সোনা তুলে বেঁচে গেলেন জিমন্যাস্ট রি সে গোয়াং।
রিও অলিম্পিক্সে দল রওনা হওয়ার আগেই টার্গেটটা নাকি বলে দেওয়া হয়েছিল উত্তর কোরিয়ার অ্যাথলিটদের। দেশের শাসক কিম জঙ্গ উন বলে দিয়েছিলেন, অন্তত পাঁচটা সোনা নিয়ে ফিরতে হবে। মোট পদকও যেন ১৭টার কম না হয়। না হলে কপালে অশেষ দুর্ভোগ জুটতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল।
লক্ষ্যপূরণ হয়নি। রিওতে দুটো-সোনা সহ উত্তর কোরিয়ার মোট পদক এসেছে সাতটা। টার্গেট থেকে যা অনেকটাই দূরে। তার উপরে প্রতিদ্বন্দ্বী দক্ষিণ কোরিয়ার তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে শেষ করাও আছে। দক্ষিণ কোরিয়া রিওতে ন’টা সোনা সহ-পেয়েছে ২১টা পদক। কিম জঙ্গ উন যা দেখে প্রবল খেপে উঠতে পারেন। ফলে দেশে ফেরার পর অশেষ দুর্ভোগের আশঙ্কায় নাকি এখন কাঁটা হয়ে রয়েছেন উত্তর কোরিয়ার পদক না পাওয়া অ্যাথলিটরা। অনেকে তো এমনটাও আশঙ্কা করছেন, তাদের শাস্তি হিসেবে না কয়লাখনিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কিমের সাম্রাজ্যে সেটা অসম্ভব নয়। অ্যাথলিটরা কেন ব্যর্থ হলেন তাঁর খোঁজ নিতে পারেন তিনি। আর উত্তর মনের মতো না হলেই হতে পারে বিপদ। এক বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ‘‘যাঁরা পদক জিতেছেন তাঁরা পুরস্কৃত হবেন। ভাল বাড়িতে থাকতে দেওয়া। বেশি রেশন। হয়তো গাড়ি বা আরও উপহারও জুটে যেতে পারে।’’ আর যাঁরা পদক পায়নি? আশঙ্কাটা শুনলে আতঙ্কিত হয়ে পড়াটা স্বাভাবিক। ‘‘কিমের যদি মনে হয় যাঁরা পদক জিততে পারেননি, আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাঁরা ওঁর সম্মানহানি করেছেন, তা হলেই শাস্তির খাঁড়া নেমে আসতে পারে অ্যাথলিটদের উপর। খারাপ ঘরবাড়িতে তাঁদের থাকতে বাধ্য করা। রেশনে ছাঁটাই। তার থেকেও খারাপ হলে কয়লা খনিতেও পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে।’’
উত্তর কোরিয়ার শাসক রেগে গেলে কী রকম শাস্তি দিতে পারেন, তার উদাহরণ নাকি কম নেই। অ্যাথলিটদের শাস্তি দেওয়াতেও বিশেষ খ্যাতি রয়েছে বলে অনেকেই আঙুল তুলেছেন তাঁর দিকে। ২০১০ বিশ্বকাপে যেমন। পর্তুগালের কাছে ০-৭ হারা ফুটবল দলের অনেক সদস্যকেই নাকি রেগে গিয়ে কয়লাখনিতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। বিশ্বকাপে দেশ দারুণ কিছু করবে আশা ছিল। সে জন্য প্রথা ভেঙে ম্যাচটির সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। কিন্তু কিমের প্রত্যাশা মেটাতে না পারায় ফুটবল দলের অনেক সদস্যকেই বাড়ি ফিরতে দেওয়া হয়েছিল দু’বছর পরে বলে অভিযোগ।
তবে উত্তর কোরিয়ার সরকারি মুখপাত্র কিন্তু অন্য কথা বলছেন। রিও অলিম্পিক্স শেষ হওয়ার পর যিনি বলেছেন, ‘‘দেশে ফিরলে উষ্ণ অভ্যর্থনা পাবে আমাদের অ্যাথলিটরা। নায়কদের মতো বরণ করে নেওয়া হবে। হয়তো লন্ডনের মতো অতটা ভাল হয়নি, তবে অ্যাথলিরা খুব ভাল পারফর্ম করেছে রিওতে।’’ কিন্তু উত্তর কোরিয়ার শাসনব্যবস্থার উপর দীর্ঘদিন নজর রাখা বিশেষজ্ঞরা সে দেশের মুখপাত্রের সঙ্গে এক মত হতে পারছেন না।
বরং বলা হচ্ছে, যদি শাস্তির হাত থেকে নিশ্চিত ভাবে কেউ বেঁচে যান, সেটা দু’জন। জিমন্যাস্ট রি সে গোয়াং আর মেয়ে ভারোত্তোলক রিম জং সিম— যে দু’জন রিওতে সোনা জিতেছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy