইশ গজের বাইরে। ম্যাচ শুরুর আগে।
সে দিন আসলে নতুন জমানার ভারতীয় বোর্ড ঘোষণা করবে নতুন জমানার ক্রিকেট কমিটির। যেখানে গাওস্করদের প্রজন্ম নেই, আছে সৌরভ-প্রজন্ম। সেই তিনটে নামই ঘুরেফিরে থাকছে কমিটির জন্য। সচিন। সৌরভ। রাহুল।
সাধারণত তারকায় ভরা কমিটি বলতে বোঝায় ভার থাকবে, ধার থাকবে না। নিতান্তই আলঙ্কারিক ব্যাপারস্যাপার। কাজ না থাকা। নিছক চাকচিক্য বাড়ানোর জন্য থেকে যাওয়া। ব্যতিক্রম হতে যাচ্ছে এ বারের ক্রিকেট কমিটি। নবীন সদস্যরা যে শর্ত দিয়েছেন, তাঁরা শুধু থাকতে চান না। পারফর্ম করতে চান। আর পারফরম্যান্সের জন্য তাঁদের চাই ক্ষমতা। শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য গদিতে বসতে তাঁরা রাজি নন। শোনা যাচ্ছে জগমোহন ডালমিয়ার ভারতীয় বোর্ড সেই শর্ত মেনে নিচ্ছে। তিন সদস্যের কমিটির ওপরই ভারতীয় ক্রিকেট পরিচালনার দায়িত্ব তারা ছেড়ে দিতে চায়। যদি এই পরিকল্পনা অনুযায়ী সত্যি কাজ হয়, তা হলে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির নিরঙ্কুশ আধিপত্য যে থাকবে না, সেটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। এমনকী কমিটি নিয়োগের ব্যাপারেও ধোনির সঙ্গে কেউ কথা বলার প্রয়োজন মনে করছে না।
কিন্তু তা বলে অধিনায়ক পদ থেকে ধোনি অপসারিত হচ্ছেন না। যে অপসারণের কালো মেঘ ঢেকে ফেলেছে তাঁর টিম ডিরেক্টরকে। ডিরেক্টর পদটাই তুলে দেওয়ার কথা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে রবি শাস্ত্রীর অপসারিত হওয়া ছাড়া কোনও পথ খোলা থাকবে না।
ভারতীয় ক্রিকেটমহলে এই মর্মে খবর রটে যাওয়ায়, রীতিমত বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়েছে। টিম ধোনিকে ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজের অন্ধকার থেকে টেনে তুলেছিলেন শাস্ত্রী। ইংল্যান্ডের ওয়ান ডে সিরিজ জেতানোর মুখ্য ভূমিকা নেওয়া ছাড়াও বিরাট কোহলির মতো মহাতারকা ব্যাটসম্যানকে ফর্মে ফেরানোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেওয়া। বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল পৌঁছনো— সব কিছুর পিছনেই শাস্ত্রীর দীর্ঘকায় অবয়ব ছিল। তাঁর জমানায় ভারত ২১ ওয়ান ডে-র মধ্যে ১৭ জিতেছে। আর অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে আট ম্যাচ সাত। তবু শাস্ত্রীর বিরুদ্ধে বোর্ড কর্তাদের ক্ষোভ তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে রয়েছে। প্রধান অভিযোগ তিনি নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনের লোক। শাস্ত্রীকে তাই নতুন বোর্ডের মাথারা বিশ্বাস করতে পারছেন না। ব্যতিক্রম সচিব অনুরাগ ঠাকুর। তিনি মনে করেন, শাস্ত্রীর জন্য এখনও কোনও একটা জায়গা রাখা উচিত।
নতুন পরামর্শদাতা কমিটি আরও ব্যতিক্রমী হতে যাচ্ছে এ জন্য যে, একই কাজ তিন জনকে দিয়ে করানো হবে না। দায়িত্ব ভাগ ভাগ করা থাকবে। লক্ষ্য হল, কোথাও যেন ওভারল্যাপিং না হয়।
রাহুল দ্রাবিড়কে যেমন ভাবা হচ্ছে ভারতের অনূর্ধ্ব উনিশ টিম আর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির দায়িত্বভার বহনের জন্য। বর্তমানে এনসিএ স্রেফ ক্রিকেটারদের চোট সারানোর আখড়া। দ্রাবিড়ের কাজ হবে অনেক সুদূরপ্রসারী। সিনিয়র টিমের সঙ্গে জুনিয়র টিমের যোগাযোগ রেখে যাওয়া। বলা যেতে পারে ট্যালেন্ট ডেভলপমেন্ট ম্যানেজার।
সচিন আর দ্রাবিড়ের প্রচুর পার্টনারশিপ দেখেছে ভারতীয় ক্রিকেট। আবার তা দেখার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সচিনকেও অনুরোধ করা হবে যাতে তিনি মাঝেমধ্যে এনসিএতে সময় দেন। সিনিয়র টিম নিয়ে মতামত দেন। আর চেতেশ্বর পূজারা বা কোহলির মতো কেউ ফর্ম হারালে তাঁকে যাতে ডেকে বলে দিতে পারেন কোথায় অসুবিধেটা হচ্ছে।
সচিন-সৌরভ-রাহুল। অ্যাডভাইজারি কমিটিতে চূড়ান্ত হওয়ার দিকে।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভূমিকাটা অনেকটা ভাবা হয়েছে হাই পারফরম্যান্স ম্যানেজারের আদলে যা অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে আছে। ভারতীয় ক্রিকেটে কেউ স্বপ্নেও কখনও ভাবেনি। আপাতত সৌরভকে বলা হচ্ছে, টিম ইন্ডিয়ার বিদেশে পারফরম্যান্স উন্নতি করার ব্লু প্রিন্ট তৈরি করো। বিশেষ করে উপমহাদেশের বাইরে। সৌরভের দায়িত্ব হবে টিমের জন্য সার্বিক নির্দেশিকা তৈরি করে দেওয়া। শোনা গেল, উত্তরে সৌরভ বলেছেন যে অনেক কিছু বদলানোর দরকার আছে। যেমন টিম ইন্ডিয়ার কোচ ব্যাটিং স্পেশ্যালিস্ট হলেও আবার ব্যাটিং কোচ রাখে। অথচ কোনও স্পিনিং কোচ রাখে না। যেখানে বেশির ভাগ আমাদের জেতায় স্পিন।
ভারতীয় ক্রিকেট এখন যাঁরা চালাচ্ছেন, সেই ডালমিয়া-মনোহর-অনুরাগরা সৌরভের ক্রিকেটীয় দর্শনকে অসম্ভব সম্মান করেন। তাই কমিটির বাকি দুই সদস্যের তুলনায় আপাতত তিনি বেশি গুরুত্ব পাবেন।
বাংলাদেশ সফর শুরুর আগে এখন কোচ বাছাইয়ের আর সময় নেই বললেই চলে। প্রথম টেস্ট শুরু ১০ জুন, ফাতুল্লায়। মে মাসের অর্ধেক হয়ে গেল, কোচের জন্য বিজ্ঞাপণই দেওয়া হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সৌরভকে দলের সঙ্গে পাঠানো হতে পারে। তিনি এক রকম ‘সুপার কোচের’ ভূমিকায় থাকবেন।
রবি শাস্ত্রী— তাঁর কী হচ্ছে শেষ পর্যন্ত? কেউ কেউ বলছেন, শাস্ত্রীকে এই কমিটির সঙ্গে কোনও না কোনও ভাবে যুক্ত রাখা উচিত। কোনও একটা দায়িত্ব দেওয়া উচিত। কিন্তু বোর্ডে শ্রীনির বিরুদ্ধে পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত যে, শাস্ত্রী তাঁর পছন্দের লোক বলে অপছন্দের তালিকায়। এখনও কিছু চূড়ান্ত নয়। কিন্তু পরিস্থিতির বর্তমান রূপরেখা এটাই।
সৌরভ ইন, শাস্ত্রী আউট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy