গত ছয় মরসুমে ভারতীয় খেলাধুলোর জগতে আলাদা একটা জায়গা করে নিয়েছে প্রো কবাডি লিগ। এ বার তাই সপ্তম মরসুমের আগে প্রো কবাডির নিলাম নিয়ে আগ্রহ কম ছিল না। মুম্বইয়ের পাঁচতারা হোটেলে সোমবার নিলামে হাজির ছিলেন ১২টি দলেরই মালিক। দু’দিন ধরে চলা নিলামের প্রথম দিন সব দলই ঘর গুছিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেই এসেছিল। প্রায় আট ঘণ্টা ধরে চলা নিলামে যে সব ছোট ছোট দৃশ্য উঠে এল তার কোলাজ তুলে ধরা যাক।
আকর্ষণ সেই ক্রিস কাউড্রে তাঁর টেস্টে অভিষেক ভারতের বিরুদ্ধে ১৯৮৪ সালে মুম্বইয়ে। তাই এই শহর তাঁর খুব প্রিয়। গত বারই তিনি প্রো-কবাডির নিলাম পরিচালনা করে চমকে দিয়েছিলেন। এ বারও তাঁকে একই ভূমিকায় দেখা গেল তাঁর প্রিয় শহরে। তিনি প্রাক্তন ইংল্যান্ড অলরাউন্ডার ক্রিস কাউড্রে। কিংবদন্তি ক্রিকেটার কলিন কাউড্রের ছেলে। কবাডি খুব একটা দেখেননি, নিজেই স্বীকার করেন। তবে ক্রিকেট খেলার মতো নিলাম পরিচালনাতেও তিনি যে দক্ষ, সেটা বুঝিয়ে দিতে সময় নেননি। মঞ্চে উঠেই ক্রিস বলে দিলেন, ‘‘আপনাদের পছন্দ হোক বা না হোক, আমার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এটা ভুলে যাবেন না কেউ।’’ তাঁর অনবদ্য নিলাম পরিচালনা করার ভঙ্গিও অন্যতম আকর্ষণ হয়ে দাঁড়াল।
কোটি টাকার খেলোয়াড়নিলামে শুধু দু’জনই এ বার এক কোটি টাকার বেশি দর পেলেন। সিদ্ধার্থ দেশাই (তেলুগু টাইটান্স, ১.৪৫ কোটি টাকা) এবং নীতিন টোমার (পুণেরি পল্টন, ১.২০ কোটি)। গত বার সংখ্যাটা ছিল পাঁচ। এ ছাড়া প্রথম দিনের নিলামে উল্লেখযোগ্য দর পেলেন রাহুল চৌধরি (তামিল থালাইভাস, ৯৪ লক্ষ), মনু গোয়াত (ইউপি যোদ্ধা, ৯৩ লক্ষ), সন্দীপ নারিওয়াল (ইউ মুম্বা, ৮৯ লক্ষ) এবং মহম্মদ ইসমাইল নবিবক্স (বেঙ্গল ওয়ারিয়র্স, ৭৭.৭৫ লক্ষ)। এ ছাড়া প্রথম দিনের নিলামে অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনা, এক এনএফএল খেলোয়াড়কে দলে নিল তেলুগু টাইটান্স। আমেরিকান ফুটবলের শক্তিশালী খেলোয়াড়কে কবাডিতে কাজে লাগানোই উদ্দেশ্য। বললেন দলের অন্যতম মালিক।
জুনিয়র বচ্চনের ভবিষ্যদ্বাণী
প্রো কবাডি লিগের জন্মলগ্ন থেকেই তিনি জড়িয়ে— জয়পুর পিঙ্ক প্যান্থার্স দলের মালিক বলিউড তারকা অভিষেক বচ্চন। নিলাম শুরু হওয়ার আগে সাংবাদিক বৈঠকে অভিষেক বলছিলেন, ‘‘ফুটবলে স্ট্রাইকাররা কিন্তু ডিফেন্ডারদের থেকে বেশি অর্থ পায়। কিন্তু কবাডিতে স্ট্রাইকারদের পাশাপাশি ডিফেন্ডাররাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। গত মরসুমে ফজল আত্রাচেলির দর উঠেছিল ১ কোটি টাকা। এতেই বোঝা যায় ডিফেন্ডারদের কতটা গুরুত্ব এই লিগে।’’ জুনিয়র বচ্চনের কথা যে এ ভাবে মিলে যাবে, বোঝা যায়নি। গত বার ইরানের ডিফেন্ডার অ্যাবোজার মিঘানি ৭৬ লক্ষ টাকা দর পেয়েছিলেন। এ বারও নিলামের প্রথম দিনই মিঘানির দর উঠল ৭৫ লক্ষ টাকা। পটনা পাইরেটস তাঁকে প্রায় দলে নিয়েই ফেলেছিল, কিন্তু ফাইনাল বিড ম্যাচ (এফবিএম) কার্ড প্রয়োগ করে নাটকীয় ভাবে তাঁকে আবার দলে রেখে দেয় তেলুগু টাইটান্স। এই কার্ডের নিয়ম হল, এক জন খেলোয়াড়ের সর্বোচ্চ দর যা উঠবে, সেই অর্থে পুরনো দল তাঁকে নিলামে রেখে দিতে পারবে। তবে এই কার্ড ব্যবহার করার সীমা রয়েছে।
বেঙ্গল ওয়ারিয়র্স
এখনও এক বারও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি বেঙ্গল ওয়ারির্স। তাই এ বার শক্তিশালী দল গড়তে শুরু থেকেই নিলামে ঝাঁপাতে দেখা যায় তাদের। নাটকও দেখা গেল ইরানের অলরাউন্ডার মহম্মদ ইসমাইল নবিবক্সকে নিয়েও। পটনা এবং ইউ মুম্বার লড়াই হচ্ছিল তাঁকে দলে নেওয়ার। মাঝখান থেকে বেঙ্গল ওয়ারিয়র্স ৭৭.৭৫ লক্ষ টাকায় তাঁকে কিনে নেয়। সবচেয়ে বড় কথা, এ বারই কি না তিনি প্রো কবাডি লিগে প্রথম নামবেন। তবু তাঁর এত দর ওঠার কারণ একটাই। ২০১৮ এশিয়ান গেমসে ইরানের যে দল ভারতকে হারিয়ে দিয়েছিল, সেই দলে ছিলেন তিনি। তাই তাঁর নাম ভারতীয় কবাডি মহলে পরিচিত। বেঙ্গল ওয়ারিয়র্সও তাঁকে দলে নিতে মরিয়া হয়ে ঝাঁপায়।
বেঙ্গল ওয়ারিয়র্স এ বার কোচের দায়িত্ব দিয়েছে বি সি রমেশকে। গত বারের চ্যাম্পিয়ন দল বেঙ্গালুরু বুলসের কোচ ছিলেন তিনি। ফলে বেঙ্গল ওয়ারিয়র্স প্রথম বার ট্রফি জেতার জন্য রমেশের কোচিংয়ে নিলাম থেকেই ঝাঁপাতে তৈরি ছিল। শুধু তাই নয়, বোঝা গেল প্রথম থেকেই ডিফেন্ডারের দিকে নজর ছিল তাঁদের। তবে পাশাপাশি রেইডার কে প্রাপঞ্জনকেও দলে নিয়েছে ওয়ারিয়র্স। ৫৫.৫ লক্ষ টাকায়।
দেখার, দ্বিতীয় দিন আর কোনও চমক দেয় কিনা ওয়ারিয়র্স।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy